রাত পোহালেই কুতুবুল আউলিয়া হাদিয়ে যামান শাহ্ ছূফী আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা আবু ইউছুফ মুহাম্মদ ইয়াকুব ছাহেব বদরপুরী(রহঃ)’র ৬৪ তম ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে আজিমুশ্বান জলছা অনুষ্টিত হবে।
২৯ জানুয়ারী রবিবার দেশ বিদেশের ফুলতলী ছাহেব কিবলা (রহঃ)’র হাজার হাজার মুরিদীন-মুহব্বিনগণ ঐতিহাসিক কুলাউড়ার আলালপুর আলহাজ্ব আত্তর খাঁন হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিম খানা প্রাঙ্গণে এই মাহফিলে সমবেত হবেন।
আজিমুশ্বান জলছায় সভাপত্বিত করবেন ফুলতলী ছাহেব কিবলা (রহঃ)’র বড় ছাহেব জাদা মুরশিদে বরহক আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। এছাড়াও ফুলতলী (রহঃ)’র ছাহেব জাদা ও খলিফা গন সহ ত্বরিকতের বুজুর্গগন রবিবার সকাল থেকে পরদিন ফজর পর্যন্ত যিকির আজকার সহ মুল্যবান বয়ান পেশ করবেন।
ঐতিহাসিক এই মাহফিলে সবাইকে দলে দলে যোগদান করার জন্য আরজ গোজার করেছেন ছাহেব জাদায়ে ফুলতলী আল্লামা মাওলানা নজমুদ্দীন চৌধুরী ও আল্লামা ফুলতলী (রহঃ)’র খলিফা হযরত হাফিজ মো. মহসিন খান আলালপুরী।
কুলাউড়ার আলালপুরের ইসালে সওয়াব মাহফিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : শাহ্ ছূফী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আবুইউছুফ মোঃ ইয়াকুব ছাহেব বদরপুরী (রহঃ) এর অন্যতম খলিফা ছিলেন কুলাউড়া আলালপুর নিবাসী হযরত হাফিজ আপ্তাব খান (রহঃ) (কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হযরত মাওলানা কাজী ফজলুল হক খান সাহেদের দাদা)। বদরপুরী (রহঃ) ইন্তেকালের পরের বছর আল্লামা ফুলতলী (রহঃ)সহ বদরপুরী (রহঃ) এর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে খলিফাদের সাথে পরামর্শ করে নিজ বাড়ীতে বাৎসরিক মাহফিলের আয়োজন করেন। আল্লামা ফুলতলী (রহঃ) ইসালে সওয়াব মাহফিলের নাম প্রস্তাব করলে সর্বসম্মতি ক্রমে ১৯৫৮ সাল থেকে মোবারক এই মাহফিল শুরু হয়। দীর্ঘ ৬৪ বছরের পথ পরিক্রমায় জৈনপুরী ছিল ছিলার অসংখ্য আউলিয়া কেরামের উপস্থিতিতে ধন্য হয়েছে কুলাউড়ার এই পবিত্র মাহফিল, উপমহাদেশের প্রখ্যাত পীরে কামিল আল্লামা ফুলতলী (রহঃ), আল্লামা বিশকুটি (রহঃ), হযরত মাওলানা আব্দুশ শুকুর এখতিয়ারপুরী (রহঃ), হযরত মালানা শাতির আলী বারগাত্তী (রহঃ), হযরত মাওলানা হরমুজ উল্লাহ শায়দা (রহঃ), হযরত মাওলানা মাহমুদুর রহমান বদরপুরী (রহঃ)সহ ছিলছিলার বুজুর্গানে কেরামদের নেক তাওয়াজ্জুহ রয়েছে পবিত্র এই ইসালে মাহফিলের উপর কুলাউড়ার রূহানী ৬৪তম ইসালে সওয়াব মাহফিলে শরীক হওয়ার তাওফিক মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে দান করুন আমীন।
শাহ ইয়াকুব বদরপুরী (র)’র সংক্ষিপ্ত জিবনী:-পরিচয়ঃ নাম আবু ইউসুফ মুহাম্মদ ইয়াকুব, পিতা শাহ মোহাম্মদ বাছির। হযরত শাহ ইয়াকুব ছাহেব ভারতের আসাম প্রদেশের কাছাড় জেলার অন্তর্গত বদরপুরের বুন্দাশীল নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৮৫৭ ইং ১২৬৪ বাংলা সনে জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন: হযরত বদরপুরী(রহঃ) বাল্যকাল থেকেই দানশীল ছিলেন। এজন্য তাকে হাতেমতায়ীর সাথে তুলনা করে তাকে হাতেম আলী বলা হয়। তিনি বাল্যকালে পিতা-মাতাকে হারান। মামার তত্বাবধানে বাঘাবাড়ী মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ফুলবাড়ী মাদরাসায় মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং ভারতের রামপুর আলিয়া মাদরাসা থেকে হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, ইত্যাদি বিষয়ের উপরে গভীর জ্ঞান অর্জন করে সনদ লাভ করেন। তিনি বাল্যকাল থেকেই ছিলেন খোদাভীরু,পরহেজগার ও আশিকে রাসূল।
অধ্যাপনা : হযরত বদরপুরী(রহঃ) শিক্ষা জীবন শেষ করে প্রথমে আসামের জয়নগর মাদরাসায় অধ্যাপনা করেন। অতঃপর কাছাড় জেলার কাটিগড়া আলিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনা করেন এবং পরবর্তিতে নিজের বাড়ীর পাশে বদরপুর আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্টা করে সেখানে হাদীসের খেদমতে নিয়োজিত হন।
খেলাফতি লাভ : বাল্যকাল থেকেই হযরত বদরপুরী(রহঃ) একাগ্রছিত্তে আল্লাহর ধ্যানে মনোনিবেশের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ইলমে জাহির শিক্ষা লাভের পর ইলমে বাতিন শিক্ষালাভের অনুসন্ধান করছিলেন কিন্তু কোন কামিল মুর্শিদের হাতে বাই’আত গ্রহন করবেন এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোন ইংগিত পাওয়ার আশায় ছিলেন। এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন হাফিজ আহমেদ জৌনপুরী (রহঃ) তাকে ডাকছেন। প্রতিউত্তরে হযরত বদরপুরী(রহঃ) নিবেদন করলেন কোথায় আপনার সাক্ষাত পাব? জৌনপুরী (রহঃ) বললেন, কুমিল্লা জেলার চাঁদপুরে এসে আমার সাক্ষাত পাবে। পরের দিনই তিনি বদরপুর থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে পৌঁছে জৌনপরী (রহঃ) এর সাক্ষাত লাভ করে আলিঙ্গন করেন। জৌনপুরী ছাহেব (রহঃ) বদরপুরী ছাহেব (রহঃ) এর সম্মানে নিজেত কাধের তোয়ালেখানা বিছিয়ে দিয়ে বললেন, তাশরীফ রাখুন। বদরপুরী (রহঃ) তোয়ালেখানায় চুমু খেলেন। তখন জৌনপরী (রহঃ) বললেন, আপনি কি চান? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি চাই। তখন তাকে তিনি বাইআত গ্রহণ করালেন এবং দুইদিনের ভেতরে খেলাফতের সনদ দান করলেন।
হযরত বদরপুরী(রহঃ) ইন্তেকালঃ হযরত ইয়াকুব বদরপুরী (রহঃ) ১০৪ বছর বয়সে ১৯৬১ সালের ১৯ জানুয়ারী সোমবারে মাগরিবের সময় ইন্তেকাল করেন।
এদিকে শাহ্ ছূফী আলহাজ্জ হযরত মাওলানা আবুইউছুফ মোঃ ইয়াকুব ছাহেব বদরপুরী(রহঃ)’র ইছালে সওয়াব আজিমুশ্বান জলছাকে সুন্দর ভাবে সফল করার জন্য কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হযরত মাওলানা কাজী ফজলুল হক খান সাহেদ সর্বস্থরের জনসাধারনের প্রতি আহবান জানান।
উক্ত মাহফিলে সেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করবেন কুলাউড়া উপজেলার আলইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়ার নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়রা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন