শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ভারতীয় ভাবধারায় গড়ে তোলার অপচেষ্টা হচ্ছে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশে দীর্ঘদিন ধরে অসাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে ইসলামকে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে একটি শ্রেণী ইসলামের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে সচেতনভাবে অবজ্ঞা, উপেক্ষা করে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ইসলাম বা ধর্মহীনতার দিকে ঠেলে দেয়ার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, এ শ্রেণীটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে পাঠ্য পুস্তকে ইসলামকে যেমন হেয় করছে, তেমনি উপমহাদেশে মুসলমানদের গৌরবজ্জ্বোল, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশ গড়ায় অসামান্য ভূমিকা উপেক্ষা ও আড়াল করে উপস্থাপন করেছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠ্য বইয়ের কয়েকটি অধ্যায় পড়লেই তা বোঝা যায়। এসব অধ্যায়ে হিন্দু রাজা এবং তাদের শাসনামলকে এমনভাবে গৌরবান্বিত করা হয়েছে যে, উপমহাদেশের ইতিহাস বলতে যেন তাদের ইতিহাসই বোঝায়। অন্যদিকে, মুসলমান স¤্রাট, সুলতান, বাদশা এবং ব্রিটিশবিরোধী মুসলমান বীরদের আন্দোলন ও আত্মত্যাগের বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছে। ফরায়জী আন্দোলন, তিতুমীর, টিপু সুলতানের মতো ব্রিটিশদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জীবনবাজী রাখা সংগ্রামের কথা বাদ দেয়া হয়েছে। এসব অধ্যায় পড়লে মনে হবে, উপমহাদেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দুরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে। মুসলমান রাজা-বাদশারা কেবল উপমহাদেশ দখল ও আক্রমণ করেছে। এটাও প্রতীয়মান হবে, বর্তমান বিজেপি সরকার শত শত বছর ধরে চলা মুসলমান শাসন এবং রাজা-বাদশাহদের চরিত্রে যেভাবে কলঙ্ক লেপন করে চলেছে, তারই প্রতিরূপ যেন আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি এবং প্রকৃত তথ্য আড়াল করে বা তুলে না ধরে কোমলমতি শিশুদের মনে একধরনের ভ্রান্ত ধারণার মধ্য দিয়ে গড়ে তোলার জন্যই এসব অধ্যায় যে সংযোজন করা হয়েছে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। অর্থাৎ বইয়ের রচয়িতারা যেন নরেন্দ্র মোদী যেভাবে ভারতকে দেখতে চায়, সেই দৃষ্টি দিয়ে বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চায়। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এরূপ ইতিহাস বিকৃতি এবং মুসলমান বিদ্বেষী ইতিহাস শিশুদের মনে গেঁথে গেলে বা তাদেরকে মুখস্ত করানো হলে, তা পরিবর্তন করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ, তাদের মধ্যে এ বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, উপমহাদেশে মুসলমানদের ভূমিকা নেই বললেই চলে এবং হিন্দুরাই মূল ভূমিকা পালন করেছে। এসব বিকৃত ইতিহাস তাদের মুখস্ত করেই পরীক্ষা দিতে হবে। বলা যায়, উপমহাদেশে মুসলমানদের যে গৌরবের ইতিহাস রয়েছে, তা নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে না জানানোর চক্রান্ত হিসেবে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বিভিন্ন অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে।

দুই.
বিজেপি সরকার যে ভারতকে পুরোপুরি একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশন নিয়ে নেমেছে, এটা সকলেরই জানা। এজন্য দেশটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ ও বিতাড়নের জন্য আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে নানাভাবে নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা করে চলেছে। মুসলমানদের প্রতি পরিকল্পিতভাবে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, ভারতবর্ষে মুসলমানদের শাসনামল সম্পর্কে কুৎসা রটানো থেকে শুরু করে সে সময়ের ঐতিহাসিক স্থাপনা, মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম পরিবর্তন ও ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মহীশূরের বীর টিপু সুলতানকে ‘মৌলবাদী ও নির্দয় শাসক’ হিসেবে চিত্রিত করে ‘টিপু নিজা কানাসুগালু’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ টিপু সুলতানকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক বলা হয়। এখনও মুসলমান, শিখ এবং উদারপন্থী হিন্দুরা টিপু সুলতানের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আইনের শাসনকে স্মরণ করে তার জন্মদিন পালন করে। আশি দশকে তার জীবনকাহিনী নিয়ে ভারতে যে দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়, তাতে তার অসাধারণ শাসন ব্যবস্থা এবং আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিক বাংলায় ডাবিং করে সেসময় বিটিভিতে প্রচার করা হলে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ঐ ধারাবাহিকের মাধ্যমে মানুষ টিপু সুলতানের বীরত্ব, ন্যায়ের শাসন এবং স্বাধীনতা রক্ষায় আত্মত্যাগের কথা জানতে পারে। সেই টিপু সুলতানের ইতিহাস বিকৃত করে বিজেপি সরকারের মদদে এখন গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতবর্ষে মুসলমান শাসক ও বীরদের সুশাসন, আইনের শাসন এবং স্বাধীনভাবে যে যার ধর্মপালনের নীতিকে মোদী সরকার এখন কলঙ্কিত করে অত্যাচারি ও নিপীড়ক হিসেবে তুলে ধরছে। মোদী সরকারের এ নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশটির প্রশাসনযন্ত্রও সহায়তা করে যাচ্ছে। ফলে ভারতের মুসলমানরা এখন স্টেটলেস হওয়ার শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ভারতের কোথাও না কোথাও মুসলমান নির্যাতন ও নীপিড়নের ঘটনা ঘটছে। ভারতে মুসলমানদের শাসনামল এবং সমৃদ্ধি এখন মোদি সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। বলা বাহুল্য, ভারতকে পুরোপুরি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভারতবর্ষে মুসলমানদের প্রায় হাজার বছরের শাসনামল তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে, মোদী সরকার মুসলমান শাসকদের চরিত্র হনন ও তাদের শাসন ব্যবস্থাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করাসহ মুসলমানদের ইতিহাস সমৃদ্ধ নানা স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ ভারতবর্ষ জুড়ে মুসলমানদের হাজার বছরের শাসন ব্যবস্থার যে ইতিহাস ও স্মারক রয়েছে, তা মুছে ফেলা সহজ কাজ নয়। কারণ, ভারতবর্সে মুসলমান শাসনের ইতিহাস সারাবিশ্ব জানে। এমনকি ভারতের সাধারণ হিন্দুদের মধ্যেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এ ইতিহাস জানা। ফলে মুসলমান শাসনামল মুছতে গেলে ভারতের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে, যা হবে বিকৃত ও বিকলাঙ্গ। মোদি যতই চেষ্টা করুক না কেন, তা মুসলমানদের ভারত শাসনের অমোঘ ইতিহাস বদলানোর কোনো সুযোগ নেই। মোদীর আগেও ভারতের অন্যদলগুলো কমবেশি এ অপচেষ্টা করেছে। তারা খুব একটা সফল হয়নি।

তিন.
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশের একশ্রেণীর মোদীতোষক তাকে অনুসরণ করে চলেছে। এর অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুসলমানদের শাসনামলকে উপেক্ষা করে হিন্দু শাসক ও জমিদারদের কৃতিত্বকে গৌরবান্বিত করে দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে পুস্তক রচয়িতাদের কেউ কেউ এ বার্তা দিতে চায়, বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারা এ কথা বেমালুম হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও শত শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। মুসলিম বিদ্বেষী পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশকে ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ হিসেবে অভিহিত করছে। অথচ তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদী, প্রকারন্তরে নাস্তিক্যবাদীরা বাংলাদেশের চিরায়ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূলে আঘাত হানার জন্য পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম ও তার ইতিহাসকে অবজ্ঞা করে হিন্দুদের মহান করে দেখানোর চেষ্টা করছে। তারা মোদীর পদাঙ্ক অনুসরণ বা সে যে দৃষ্টিতে ভারতে মুসলমান ও মুসলমানদের শাসনামল দেখে সে দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করছে। ইসলামকে হেয় করে হিন্দুত্ববাদকে ধর্মনিরপেক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করছে। অথচ আমাদের দেশের মতো এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ বিশ্বে বিরল। আমরা যখন স্কুলের ছাত্র ছিলাম, তখন পাঠ্যপুস্তকে ধর্ম বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল। ধর্ম বিষয়ের ক্লাস শুরু হলে, একই ক্লাসের হিন্দু-মুসলমান শিক্ষার্থীরা আলাদা ক্লাসে চলে যেতাম। মুসলমান শিক্ষার্থীরা ইসলামিয়াত এবং হিন্দু শিক্ষার্থীরা তাদের ধর্মীয় ক্লাসে চলে যেত। অর্থাৎ ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের আলাদা ক্লাস নেয়া হতো। এর চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত বিশ্বের আর কোথাও কি আছে? দুঃখের বিষয়, এখন ধর্ম বিষয়টিকে ঐচ্ছিক করে দেয়া হয়েছে। এটা যে সুপরিকল্পিতভাবে আগামী প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রক্রিয়া তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আমরা ইতিহাস সাবজেক্টে মুঘল আমলের শাসকদের ন্যায়ের শাসন, উদারতা, সংগ্রাম, ইসলামের প্রতি তাদের দরদ, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে কোনো বাধা না দেয়াসহ সুসাশনের কথা জেনেছি। এখন হিন্দুত্ববাদী এবং তাদের সমর্থকরা মুসলমান শাসনামলের সেসব ইতিহাসকে কলঙ্কিত করাসহ নানা কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ তারা এটা বিবেচনায় নিচ্ছে না, ভারতবর্ষে হাজার বছর ধরে চলা মুসলমান শাসকরা যদি চাইতেন, ভারতে একজন হিন্দুও থাকবে না, তাহলে তাদের পক্ষে এ কাজ করা অত্যন্ত সহজ ছিল। ভারতবর্ষে হিন্দুদের কোনো অস্তিত্বই থাকত না। তারা তা করেনি। এখানেই ইসলাম এবং মুসলমান শাসকদের উদারতা ও অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আমাদের পাঠ্যপুস্তক রচয়িতারা ভারতের মুসলমান শাসন ব্যবস্থার সুদীর্ঘ এ ইতিহাস উপেক্ষা করে হিন্দু রাজা ও জমিদারদের বড় করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছে। এখানেই শেষ নয়, পাঠ্যপুস্তকে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের যে সচিত্র তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তা-ও নাস্তিক্যবাদের থিওরি। এ থিওরির মূল কথা হচ্ছে, কালবিবর্তনে প্রত্যেক প্রজাতির প্রাণীর দেহের পরিবর্তন ঘটে এবং তার একটি কমন পূর্বপুরুষ রয়েছে। মানুষের বিবর্তনের কথা চিত্রিত করতে গিয়ে ডারউইন দেখিয়েছেন, মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল বানর। সময়ের বিবর্তনে বানর থেকে মানুষ বর্তমান রূপ লাভ করেছে। তার এ মতবাদ কোনো ধর্মই স্বীকৃতি দেয়নি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ অনেক জায়গায় মানুষকে তিনি কিভাবে সৃষ্টি করেছেন, তা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। সুরা ক্বিয়ামাহ’র ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘সে কি এক শুক্রবিন্দু ছিল না? যা মাতৃগর্ভে নিক্ষিপ্ত করা হইয়াছিল, অত:পর তাহা জমাট রক্ত হইয়াছিল, তৎপর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টি করিয়াছেন, অত:পর মানুষরূপে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা হইতে দুই প্রকার-স্ত্রী ও পুরুষ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে যখন গর্ভবতী মায়ের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়, তখন মানুষের এ সৃষ্টি প্রক্রিয়া সহজেই যে কেউ দেখতে পারে। কাজেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ যে সঠিক নয়, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। এই থিওরি নাস্তিক্যবাদ ছাড়া কিছুই নয়। আমরা যদি আদিপিতা ও প্রথম পুরুষ হযরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া’র কথা বিবেচনা করি, তাহলে কি বলা যাবে, তারা বানর থেকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)? পবিত্র কোরআনে আদম (আ.) ও বিবি হাওয়ার সৃষ্টিকথা স্পষ্টভাবে আল্লাহতায়ালা বলে দিয়েছেন। এই আদম-হাওয়াকে নিয়ে ষোল শতকে ব্রিটেনের বিখ্যাত কবি জন মিল্টন ‘প্যারাডাইস লস্ট’ নামে দশ খ-ে দশ হাজার ভার্স নিয়ে এক মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। সেখানেও আদম-হাওয়ার সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই, ডারউইনের বিবর্তনবাদ যে সঠিক নয়, বরং মানুষ সৃষ্টিকে অস্বীকার করার শামিল তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। এটি নাস্তিক্যবাদকেই সমর্থন করে। এই নাস্তিক্যবাদের থিওরিই আমাদের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরা হয়েছে। এ এক ভয়ংকর ঘটনা। আমাদের আগামী প্রজন্মকে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে নাস্তিক্যবাদের মাধ্যমে গড়ে তোলার এক ধরনের হীন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে দেশের ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম-ওলামা এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এ ধরনের সিলেবাস বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

চার.
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকে কোনো বিষয়ে দ্বিমত, অস্বস্তি কিংবা আপত্তি থাকলে সেগুলো সংশোধন করা হবে। তিনি বলেছেন, আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেব এবং সে অনুযায়ী বছরব্যাপী এগুলো পরিমার্জন-পরিশীলন করব। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব পুস্তক যাদের রচনা করতে দেয়া হয়েছে, তারা কেন এ ধরনের বিতর্কিত বিষয় সংযোজন ও বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরবে? তারা কি আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট জানেন না? ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার নামে কেন তাদের সেন্টিমেন্টে আঘাত করবে? প্রকৃত ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে এক ধর্মের মানুষকে খাটো করতে গিয়ে অন্য ধর্মের মানুষকে বড় করে দেখাতে হবে কেন? শিক্ষামন্ত্রণালয়ই বা কেন পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এমন লেখকদের দায়িত্ব দেবে, যাদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে কিংবা বিতর্ক হতে পারে? এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সেন্টিমেন্টের বিপরীতে গিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। যারাই করতে গিয়েছে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, পাঠ্যপুস্তক কোনো গল্প-উপন্যাসের বই নয়। এটি গণপুস্তক। জাতিকে শিক্ষিত এবং দেশের চিরায়ত মূল্যবোধের মাধ্যমে করে গড়ে তোলার বাধ্যতামূলক সিলেবাস। এখানে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, নীতি-নৈতিকতা, কৃষ্টি-সংস্কৃতির পরিপন্থী এবং বৃহৎ ও কমন জ্ঞানদানের পরিবর্তে কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যমূলক মতামত ও ইতিহাসের বিকৃতি তুলে ধরা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। সরকারের উচিৎ অবিলম্বে বিতর্কিত সিলেবাস বাতিল করে সঠিক ও যুক্তিযুক্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা।

darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন