ক্ষমতাসীন সরকার গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদের ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে খুন ও সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। অবৈধ সরকারের নির্দেশ মানার কারণে র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। অর্থাৎ স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুখকর খবর নয়। এটা আর্ন্তজাতিকভাবে লজ্জার। এই অগণতান্ত্রিক সরকার বিচারালয়কে ব্যবহার করছে। গায়ের জোরের শাসন চালাচ্ছে। যে কারণে এই সরকার আমাদের দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। আজকে আমাদের দফা একটাই- সেটা হলো এই সরকারের পদত্যাগ।
গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে দেশবরেণ্য আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের জীবদ্দশায়, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বর্তমান সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব ও বাংলাদেশ পিপল্স লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজ। এছাড়া অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্ত্রী ড. ফারহাত হোসেন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ সহ¯্রাধিক আইনজীবী অংশ নেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব সারাজীবন আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তার দীর্ঘ জীবনে তিনি যা করেছেন তা স্বল্প সময়ে বলে শেষ হবে না। তার কাছে কেউ আসলে তিনি সদয় মনোভাবাপন্ন হয়ে কথা বলতেন। সুপরামর্শ দিতেন। বিচার প্রত্যাশীকে তিনি ভালো পরামর্শ দিতেন।
তিনি বলেন, আজকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে বন্দি করা হয়েছে। একইভাবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ফরমায়েশি রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে আইনের শাসন থাকতো তাহলে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে শুধু বিরোধী মতকে স্তদ্ধ করার জন্য লক্ষাধিক মামলায় ৩৬ লাখ আসামি হয়েছে। দেশে যে আইনের নেই তার প্রমান খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা। তাহলে এ দেশে যে আইনের শাসন নেই এটা নতুনভাবে বলার কিছু নেই।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তিনি বলেন, আমাদের এখন দেশ আছে। জনগণ আছে। কিন্তু গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। দেশের সার্বভৌমত্ব নেই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আদালতে আদেশ দেওয়ার ১৮ মাস পর তত্ত¡াবধায়ক সরকার মামলার রায় পাল্টানো আমাদের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটের অধিকার ধ্বংস করেছে। এ বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী লিখেছেন, এটা একটা ক্রিমিনাল অ্যাক্ট। এরপরও সেই অর্থে আইন জগতে কোনো ঝড় দেখিনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে যেভাবে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়, এরপর কি বিচারকরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন। এরপরও বিচার অঙ্গনে কোনো ঝড় উঠতে দেখিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রুল অফ ল’ নয়, রুল বাই ল’ তে চলছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহামনকে সাজাপ্রাপ্ত বলার মধ্যদিয়ে এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে আইন অঙ্গনে একটি বড় ধরণের আন্দোলন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ১০ দফা বা ১২ দফা নয়, এখন দরকার এক দফা। একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করতে হবে। এজন্য জনগণের সাথে আইনজীবীদের এক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে হবে। সরকারকে বলতে হবে, আপনারা নির্বাচিত নন, আপনারা বিদায় নেন। তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্র চর্চার দারুণ অভাব আছে। আইনজীবীদের চিন্তা করতে হবে, গণতন্ত্রের জন্য কি কি প্রয়োজন। পুলিশ দিয়ে রাজনীতি করা, এটা পাকিস্তানেও ছিল না। রাজনীতির প্রথম অর্থ হল নি:স্বার্থ হতে হবে। আপনি রাজনীতি করে বড়লোক হবেন, কোটিপতি হবেন। এটা রাজনীতি নয়। চরিত্রবান হতে হবে। জনগণের ভালোবাসা পেতে হবে এবং জনগণকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে আন্দোলন করে কিছু পরিবর্তন আসবে না। তিনি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার মামা ছিলেন। তার সাফল্যে আমি আশ্চার্য হয়েছি। তবে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন