রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি মাদারীপুর সদর হাসপাতাল, কাগজে কলমে ওষুধ সরবরাহ সরবরাহ থাকলেও বাস্তবে নেই

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৫২ পিএম

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের ঔষধসহ মালামাল সরবরাহেরর কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাগজে কলমে সরবরাহ থাকলেও বাস্তবে নেই।এতে করে একদিকে জনগন বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সেবা থেকে অপর দিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মালামাল সরবরাহের কাজে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হওয়ার কারনেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিকে সম্প্রতি দুদক একটি ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ বছর মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবারহের কাজ পেয়েছে একটি পরিবারের দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে,তাদের হাতেই জিম্মি হয়ে পড়ছে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবারহ কাজ। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তিনকোটি আটত্রিশ লক্ষ পঞ্চন্ন হাজার দুইশ ষোল টাকার মালামাল সরবারহ করা হয়। এতে মালামাল সরবরাহের কাজ পায় মেসার্স তাসিন এন্টারন্যাশনাল ও মিজান ট্রেডিং নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সিরাজুল আলম খান ও মিজান খান। এই দুই মালিক একে অপরের আপন ভাই। সিরাজুল আলম খান মাদারীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মালমাল সরবারাহ করা হয় চার কোটি সতেরো লক্ষ আটান্ন হাজার একশ উনিশ টাকার। ওই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবারাহ করে। ২০২০-২১ অর্থ বছরেও ওই দুই প্রতিষ্ঠান চার কোটি ছাপান্ন লক্ষ নব্বই হাজার তিনশ সাতান্ন টাকার মালামাল সরবারাহ করে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মিজান ট্রেডিং ছয় কোটি নয় লক্ষ একাত্তর হাজার একশ একুশ টাকার মালামাল সরবরাহ করে।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে পাঁচ কোটি সাইত্রিশ লক্ষ টাকার দরপত্র আহবান করে। মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের জন্য ৬টি প্যাকেজে দরপত্র আহবান করা হয়। ৬টি প্যাকেজে ৯৮ টি সিডিউল বিক্রি হয়। জমা পড়ে মাত্র ১৩টি সিডিউল। চলতি অর্থ বছরেও সবাইকে অবাক করে কাজ পেয়ে যায় সেই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজান ট্রেডিং এবং তাসিন ইন্টারন্যাশনাল। বরাদ্দকৃত পাঁচ কোটি সাইত্রিশ লক্ষ টাকার ‘ক’ গ্রæপের ইডিসিএল বহির্ভূত ওষুধ সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২৫% বরাদ্দ। ‘খ’ গ্রæপের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ১২%, ‘গ’ গ্রæপে লিলেন সামগ্রী ক্রয় ৫%, ‘ঘ’ গ্রæপে গজ ব্যান্ডেজ ক্রয় ৫%, ‘ঙ’ গ্রæপে কেমিক্যাল ও রিএজেন্ট ক্রয় ৩% এবং ‘চ’ গ্রæপে আসবাবপত্র ক্রয় ৩% বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত অর্থ বছরের গজ,ব্যান্ডেজ, তুলা ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিলো চৌত্রিশ লক্ষ নিরানব্বই হাজার আটশ পয়ষট্টি টাকা। লিলেন কাপরের জন্য বরাদ্দ ছিলো চৌত্রিশ লক্ষ সাতানব্বই হাজার নয়শ চল্লিশ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন গজ,ব্যান্ডেজ, তুলা ও লিলেন কাপরের জন্য খরচ হয়েছে উনিশ হাজার টাকা। অথচ প্রতিদিনই রোগীদের নিজ খরচেই কিনতে হয় এইসব সামগ্রী। একশ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের জন্য গত অর্থ বছরে আইভি ফ্লুইড ও দন্ত চিকিৎসার উপকরন (ঔষধ) কেনা হয়েছে এক কোটি নব্বই লক্ষ একত্রিশ একশ চুরাশি টাকার। অথচ দন্ত চিকিৎসক নেই দুই বছর থেকে। দন্ত চিকিৎসক না থাকলেও বিপুল পরিমান অর্থ খরচ হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ঔষধ কেনা হয়েছে এককোটি তের লক্ষ চুয়াত্তর হাজার নয়শ তিহাত্তর টাকার। মাদারীপুরের পাঁচখোলা গ্রাম থেকে চকিৎসা নিতে আসা রোগী মো.রাজ্জাক বলেন, আমাদের তো জ্বর আর গ্যাস্টিকের ঔষধ ছাড়া সবই কিনে নিতে হয়। হাসপাতাল থেকে বলে সাপ্লাই নাই। শুনি ঔষধ কেনায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু তেমন কোন ঔষধ তো পাই না।
তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ অ¯^ীকার করেছেন উভয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের দাবী নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তারা মালামাল সরবারহের ঠিকাদারী কাজ করেন। কোন ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িত নয় বলেও দাবী করেন তারা। এব্যাপারে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ বলেন, মালামাল সরবরাহের কাজে অনিয়ম নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে তদন্ত করা হবে। দন্তচিকিৎসক না থাকলেও এই খাতে কোটি টাকা খরচের ব্যাপারে তিনি বলেন ওই টাকা দিয়ে অন্যখাতে খরচ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন