বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাঠ্যবইয়ে নকলবাজি ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও চৌর্যবৃত্তি নিয়ে দেশে ব্যাপক হইচই চলছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাইটের ইংরেজি কন্টেন্টকে গুগল ট্রান্সলেটারের মাধ্যমে হুবহু অনুবাদ করে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এই গুরুতর অনৈতিক কাজ যারা সম্পাদনা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান। তারা দু’জন ইতোমধ্যে দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যসূচি থেকে ইসলামিক মূল্যবোধসম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি আমাদের শিক্ষার্থীদের মন-মগজে ঢুকিয়ে দেয়ার অপতৎপরতা কোনো নতুন বিষয় নয়। প্রায় এক দশক আগে প্রথমশ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ের বইয়ে যথেচ্ছ পরিবর্তনগুলো তুলে ধরলে দেখা যায়, সেখানে ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পৃক্ত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তদস্থলে হিন্দুধর্মীয় তথা হিন্দুত্ববাদী শিক্ষার পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছিল। দেশের আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদের মুখে ইতোমধ্যে কিছু পরিবর্তন বা রদ করা হলেও বিজ্ঞান শিক্ষার নামে ডারউইনের মতবাদ প্রচার এবং সেখানে নিজস্ব বাস্তবতার চিন্তাধারার বদলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অনলাইনের কন্টেন্টকে হুবুহু গুগল ট্রান্সলেটারের মাধ্যমে অনুবাদ করে নানা ভুলভ্রান্তিসহ প্রকাশ ও পাঠ্যক্রমে সংযুক্তির নতুন উদাহরণ থেকেই বুঝা যায়, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। তারা আমাদের আগামী প্রজন্মকে অর্থব ও হিন্দুত্ববাদের অনুসারী করে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।

জাতিকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমেই তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হয়। পরস্পর বৈরী সংস্কৃতির দ্বন্দ্বে এই ধারণা যথার্থভাবেই কাজ করে থাকে। শতকরা ৯২ শতাংশ মুসলমান জনসংখ্যার বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হেজিমনি চাপিয়ে দেয়ার যে নীলনকশার কথা বলা হয়, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে শুধু ইসলাম বিমুখ করে তোলার প্রয়াস নয়, কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষ ও হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা অনুপ্রবিষ্ট করার সুতীব্র প্রয়াস এখন অনেকটাই উন্মোচিত হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশের মানুষ এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ও প্রতিবাদী। দেশে-বিদেশে ব্যাপক পরিচিত একজন ইউটিউব অ্যাক্টিভিস্ট একটি ভিডিও পোস্টে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলাম ধর্ম, জাতীয় সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয় বিরোধী অবস্থানকে মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতের চোখে বাংলাদেশ দেখার সাথে তুলনা করেছেন। সেখানে মুসলমানের ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে শিশু-কিশোরদের বিচ্যুতির লক্ষ্য হাসিলের পাশাপাশি বিকৃত, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার অনেক দৃষ্টান্ত তৈরি করা হয়েছে। এসব অপতৎপরতা জাতির জন্য এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এটি এমন সময় বাংলাদেশের আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের চেতনায় তোলপাড় তুলেছে, যখন একই সময়ে ভারতের মাদরাসা শিক্ষা থেকে বেশিরভাগ ইসলামিক পাঠ তুলে দিয়ে সেখানে সেক্যুলার ও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে একই সমান্তরাল হিন্দুত্ববাদী ভাবধারায় প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চলছে।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে খামখেয়ালি ও অপরিণামদর্শী অপতৎপরতার কারণে আমাদের শিশুরা বিভ্রান্তিকর ও আত্মবিস্মৃত জাতিসত্তার ধারক হিসেবে বেড়ে উঠছে। দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের নেতৃবৃন্দ শুরু থেকে মাদরাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যসূচিতে ইসলামি শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্রের জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশের মূলধারার উলামা-মাশায়েখ, পীর ও ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী, নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ভুল সংশোধনের দাবি তোলা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক লেখায় যারা চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিয়েছেন, তারা ক্ষমা চাইলেও তাদের অপরাধ ক্ষমা অযোগ্য। পাঠ্য বইয়ে বিকৃতি ও ভুলের মধ্য থেকে শুধুমাত্র ৬ষ্ঠ, সপ্তম ও দশম শ্রেণির কয়েকটি পুস্তকের কিছু অংশের ভুল সংশোধনের উদ্যোগের কথা জানিয়েছে জাতীয় পাঠ্যপুস্কত বোর্ড (এনসিটিবি)। এটা যথেষ্ট হতে পারে না। পাঠ্য পুস্তকগুলোর কোথায় কী ভুল ও বিকৃতি আছে, ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন ও মোদির হিন্দুত্ববাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার অপপ্রয়াস আছে তার গভীর অভিনিকেশে খতিয়ে দেখতে হবে এবং সংশোধন করতে হবে। এর সঙ্গে যারাই সংযুক্ত বা দায়ী হোক, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশ ও জাতি বিরোধী এবং নতুন প্রজন্মবিনাশী অপকর্মে লিপ্তরা রেহাই পেতে পারে না। দেশের ৯২ শতাংশ মানুষের ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঈমান-আকিদা বিরোধী বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া জরুরি। বিশেষত শিক্ষামন্ত্রী এসব অপতৎপরতার দায় এড়াতে পারেন না। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও জাতিসত্তার শেকড়ে ও মননে ইসলাম বিরোধী ও বিকৃত ইতিহাসের উপাদান ঢুকিয়ে দিয়ে আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠন এবং স্মার্ট বাংলাদেশের বিনির্মাণ সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মোঃ বাতেনুর রহমান ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:১৭ এএম says : 0
যাদের আদি পুরুষ বাদর ছিল, তারা তো সেটা প্রচার করবেই ! আমাদের আদি পুরুষ বাবা আদম (আঃ) । তিনি যে মানুষই ছিলেন তার প্রমান স্বংয় আল্লাহ-ই দিয়েছেন। আর এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম (আঃ)-কে আল্লাহ সর্ব বিষয়ের জ্ঞান ও যোগ্যতা দান করেন এবং বিশ্বে আল্লাহর খেলাফত পরিচালনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। সাথে সাথে সকল সৃষ্ট বস্ত্তকে করে দেন মানুষের অনুগত (লোকমান ৩১/২০) ও সবকিছুর উপরে দেন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব (ইসরা ১৭/৭০)। আর সেকারণেই জিন-ফিরিশতা সবাইকে মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আদমকে সিজদা করার আদেশ দেন। সবাই সে নির্দেশ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ইবলীস অহংকার বশে সে নির্দেশ অমান্য করায় চিরকালের মত অভিশপ্ত হয়ে যায় (বাক্বারাহ ২/৩৪)।
Total Reply(1)
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:৫৬ পিএম says : 0
Khosru ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:১৯ এএম says : 0
This is just the beginning of an intellectual campaign with the aim to destroy your culture & faith system. I believe I am right in saying there are other so called intellectuals who worked behind the screen to sow the seeds which one day they hope will flourish to destroy everything the people of this land believe in. This is bad enough for an independent country which is having to face a psychosocial campaign led by people who aren’t visible. One who loves this country & its people must ask why & how this campaign has been allowed to to come up-to to this stage, more worryingly in school books. This appears as if it’s a nation of fools where people aren’t motivated to look after their own wealth. This invisible campaign is indicative of ongoing infiltration which one must assume has impacted other parts of the body that represent your body & soul. You can not & will not be able to stop it without making change in the hierarchy in the educational system of your country. This is a matter grave concern which ought to be rectified if you love your country & nation. Good luck . To say the least God doesn’t help rotten people who take no effort to help themselves.
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:১৯ এএম says : 0
আলেমদের কোমরা রশি হাতে পায়ে ডান্ডাবেরী বাংলাদেশের ৯৫% মুসলমান হলেও সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানের ঈমান আকিদা মজবুত নয়। বাংলাদেশের মুসলমানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ পাঠ‍্য পুস্তকের নমুনা। আলেমরা বিভিন্ন দলে বিবক্ত একজনের সাজাও হলো। হাজার হাজার আলেমদের বিরুদ্ধে মামলা। কাদের খুশী করার জন্যে হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ কি বুঝতে পারছেনা। মহা কৌশলী আল্লাহ্ আমাদের দেখছেন। জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে যাহার দয়া ও করুনার উপর আমরা বেচে আছি। প্রতিটি শ্বাস প্রস্বাসের নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহ্। ইহুদিকাফের মুনাফেক নাস্তিক বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু মুসলমান বিশ্বাস করেন। হেফাজত জামায়াত চরমোনাই সুন্নিরা বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবেনা।পৃথিবীর এই কঠিন সময় পদে পদেই ঈমানের পরিক্ষা। শয়তানের কমন্ত্রনা মাঝে পড়ে গেছেন মুসলমান। আল্লাহ্ যাকে হেফাজতের মাঝে রাখবেন তিনিই বাচবেন। আল্লাহ্ আপনি আমাদের হেফাজত করুন।
Total Reply(0)
Dr. Mohammad ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৯ এএম says : 0
বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম, সস্কৃতি ও মূল্যবোধ উৎখাতের লক্ষে ইসলাম বিদ্ধেষীরা এসব পুস্তক রচনা করেছে। সরকার একদিকে ইসলাম ধর্ম বিকাশের জন্য মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে, অন্যদিকে ইসলাম বিনাশের নায়কদের পাঠ-পুস্তক রচনার দায়িত্ব দিয়েছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ সৌদি আরব, ওমান, তুরস্ক, জর্ডান , মরোক্ক, আলজেরিয়া ও পাকিস্তানে নিষিদ্ধ। এমনটি বিশ্বের ৭৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা ও বিজ্ঞানীরা ডারউইন তত্ত্বের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত নিউ সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনে ডারউইন তত্ত্বকে মিথ্যা বলেছে। এ দেশের ইসলাম বিদ্বেষী কুপমন্ডকেরা কি এসব জানে না ? ইসলাম কোপানিতে অভিজ্ঞ এসব লেখকরা মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াবে, মুসলিম ইতিহাস বিকৃত করবে, হিন্দুত্ব কায়েম করে পৌত্তলিকতা প্রতিষ্ঠা করবে, পাশ্চাত্যের বজ্য-সস্কৃতি এ দেশে চালু করবে, সারমেয়দের আচরণ রপ্ত করবে আর পদ-পদবি দখল করে রাম-রাজত্ব কায়েম করবে এ জন্যে এদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঘৃণাভরে এসব জঞ্জাল ভাগাড়ে নিক্ষেপ করতে হবে এবং জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মত ও রাসূলের সুন্নাহ অনুসারে জীবন শাসন করার অংগীকার করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে এসব যেন না পৌঁছায় তার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
Total Reply(0)
Jaker ali ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৯ এএম says : 0
এটা হওয়ারই ছিল, শিক্ষাখাত অনেক আগেই সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন