সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

ব্যাপক সংকটের মধ্যেও দীর্ঘ ২৭ বছরে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির বিষয়টি উপেক্ষিত

দ্বীপজেলা ভোলার ৯ম কুপেও বিপুল গ্যাসের সন্ধান

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৩ পিএম

‘পরিক্ষামূলক অগ্নি প্রজ্জলন’এর মাধ্যমে ‘ভোলা নর্থ-২’ কুপের ৩ হাজার ৫২৮ মিটার গভীরে বিপুল গ্যাসের মজুত নিশ্চিত হয়েছে বাপেক্স।


দ্বীপজেলা ভোলাতে ৯ম কুপেও গ্যাসের সন্ধান মিলল। সদর উপজেলার ইলিশা এলাকায় ‘ভোলা নর্থ-২’ কুপের ৩ হাজার ৫২৮ মিটার গভীরে সোমবার দুপরে গ্যাসের সন্ধান নিশ্চিত হয়ে বিকেলে ‘পরিক্ষামূলক অগ্নি প্রজ্জলন’ করা হয় বলে বাংলাদেশে খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন সংস্থা-বাপেক্স’এর উর্ধতন কতৃপক্ষ জানিয়েছেন। এনিয়ে দ্বীপ জেলাটিতে ৯টি কুপে গ্যাসের সন্ধান মিলল। তবে সোমবার আবিস্কৃত ‘ভোলা নর্থ-২’ কুপে কি পরিমান গ্যাসের মজুত রয়েছে তা বিশ্লেষন করে নিশ্চিত হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে বাপেক্স-এর দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হলেও নতুন আবিস্কৃত কুপটি থেকে দৈনিক গড়ে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। একাধিক সূত্রের মতে, ভোলাতে এ পর্যন্ত আবিস্কৃত ৯টি কুপে গ্যাস মজুদের পরিমান ১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশী বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারী ‘ভোলা নর্থÑ১’ কুপটির ৩ হাজার ৩৪৮ফুট গভীর থেকে প্রথম পরিক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন করে বাপেক্স। এটি ছিল দেশের ২৭তম গ্যাসকুপ। সেখানে ৬শ বিলিয়ন ঘনফুটের বিশাল গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা দিয়েছেন বাপেক্স-এর প্রকৌশলীগন। ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ভেদুরিয়ার কাছে ‘ভোলা নর্থÑ১’ খনন কাজ শুরু করে ২০১৮-এর ১৫ জানুয়ারী কুপটিতে গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা লাভ করেন বাপেক্স-এর প্রকৌশলীগন। ২৬ জানুয়ারী দুপুরে কুপের মুখে পরিক্ষামূলক অগ্নি প্রজ্জলন করে মজুদ নিশ্চিত করে বাপেক্স। ‘টবগী-১’ সহ খনন পরিকল্পনাধীন ‘ইলিশা-১, ভোলা নর্থ-২ নিয়ে ভোলায় গ্যাস কুপের সংখ্যা দাড়াবে ৯টিতে।
এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভোলার মুলাইপতনে ‘সহবাজপুর ইষ্ট-১’ কুপে আরো ৭শ বিলিয়ন বা ৭০হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাস আবিস্কারের ফলে দ্বীপ জেলাটিতে গ্যাস মজুদ আরো সমৃদ্ধ হয়। মুলাইপতনে আবিস্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভোলা সদর উপজেলার ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান মেলায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির বিজ্ঞান সম্মত সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কারিগড়ি বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন। ‘ভোলা নর্থ-২’ সে সম্ভবনাকে আরো একধাপ এগিয়ে দিল।
২০১৭-১৮ সালে বাপেক্স ভুতাত্তিক জরিপ করে ভোলার ৩টি স্থানে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ চিঞ্হিত করেছিল। সেসময় বাপেক্স থেকে ‘ইলিশাÑ১’, ‘ভোলা নর্থÑ২’ ও টবগীÑ১’ নামে এসব গ্যাসক্ষেত্রের নামকরণ করা হয়। তবে আগের চেয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধির পরেও ইতোমধ্যে এসব গ্যাসকুপ খননে রাশিয়ার রাষ্ট্রয়ত্ব প্রতিষ্ঠান-‘গ্যাজপ্রম’র সাথে বাপেক্স-এর চুক্তি হয়। ভোলায় গ্যাসকুপ খননে গ্যাজপ্রমের সাথে চুক্তি নিয়ে আগাগোড়াই বিশেষজ্ঞ মহলে ভিন্ন মত ছিল। এমনকি গ্যাজপ্রমের চুক্তির কারণেই তিন বছর বাপেক্স’কে এসব কুপ খনন থেকে বিরত রাখার কথাও বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জ¦ালানী বিশেষজ্ঞ।
রাষ্ট্রয়ত্ব ‘পেট্রোবাংলা’ ২০২২Ñ২৫ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে ৪৬টি গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভার কুপ খননের পরিকল্পনার আওতায়ই ভোলা নর্থ-২’ কুপটি খনন করা হল। এদিকে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দু বছর পরে গত ১৮ আগষ্ট ভোলায় ‘টবগিÑ১’ কুপের খনন শুরু করে রাশিয়ার রাষ্ট্রয়ত্ব প্রতিষ্ঠান ‘গ্যাজপ্রম’। ‘টবগিÑ১’ কুপেও ২০Ñ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদের ব্যপারে আশাবাদী জ¦ালানী বিশেষজ্ঞগন।
এদিকে ’৯৫ সালের ৮ নভেম্বর দ্বীপজেলা ভোলার শাহবাজপুরে বাপেক্স প্রথম গ্যাসের সন্ধান লাভের দীর্ঘ ২৭ বছর পরেও প্রকৃতির এ অপার ভান্ডারের তেমন কোন ব্যাবহার নিশ্চিত হয়নি। শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে এপর্যন্ত যে ৪টি কুপ খনন করা হয়েছে, তার মজুদের পরিমান ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানের সরকারী-বেসরকারী ৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট ছাড়াও একটি টাইলস ফ্যক্টরী ও কিছু আবাসিক গ্রাহক মিলিয়ে শাহবাজপুর থেকে দৈনিক গড়ে ৪৫-৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে।
সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনার অভাবে ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুদ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সহ জাতীয় অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখেনি। এমনকি দেশ যুড়ে মারাত্মক সংকটের মধ্যেও ভোলার বিশাল গ্যাস ভান্ডার অব্যবহ্রত রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভোলায় আবিস্কৃত বিপুল গ্যাস-এর বানিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করণে একাধিকবার জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সংযুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
এ প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা হলেও এ লক্ষ্যে এখনো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। ওয়াকিবাহাল মহল ভোলা থেকে বরিশালÑগোপালগঞ্জÑবাগেরহাট হয়ে খুলনা পর্যন্ত সঞ্চালন পাইপ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সংযুক্তির দাবী জানিয়েছেন। তবে ভোলা থেকে ২৮ কিলোমিটার প্রসস্ত মেঘনা নদী অতিক্রম করে লক্ষ্মীপুর হয়ে ফেনীতে জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সরবারহের একটি প্রস্তাবনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি ভোলার গ্যাস এলপিজি আকারে সিলিন্ডারের মাধ্যমে সারাদেশে সরবারহ ব্যায় সাশ্রয়ী হবে বলে মত দিলেও সরকার থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোন চুড়ান্ত সিদান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বৃহত্বর জনগোষ্ঠীর সুবিধা সহ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব হিসেব করে ভোলার গ্যাস কোন পথে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তি যুক্তিযুক্ত হবে, সে আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানী বিশেষজ্ঞগন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন