মধ্যেপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষ প্রধানত তিনটি। ইসরাইল, আরব বিশ্ব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যেপ্রাচ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ের সাথে এই তিন পক্ষের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যেপ্রাচ্য শান্তিপ্রতিষ্ঠার পথে এই ত্রিপক্ষীয় মতপার্থক্য এবং বিরোধই মূলত দায়ী। এক্ষেত্রে আরববিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হলেও ইসরাইলের বর্বরোচিত ও অমানবিক অন্যায় আচরণকে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার একমাত্র অন্তরায় বলে বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক মনে করেন। তার কারণ হচ্ছে, এ পর্যন্ত আন্তর্জতিক পর্যায়ে এবং জাতিসংঘ কর্তৃক যতগুলো প্রয়াস ও প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে তার প্রতিটিকেই ইসরাইল অমান্য করেছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে জাতিসংঘের প্রস্তাব নম্বর ১৮১ সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়, যাতে বলা হয়, ব্রিটিশ ম্যান্ডেটকৃত ২০৭৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্যালেস্টাইনের সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে, ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সমর্থনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও আজ অব্দি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হয়নি। বরং ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইহুদিদের গণহত্যার মুখে সাড়ে ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোতে শরণার্থী হয়। বিতাড়িত সেই হতভাগ্য জনগোষ্ঠির উত্তরসূরীরা সংখ্যায় আজ ৫০ লক্ষ। ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা দখল করে নেয় ফিলিস্তিনিদের সহায়-সম্পত্তি সবকিছু, যার কিছুই এখনো ফেরত দেয়নি। অথচ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৯৪ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে বিতাড়িতদের মধ্যে যারা ফেরত আসতে চায় তাদের ফিরতে দিতে হবে। আর যারা আসতে চায় না তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তারপর ১৯৬৭ সালের ৫ জুন থেকে ১০ জুন, মাত্র ছয়দিনের যুদ্ধে জর্ডানের দখলে থাকা জেরুজালেমসহ পশ্চিমতীর এবং মিশরের দখলে থাকা গাজা স্ট্রিপ ইসরাইল দখল করে নেয়। এই দুইটি এলাকার আয়তন ৬০২০ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাসে নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব নম্বর ২৪২ পাস হয় এবং তাতে বলা হয়, ইসরাইল অতিসত্বর ছয়দিনের যুদ্ধে যেসব এলাকা দখল করেছে তা ছেড়ে দিতে হবে। বিগত ৫৪ বছরে এই প্রস্তাবের প্রতি সামান্য কর্ণপাত করেনি ইসরাইল। ১৯৭৮ সালে মিশর-ইসরাইলের মধ্যে ক্যাম্পডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের পর জাতিসংঘে পুনরায় প্রস্তাব নাম্বার ৪৪৬ পাস করে। তাতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৬৭ সালের অধিকৃত এলাকা ইসরাইল ছেড়ে দেবে এবং পশ্চিমতীরে ইহুদি পুনর্বাসন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ইসরাইল এসব শর্তের কিছুই মানে না। ১৯৮০ সালে জাতিসংঘ পাশ করে ৪৬৫ নম্বর প্রস্তাব। তাতে জেরুজালেমসহ পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি ভেঙে ফেলতে বলা হলেও ইহুদিরা তা অগ্রাহ্য করে নতুন ইহুদি পুর্নবাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের আয়তন ছিল ৫০০০ বর্গ মাইল কিন্তু ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনের ভূ-খ- দখল করার ফলে ১৯৫৫ সালে ইসরাইলের আয়তন বেড়ে হয় ৮,০০০ বর্গ মাইল। ১৯৬৭ সালে হয় ৩০,০০০ বর্গ মাইল। সারা দুনিয়ার প্রচ- ঘৃণা এবং প্রতিবাদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আজ ৭০ বছর যাবত ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠির উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ, পার্শ্ববর্তী দেশ জর্ডান, সিরিয়া, মিশর ও লেবাননে বোমা হামলা এবং তিউনিসে পিএলও সদর দপ্তরে বোমা হামলা করে মধ্যপ্রাচ্য শান্তির প্রয়াসকে দূরে ঠেলে দিয়ে আরব বিশ্বে একটি অস্থির রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। যতদিন না ইসরাইলি আগ্রাসী মনোভাবের পরিবর্তন হবে ততোদিন পর্যন্ত আরব এলাকায় শান্তি ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
ফিলিস্তিন প্রশ্নে যে দেশ ইসররাইলের উপর সরাসরি প্রভাব খাটাতে পারে তা হলো যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই দেশ কৌশলগত মৈত্রিতে আবদ্ধ। এই দুই দেশের সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু তাদের কৌশলগত আঁতাতের কোনো পরিবর্তন আসে না। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরাইলের স্বার্থ আগে দেখে তারপর অন্যসব। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বব গেটস বলেন, বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে যে মার্কিনবিরোধী মনোভাব, তার পিছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি। ১৯৪৮ সালে সৌদি বাদশাহ প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, ফিলিস্তিন প্রশ্নে তিনি যেন নীরব থাকেন বা আরবদের সমর্থন করেন। প্রতিত্তোরে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্ত কোন আরব লবি নেই, যাদের জোরে তিনি পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন।’ বারাক ওবামা ক্ষমতায় এলে অনেকেই মনে করেন, হয়তো মধ্যপ্রাচ্যনীতির পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবে আগের যেকোন মার্কিন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের নীতির কোনো প্রভেদ ছিল না। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলী হামলায় বহু বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়, এ মৃত্যু কাম্য নয় বলে ওবামা মন্তব্য করেন। একই সাথে তিনি বলেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরাইলকে ৪ বিলিয়ন ডলার সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় স্বার্থ শুধু কৌশলগত কারণেই নয়, অর্থনীতির কারণেও জড়িত। মধ্যেপ্রাচ্যের তেল সম্পদের সাথে জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক বিরাট অংশ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী কোনো শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে মাথা তুলুক অথবা অন্য কোনো শক্তির নিয়ন্ত্রণে এ এলাকা থাক কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানির অবাধ প্রবাহ কোনোভাবেই বিঘিœত হোক, যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে তা চায় না তাই নয়, এ জন্য সম্মুখ সমরে লিপ্ত হওয়ার জন্যও যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত। এ উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২২৫০০ সৈন্য সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে মোতায়েন রেখেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আস্কারায় ইসরাইল লাভ করেছে ব্যাপক সামরিক শক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতিকূল যে কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইঙ্গিত পাওয়া মাত্রই ইসরাইল ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে ইসরাইল কোনো আইন বা নৈতিকতার ধার ধারে না। এ জন্য ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে চিহ্নিত হয়েছে যুক্তরাষ্টের ‘নষ্ট বালক’ হিসেবে। আমেরিকার নগরে-জনপদে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, সংস্কৃতিতে-ঐতিহ্যে, সামরিক-আধাসামরিক বাহিনীগুলোতে, সরকারি চাকুরিতে ও সরকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে, এককথায় জনজীবনের সবপ্রক্রিয়ায় শিক্ষিত মেধাবি ও ধনী ইহুদিরা জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক। আর ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদি ব্যাংকাররা। পাশ্চাত্য অর্থনৈতিক শক্তি, পাশ্চাত্য সামরিক শক্তিগুলোর কাছে মধ্যপ্রাচ্য যেমন তার তৈল সম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ঐ তৈল সম্পদের মালিক মুসলমান অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রগুলোকে বিব্রত অবস্থায় রাখার জন্য, ব্যস্ত রাখার জন্য, চাপে রাখার জন্য ইসরাইল পাশ্চাত্য তথা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুতারাং যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো কখনো ইসরাইলের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না, এটাই নিরেট বাস্তবতা।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্য যে বাধাটিকে অস্বীকার করা যায় না, সেটি হলো আরবদের মধ্যে অনৈক্য, মতপার্থক্য এবং অবিশ্বাস। সিরিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে প্রচুর মিল থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে বিস্তর রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। আরব নেতাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে প্রকট ভিন্নতা থাকায় মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানেও দেখা দিচ্ছে মতানৈক্য। এককালে মিশরের জামাল আবদেল নাসের, সৌদি বাদশাহ ফাহাদ, সিরিয়ার হাফিজ আল আসাদ, লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেন আরবের নেতৃত্বে নিজেদের ভাবমর্যাদা গড়ে তোলার যে প্রয়াস চালিয়েছেন আরব ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের শোচনীয় পরাজয়ের ফলে তা অনেকটা ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। আরব নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এখনো আছে। ফলে আরবরা ইসরাইলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মোকাবেলায় যেমন দাঁড়াতে পারেনি, পারেনি ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনদের জন্য একটি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার নায্য অধিকার কায়েম করতে। ইসরাইলে বড়জোর ৯০ লক্ষ মানুষের বাস। তারপরও তৈল সম্পদে সমৃদ্ধ ৪২ কোটি ৭০ লক্ষ আরব ইসরাইলের কাছে নতজানু হয়ে আছে। তাদের সামনে কেন আরব বাদশাহ-শেখরা মাথা নুয়ে আছে? এর জন্য যে কেউ পশ্চিমাদের বিশেষ করে আমেরিকাকে দোষারোপ করতে পারেন। তারা ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পশ্চিমাদেশগুলো ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও জার্মানি ইসরাইলের কাছে ৯৬০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। এই ২০ বছরে সেই তুলনায় আরবদেশগুলোর কাছে তারা অস্ত্র বিক্রি করেছে আরো অনেক বেশি। এ সময় তারা সৌদি আরবকে ২৯৩০ কোটি ডলার, আরব আমিরাতকে ২০১০০ কোটি ডলার মিশরকে ১৭৫০ কোটি ডলার, ইরাকের কাছে ৯১০ কোটি ডলার এবং কাতারে ৬০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
বাস্তবতা হলো, ইসরাইল যদি কখনো আবার আরব ভূমিতে আক্রমণ করে, তাহলে এই অস্ত্র আরবদের রক্ষায় খুব একটা কাজে আসবে না। ফিলিস্তিনির আজকের এই দুর্গতির জন্য কাউকে দোষারোপ করতে যদি হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি দোষ দিতে হবে আরব দেশগুলোকে। কারণ, আরবরা ভয়ানকভাবে বিভক্ত। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক রিচার্ড ফালক গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন, মিশর ও সৌদি আরব পিছন থেকে কাজ শেষ করার জন্য ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে গেছে। শুধু হামাসের রকেট ও সুড়ঙ্গ ধ্বংস নয়, সাপের মাথা হামাস, যাতে চিরতরে ধ্বংস হয়, তারা সেই কাজে ইসরাইলকে উৎসাহ দিয়েছে। মিশর সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো গাজায় সবশেষে হামলার জন্য হামাসকেই দায়ী করেছে। অন্যসব আরব দেশের নিরবতা এমন প্রকট হয়ে ওঠে যে নিউইয়র্ক টাইমস এক দীর্ঘ সংবাদ বিশ্লেষণে এই উপসংহারে পৌঁছায় যে, আরব দেশগুলোর জন্য ইসরাইলের চেয়ে বড় শত্রু হামাস। মিশরের আল-আহরাম পত্রিকার ভাষ্যকার আজ্জাসামি লিখেছেন, ধন্যবাদ নেতানিয়াহু, আল্লাহ আমাদের আপনার মতো মানুষ দিন, যারা হামাসকে ধ্বংস করবে। আরব রাজা-বাদশাহ, আমির-শেখদের নির্লজ্জ চাটুকারিতার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে আজ অশান্তির দাবানলে দাউদাউ করে জ্বলছে। উপর্যুক্ত কারণগুলো ছাড়াও হামাস-ফাতাহ দ্বন্দ, ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাব ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি এবং আরবলীগের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাও সমানভাবে দায়ী।
লেখক: প্রভাষক, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন