বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত ও আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে এলাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে। শুন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরে সশস্ত্র গ্রুপ কর্তৃক আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে দু পক্ষের মাঝে থেমে থেমে গোলাগুলি চলে। বুধবারের গোলাগুলিতে নিহত বালুখালী ক্যাম্পের হামিদ উল্লাহ ও আহত টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্প ২৬ এর মুহিব উল্লাহ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এর সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য। জিরো লাইনে রোহিঙ্গা শিবিরের ৮০ শতাংশ ঘর পুড়ে যাওয়ায় নারী শিশুসহ ৩০জনের মতো রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের সেখান থেকে তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন।
ঐ ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর মধ্যে অনেকের বসতঘর পুড়ে গেছে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই অন্যত্র আশ্রয়ের সন্ধানে চলে গেছে।
এসময় শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের কিশোরী রহিমা জানায়, থাকতে না পেরে জিরো লাইনে থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছি। আমাদের সবার ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে, যে যেভাবে পারে সবাই এদিক-ওদিক চলে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তে বসবাসরত অনেকে গৃহপালিত পশু গরু-ছাগলসহ অন্যত্রে সরে যাচ্ছে । তুমব্রুতে শূন্যরেখায় স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০১৭ সালের পর থেকে ৪ হাজার ২৮০ রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছে।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগুন লাগায় নারী, শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেয়, তুমব্রু স্কুল ও আশেপাশে আশ্রয় নিয়েছে। এসব জায়গায় নিরাপত্তা বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে।
আরো জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু-টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিজিপি’র সাথে বিদ্রোহী আরকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) র মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফের সীমান্ত এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর গত বুধবার থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপের সংঘাতে ফের সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।
এ ছাড়া গত ১৪ নভেম্বর তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে র্যাব এবং ডিজিএফআই এর মাদক বিরোধী যৌথ অভিযানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, এসময় ডিজিএফআই কর্মকর্তা রেজোয়ান রুশদি ও রোহিঙ্গা নারী সাজেদা বেগম নিহত হয় এবং র্যাব সদস্যে সোহেল বড়ুয়া গুলিবিদ্ধ হয়। আর এই ঘটনায় গত ২৬ নভেম্বর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ২০ জনের নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ কে আসামি করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা হয়।
সীমান্ত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, আরসা ও আরএসও’র মধ্যে গত বুধবার সংঘাত হয়েছিল, সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সতর্ক অবস্থানে আছে, আমরা পরিস্থিতি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়নের মুখে ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহন করে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সে সময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ঘুমধুমের কোনারপাড়ার শূন্যরেখায় বসতি শুরু করে। এর বাইরে তমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা আশ্রয় শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২৮০ রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন