বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেম উলামাদের মুক্তি এবং চার দফা দাবিতে ঢাকায় জাতীয় সমাবেশের ঢাক দিয়েছে খেলাফত মজলিস। আগামী প্রজন্মকে ধর্মহীন এবং নাস্তিক বানানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে জাতীয় পাঠ্যক্রমে ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচন করে পৌত্তলিকতার শিক্ষা ও সাংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত আপত্তিকর ও দুঃখজনক। শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা না থাকার কারণে সামাজিক নিরাপত্তা ও পারিবারিক বন্ধন প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। তাই সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আমীর আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আমীর আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী বলেছেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেম উলামাদের মুক্তি, জাতীয় পাঠ্যক্রমে ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচনের প্রতিবাদ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, শিক্ষার সকল স্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণের দাবিতে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলিস্তান পার্কে জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হককে ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল অন্যায়ভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে। তার আগে পরে অনেক আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্রদেরকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে অনেকেই মুক্তি পেলেও মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ কয়েকজন নেতা দীর্ঘ ২১ মাস যাবত কারাগারে বন্দি রয়েছেন। মাওলানা মামুনুল হক শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন তিনি হাদিসের শিক্ষকতাসহ দ্বীনের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার গ্রেফতারে অসংখ্য ছাত্র হাদিসের দরস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পরিবারও তার অনুপুস্থিতির কারণে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। গ্রেফতারের পর তার নামে অন্যায়ভাবে ২৮টি নতুন মামলা দেয়া হয়েছে। আগের মামলাসহ মোট ৪১ টি মামলা তাকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যার প্রত্যেকটিই ভিত্তিহীন ও সাজানো। তাঁর মামলা সম্পূর্ণ জামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও জামিন পাওয়া যাচ্ছে না। একজন দাগী আসামির মতো হাতে হ্যান্ডকাপ, মাথায় হেলমেট ও গায়ে বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে আনা-নেওয়া করা হয়। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এতে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। এটা সম্পূর্ণ জুলুম ও অন্যায়। এটা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। সরকারের এহেন আচরণে আমরা ক্ষুদ্ধ ও লজ্জিত।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে কারাবন্দি উলামায়ে কেরামের মুক্তির দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীও তাদেরকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আশ^াস দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এখনও মাওলানা মামুনুল হকসহ শীর্ষ আলেমদের মুক্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি উলামায়ে কেরামের মুক্তির দাবিতে মাত্র ১৫ দিনে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে, যাতে লক্ষাধিক মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত স্বাক্ষর করেছে। এটি সাধারণ মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ। তাই আমরা মনে করি তাকে আটকিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে সরকারের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী বলেন, আগামী প্রজন্মকে ধর্মহীন এবং নাস্তিক বানানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে জাতীয় পাঠ্যক্রমে ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচন করে পৌত্তলিকতার শিক্ষা ও সাংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত আপত্তিকর ও দুঃখজনক। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরম সঙ্কোটাপন্ন। মানুষ চাল, ডাল, তেল, মাছ-গোস্ত, সবজিসহ নিত্য পণ্য অতিমূল্যের কারণে ক্রয় করতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যা অত্যান্ত বেদনাদায়ক ও নিন্দনীয়। তিনি আ্রও বলেন, শিক্ষার্থীদের চরিত্রবান ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তাদেরকে ইসলামী শিক্ষা তথা ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
অনতিবিলম্বে আমাদের দাবিগুলোর ব্যাপারে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশেষভাবে আমাদের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সমাবেশ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।
তিনি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক ও তৌহিদী জনতাকে সদলবলে জাতীয় সমাবেশে অংশ গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি শরাফত হোসাইন, কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা শরীফ হোসাইন, মাওলানা জহিরুল ইসলাম, মাওলানা রুহুল আমীন, ঢাকা মহানগীরর সহ-সভাপতি মাওলানা ছানা উল্লাহ আমিনী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মুমিন ও মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন