বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন ও আইনের শাসন

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র বাংলাদেশই রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ বিনির্মাণ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে জাতি আজ এক চরম সংকটের মুখোমুখি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিকÑঅর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্ন এখন জনগণের হাতছাড়া হতে বসেছে। বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে আইনের শাসনকে এমন এক অবস্থায় দাঁড় করানো হয়েছে, দেশের মানুষ এসব মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলতেও ভয় পায়। অবকাঠামো উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সব নাগরিকের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিকে একটি ভয়ের সংস্কৃতি দিয়ে ঢেকে রাখার রাষ্ট্রীয় তৎপরতা প্রবল হয়ে উঠেছে। একটি দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি চলছে। সেই সাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীর মত ব্যবহার করে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। অসংখ্য গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনার পাশাপাশি বিরোধীদলের লাখ লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দিয়ে গ্রেফতার, হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, রাজনীতি-কূটনীতিতে আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছে। ঘটনাগুলো শুধু আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এলিটফোর্স র‌্যাবের সাবেক ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যেই সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ তদন্তের দাবী এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল নিশ্চিত করার প্রশ্নে সরকারের কাছ থেকে এখনো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বা প্রত্যাশিত সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলোর আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন ও অংশগ্রহণের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তার সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন অংশীদারদের সমর্থন ও ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টির একটি ধারাবাহিক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন নাগরিকরা পছন্দ না করলেও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হলে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনাগুলোতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কখনো কখনো নাগরিক সমাজ মেনে নিতে বাধ্য হয়। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সমাজে পরাশক্তিগুলো এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের সামাজিকÑঅর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তেমনই একটি সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের সরকার ও রাজনৈতিক সব পক্ষ দেশ ও জনগণের প্রত্যাশিত রাজনৈতিক সমঝোতা গ্রহণ করতে না পারলে দেশের অভ্যন্তরে পরস্পর বৈরী রাজনৈতিক শক্তির সমর্থনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বৈরী পরাশক্তিগুলোর বিপজ্জনক ট্রামকার্ডে পরিনত হতে পারে বাংলাদেশ। তার আলামত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আগামী নির্বাচন প্রশ্নে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এক ধরণের কূটনৈতিক ডিবেটে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপে সেই ডিবেটে রাশিয়াকেও প্রকাশ্যে সুর মেলাতে দেখা গেছে। আমাদের দেশে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের প্রেক্ষাপট তৈরী ও পরবর্তী ভোটের রাজনীতির বাস্তবতায় পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের সাথে এক ধরণের আপসমূলক অবস্থানে দেখা গেলেও একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বাস্তবতাকে তারা সমর্থন করতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র ভারতের প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণেই মূলত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নস্যাৎ হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ভারতের প্রত্যক্ষ প্রভাব এখানে চীন বা রাশিয়ার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশকে নিয়ে পরস্পরবিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে এক ধরণের সমঝোতা বা সহাবস্থানের উদাহরণ সৃষ্টি হলেও জাতির প্রয়োজনে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদল এখনো বর্তমান সংবিধানের আওতায় দলীয় সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচনের পক্ষে জোরালো ভাষায় কথা বলছে। পক্ষান্তরে, পশ্চিমারা ২০১৩ সাল থেকেই একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু-অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দেশের সাধারণ মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবীর সাথে সমার্থক বলা যায়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগে র‌্যাব-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক ফল দিয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। গত বছর এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনা অভাবনীয় হারে কমে এসেছে। তবে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরণ কিংবা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে এখনো কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার কিংবা এর পরিধি বিস্তৃত করার আশঙ্কা নিরসনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের মূল এজেন্ডা এখন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের রূপরেখার উপর নিবদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘন ঘন বিবৃতি ও কড়া প্রতিক্রিয়া এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক বাংলাদেশ সফর থেকেই বুঝা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক নজরদারির মধ্যে রয়েছে। বিশেষত প্রতিবেশি ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন নিয়ে একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, বিরোধীদল দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নির্বাসনের চলমান প্রক্রিয়াকে মার্কিনীরা সম্ভবত নিজেদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।

ঢাকায় একটি মানবাধিকার সংগঠনের আহ্বানে গুম হওয়া সাজেদুর রহমানের বাসায় দেখা করতে গেলে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকার সমর্থক আরেকটি সংগঠনের কর্মীদের দ্বারা নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হন গত বছরের শেষ দিকে। এ থেকে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনমন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ কনসার্ন অনুমান করা যায়। পিটার হাসের নিরাপত্তার প্রশ্নে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিক্রিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ এডভাইজার রিয়ার এডমিরাল এইলিন লাওবেখারের চার দিনের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে বিষয়টা স্পষ্ট হয়েছে। এর আগে পিটার হাসের শাহীনবাগ যাওয়া এবং অপ্রীতিকর ঘটনার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া এবং ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের আগে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আকস্মিক এক ঘন্টার যাত্রা বিরতিতে বিমান বন্দরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠকের ঘটনা থেকে বাংলাদেশ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর রশি টানাটানির ভূমিকা অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। এডমিরাল লাওবেখারের সফরকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে ডোনাল্ড লুর সফরে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়কে অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে নির্ধারণ করা হলেও মি: লু এ বিষয়ে কোনো সুখবর দিতে পারেননি। উপরন্তু তিনি নির্বাচন, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও অবস্থানের কথা পুর্নব্যক্ত করে বার্তা রেখে গেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন-সুশাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মার্কিন প্রশাসন। একটি দ্বিপাক্ষিক সফরে পররাষ্ট্র বিষয়ক যৌথ বিবৃতিতে এ ধরণের ভাষা আধিপত্যকেই জাহির করে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় ও সরকারী সংস্থাগুলোর অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত জনবিরোধী অবস্থানের কারণেই বিদেশিরা এমন প্রভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। দেশের জনগণের কাছে বিষয়গুলো মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিদেশিদের এমন ভূমিকাকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইতিবাচকভাবেই দেখছে। যদিও যেকোনো আত্মমর্যাদাশীল জাতির জন্য এটা এক দুভার্গ্যজনক বাস্তবতা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যখন দেশের মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তাকে গিলে খায়, তখন বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রত্যাশিত হয়ে দেখা দিতে পারে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক গুরত্বের কারণেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোশাক রফতানি খাত নিয়ে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য, দেড়কোটি মানুষের বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্স এবং কৃষিখাতের বিশাল উৎপাদনশীলতার স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন নাজুক অবস্থায় পড়ার কোনো কারণ ছিলনা। বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলার) দেশ থেকে বছরে লক্ষকোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে দেউলিয়াত্ব দেখা দিয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রাজনীতি এবং অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় অবাধ দুর্নীতি, লুটপাট, প্রভাবশালী মহলের স্বেচ্ছাচারিতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে। দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান না থাকলেও পণ্য আমদানির নামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করে দেয়ার মধ্য দিয়ে ডলারের সংকট তীব্রতর হয়েছে। নিত্যপণ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনার উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা মজুদদারিতে লিপ্ত হয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে। একদিকে করোনাকালীন বাস্তবতা থেকে শুরু হয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে, অন্যদিকে আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া দুর্নীতিম লুটপাট, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করা সম্ভব নয়। গত দেড় দশকে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আইনগত নিরপেক্ষ ক্ষুন্ন করে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়ে দেশকে বর্তমান রাজনৈতিকÑঅর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো যখন ডলারের অভাবে ব্যবসায়ীদের এলসি সহায়তা দিতে পারছে না, তখন কোনো কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপ সিঙ্গাপুরে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করছে। ওয়াসার এমডির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। দুবাইয়ে ৪৫৯ জন বাংলাদেশীর সহশ্রাধিক সম্পত্তি ক্রয়ের খবরকে গুরুত্ব দিয়ে দুদকসহ চারটি সংস্থাকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুবাইয়ে শত শত বাংলাদেশীর বিলিয়ন ডলারের সম্পদ কেনার খবর গত ১১ জানুয়ারি দেশের একটি দৈনিকে প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টের একজন আইনজীবী স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রিট পিটিশন দাখিল করেন। রিটে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি ও ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে বিবাদী করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে দেশ থেকে লক্ষকোটি টাকা পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ফোঁকলা ও দেউলিয়া করে দেয়ার এই চরম অবস্থা সৃষ্টি হতো না। সরকারের এক শ্রেণীর আমলা, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, মন্ত্রী, এমপি, সরকারী দলের নেতারাই মূলত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। এসব রাঘব বোয়ালদের দর্নীতি-লুটপাটের অনুসন্ধানের দায়িত্বে দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা সিআইডির দুর্নীতিপরায়ণ, দলবাজ-দলকানা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব, অনিশ্চয়তা, জনদুর্ভোগ ও এবং আধিপত্যবাদী পরাশক্তির হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। সময় থাকতে সরকার এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনই হচ্ছে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের একমাত্র সমাধান।

bari_zamal@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন