শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বৈরী আহাওয়া দক্ষিণাঞ্চলে ১৭ লাখ টন বোরো উৎপাদন ব্যহত করতে পারে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫৯ এএম

দক্ষিণাঞ্চলে ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে বীজতলা তৈরীর লক্ষ্য অতিক্রম করলেও পৌষের শুরু থেকে তাপমাত্রা অব্যাহত ভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ‘কোল্ড ইনজুরী’ নিয়ে শংকিত কৃষি যোদ্ধাগন। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ হেক্টরে আমন আবাদ লক্ষ্য অতিক্রম করে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে তাপমাত্রার পারদ অব্যাহতভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকায় জনস্বাস্থ্যের সাথে রবি আবাদ ও উৎপাদনে যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
অথচ বিগত খরিপÑ১ ও খরিপ-২ মৌসুমের পরে চলতি রবি মৌসুম মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদনের কথা। এমনিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নামার সাথে কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলে শীতকলীন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গুনগত মানও। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য প্রায় ১৫ লাখ টন। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে কার্তিকের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকার আগাম শীতকালীন সবজি সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পরেও কৃষি যোদ্ধাগন পুনরায় রবি ফসল আবাদে মাঠে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই করছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগন। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় একের এপর এক প্রকৃতিক দূর্যোগ কৃষকদের দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি করছে। এবার শীত মৌসুম শুরুর আগেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নামতে থাকে। বরিশালে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রায় ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে গেছে। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৪ ডিগ্রী নিচে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়েছে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলাও। মাঘের শুরুতেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ২-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমে যাবার সাথে উত্তর-পশ্চিমের হীমেল হওয়ায় বোরো বীজতলা ক্রমাগত ‘কেল্ড ইনজুরির’ কবলে পড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি হাড় কাঁপান শীতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে পারছেন না। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে মাঠে আমন কাটার ধুম চলেছে।
তবে চলমান শৈত্যপ্রবাহ গম উৎপাদনে যথেষ্ঠ ইতিবাচক ফল দেবে বলে আশাবাদী কৃষিবীদগন। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষিযোদ্ধাগন কাজ শুরু করেছেন।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আউশ ও আমনের সফলতার পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় আরো প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টন বোরো চাল পাবার লক্ষ্যে বীজতলা তৈরী সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আবাদ লক্ষ্য অর্জনে ঝুকি বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও বীজ নিয়ে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। তবে ভাটি এলাকার বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় আমন কর্তন সম্পন্ন হবার পরে কিছুটা বিলম্বে বীজতলা তৈরী হওয়ায় ফেব্রুয়ারীর শুরু থেকে মার্চের মধ্যভাগ পর্যন্ত বোরো আবাদ চলবে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন জনিয়েছেন।
বিগত প্রায় ৩টি বছরের করোনা মহামারী সংকটে কৃষি যোদ্ধাগনই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মূখ্য ভ’মিকা পালন করেন বলে মনে করছেন অর্থনীতির শিক্ষকগন। তাদের মতে, একের পর এক প্রকৃতিক দূর্যোগ আর করোনা মহামারী সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করে, তা থেকে উত্তরনে কৃষক ও কৃষির ভ’মিকা ছিল অপরিসীম। আর কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষিযোদ্ধারাই। বিগত খরিপ-১ ও ২ মৌসুম সহ চলতি রবি মৌসুমে আউশ,আমন,বোরো, গম, ডাল,তেলবীজ ও তরমুজ সহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদনে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগনই।
খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি এখনো যথেষ্ঠ শক্ত অবস্থানে থাকলেও তার প্রায় পুরোটাই প্রকতি নির্ভর বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগনও। আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি,কৃষক ও কৃষি অর্থনতিকে টিকে থাকতে হচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবীদগনও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন