সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় স্টোন ক্রাশিং মিলের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই প্রধানত এসব স্টোন ক্রাশিং মিলগুলো গড়ে উঠেছে। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া স্টোন ক্রাশিং মিল করা যাবে না। যেসব মিলের ছাড়পত্র নেই, সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা দেড় হাজার স্টোন ক্রাশিং মিলে পাথর সরবরাহ করে থাকেন। সাধারণত সরকারী জমি দখল করেই স্টোন ক্রাশিং মিলগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২০০ একর সরকারী জমি দখল করে গড়ে ওঠা ৫০০ স্টোন ক্রাশিং মিল গত দুই যুগ ধরে চালু রয়েছে। এই ২০০ একর জমির মধ্যে ১০০ একর জমি বনবিভাগের, ৯৬ একর জমি খাস এবং ৪ একর জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। বনবিভাগ তার দখল হয়ে যাওয়া ১০০ একর জমি উদ্ধার, কর্মচারীদের নাজেহাল ইত্যাদির অভিযোগে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ টি মামলা করেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে অন্তত ৯০ টি অবৈধ স্টোন ক্রাশিং মিল গড়ে উঠেছে বলে ওই বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে। দেড় হাজার স্টোন ক্রাশিং মিলের মধ্যে অবৈধ স্টোন ক্রাশিং মিলের সংখ্যা কত সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পরিবেশ দফতর দিতে পারেনি।
বৈধাবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্টোন ক্রাশিং মিল পরিবেশ দূষণের একটা বড় কারণে পরিণত হয়েছে। ধুলিবালি ও শব্দ দূষণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গোয়াইনঘাটের বেল্লাপুঞ্জি সরকরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি গড়ে তোলা ২০ টি স্টোন ক্রাশিং মিল শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। জৈন্তাপুরের রাংপানি ক্যাপ্টেইন রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে তোলা ৫টি স্টোন ক্রাশিং মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হলেও পরিবেশ দফতর আজ অবধি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্লেখ করা যেতে পারে, সিলেটের কথিত উপজেলাগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত পছন্দের জায়গা। বিশেষ করে তামাবিল-জাফলংয়ে সারা বছর ধরেই পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। ওই এলাকায় পর্যটনকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিশেষ চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। জাফলংয়ে একটি পর্যটন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা আছে। এরপরও ওই এলাকায় স্টোন ক্রাশিং মিলের অবস্থিতি ও দৌরাত্ম্য কিভাবে চলতে পারছে, সেটা একটি বড় প্রশ্ন।
সরকারী জমি বিশেষ করে বনবিভাগের জমি দখল করে স্টোন ক্রাশিং মিল গড়ে তোলা এবং বছরের পর বছর ধরে সেগুলো চালু থাকা কিভাবে সম্ভব, আমাদের বুঝে আসে না। বনবিভাগের তরফে এত মামলা দায়েরের পরও কিছু না হওয়া বিস্ময়কর। বনবিভাগের জমিতে গড়ে তোলা স্টোন ক্রাশিং মিলগুলো বনের গাছপালা ও পরিবেশ বিনষ্ট করছে। কথিত মামলাগুলোর নিষ্পত্তি এবং ওই জায়গা পুনরুদ্ধারের কাজটি দ্রুত করা দরকার। একই সঙ্গে খাসজমি এবং সড়ক ও জনপথের জমি উদ্ধারেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। অবৈধ স্টোন ক্রাসিং মিলগুলোর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ দফতর ও প্রশাসন সক্রিয় হলেই এ কাজটি দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব। কথিত এলাকাগুলোর প্রাকৃতিক ও পরিবেশিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। সরকার স্টোন ক্রাশিংয়ের জন্য পরিবেশ ও জনগণের ক্ষতি হয় না এমন জায়গায় স্টোন ক্রাশিং জোন গড়ে তুলতে পারে। এ রকম একটি সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া আছে। সেটা কার্যকর করতে হবে। এ মুহূর্তে সর্বাগ্রে অবৈধ স্টোন ক্রাশিং মিলগুলো বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এসব মিলের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ যাতে আর কোথাও অবৈধভাবে স্টোন ক্রাশিং মিল গড়ে তুলতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দফতর ও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সক্রিয় হলে সকল অবৈধ কারবার বন্ধ ও পরিবেশ সুরক্ষা মোটেই কঠিন হওয়ার কথা নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন