হ্যালুসিনেশন বিভিন্ন মনোরোগের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানব মস্তিষ্কের বিপাকজনিত কারণ বা ক্রিয়াতে আমূল পরিবর্তন হলেই এটা বারবার হওয়া সম্ভব। যেমন- শিশু-কিশোরদের তীব্র জ্বরে মস্তিষ্কের পরিপাকজনিত পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে ঐ সময়ে হ্যালুসিনেশন হতে পারে। মনোবিকারজনিত মানসিক সমস্যায় হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। যদিও মস্তিষ্কের বিপাকজনিত অস্বাভাবিকতা এখনো পরিষ্কার বোঝা যায়নি। তবে বিভিন্ন ভালো ঔষধ সেবনে সাইকোসিস বা মনোবিকার যে ধরনের হ্যালুসিশন হয় তা দূর করা সম্ভব।
কিডনি ও লিভার বিকল হলে পুরো শরীরের বিপাকজনিত নানা পরিবর্তন হয়ে থাকে। এসব পরিবর্তন হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন-মারিজুয়ানা, সাইলোকাইবিন, এলএসসি, আফিম ইত্যাদি মারাত্মকভাবে হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি করতে পারে। কোন ওষুধ হঠাৎ ছেড়ে দিলে বিপাক ধীরগতি হয়, যাতে কিনা হ্যালুসিনেশন ত্বরান্বিত হয়।
সাধারণ কারণসমূহ
* ভালোবাসার মানুষটির সম্প্রতি মৃত্যু। (এই ধরনের হ্যালুসিনেশনে সেই মানুষটির নানা শব্দ কানে আসে বা কখনো তাকে দেখা যেতে পারে)
* পোস্টট্রমাটিক বা আঘাত-পরবর্তী ট্রেস ডিসঅর্ডার
* ড্রাগের সাথে সম্পর্কিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
* এলএসডি, পিওট, মাশরুমস, সাইলোকাইবিন, আফিম সেবন
* অ্যালকোহলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
* অ্যালকোহল পরিহারকালীন সময়
* সাইকোসিস বা মনোবিকার
* ডেলিরিয়াম
* ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশতা)
হ্যালুসিনেশনে স্বাস্থ্যসেবা:
* যে হ্যালুসিনেশন ভালোবাসার কাউকে হারানো বা প্রিয়জন হারানোর সাথে সম্পর্কিত বা কোনো ধরনের আঘাতজনিত কারণের সাথে সম্পর্কিত এগুলো আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যেতে পারে
* অ্যালকোহল বা স্ট্রিট ড্রাগ সেবনজনিত কারণে যদি হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে তবে এগুলো সেবন পরিহার করুন এবং বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল বা সাইকিয়াট্রিস্ট সেবা নিন
* ঘুমানোর সাথে সাথে বা ঘুম থেকে জেগে ওঠার সাথে সাথে যদি হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে তবে চিকিৎসার তেমন কোনো দরকার নেই
* হ্যালুসিনেশনের সাথে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকে তবে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন কখন সহায়তা নেবেন
* হ্যালুসিনেশন নিয়মিতভাবে হলে
* হ্যালুসিনেশন অব্যাখ্যাকৃত হলে
* বিভিন্ন রাসায়নিক বা মাদকের অপব্যবহারজনিত কারণে
* হ্যালুসিনেশনের সাথে যদি অন্যান্য অব্যাখ্যাকৃত উপসর্গ থাকে
* এটা যদি ৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়।
হ্যালুসিনেশনের ধরন বা প্রকৃতি:
* কোনো ধরনের শব্দের অনুভ‚তি আছে কি?
* কোনো অলীক কিছু দেখা যায় কি?
* কোনো কিছু আপনাকে স্পর্শ করছে এ ধরনের অনুভ‚তি
* আপনার চিন্তা ও আচরণের ওপর মন্তব্যদায়ক কোনো কিছু শুনেছেন কি?
* এক সাথে কি দুই বা তার চেয়ে বেশিজনের শব্দ কানে আসছে। যার মূলত কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই
হ্যালুসিনেশন ও সময়ের সম্পর্ক
* আপনি ঠিক কতক্ষণ যাবৎ হ্যালুসিনেশনে ভুগছেন?
* প্রথম কবে এটা শুরু হয়েছিল?
* হ্যালুসিনেশন কি মাত্র ঘুমিয়েছেন বা ঘুম থেকে জেগেছেন এই সময়ে হয়?
হ্যালুসিনেশন বাড়াতে পারে এ রকম ফ্যাক্টর:
* সম্প্রতি কি মৃত্যুর কোনো ঘটনা বা আবেগজনিত কোনো সমস্যা হয়েছে?
* আপনি কি ওষুধ সেবন করছেন?
* নিয়মিত কি অ্যালকোহল সেবন করেন?
* আপনি কি অনৈতিক ড্রাগ সেবনে অভ্যস্ত?
* হ্যালুসিনেশন কি কোনো আহত বা আঘাতজনিত ঘটনার সাথে সম্পর্কিত?
অন্যান্য:
* অস্থিরতা বা উত্তেজনা আছে কি না?
* আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হয় কি?
* সাথে কি জ্বর থাকে?
* মাথাব্যথা কি এর সাথে সম্পর্কিত?
* এ সময় বমি হয় কি?
এইসব জানার পর রোগীকে নিউরোলজিক্যাল বা সাইকোলজিক্যাল সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো যেতে পারে। সাধারণত ডিপ্রেশন, সিজোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়া, বিভিন্ন সাইকোটিক ডিসঅর্ডারসহ মাদকাশক্তি ইত্যাদিতে হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন