শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু না হলে এতদিনে বাংলাদেশে আক্রমণ করত

‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সা¤প্রতিক অর্জন-সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনার সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই অঞ্চলের একপাশে ভারত আর একপাশে চীন।

দুই দেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়। আমাদের এই অবস্থানের দিকে সকলেরই নজর। কেননা আগামী বিশ্ব হবে এশিয়ার বিশ্ব। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সা¤প্রতিক অর্জন-সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব সুসম্পর্ক আছে বাংলাদেশের। বন্ধু দেশ বলে সে অনেক কিছু বলে, সুপারিশ দিতে পারে। বন্ধু না হলে কিছু বলত না, এতোদিনে বাংলাদেশ আক্রমণ করতো; বন্ধু বলে বেশি সুপারিশ দেয়।

ড. মোমেন বলেন, যেকোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি সেই দেশের স্বার্থে তৈরি করা হয়। দেশের বাস্তবিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হয়। আমাদের দেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত আমাদের জানতে হবে। রাজনৈতিক যে দিক-দর্শন সেটাও আমাদের জানতে হবে। আমরা এখন খুব ইন্টারডিপেনডেন্ট বিশ্বে থাকি। খুব ডিপেনডেন্ট, একটা কিছু হলেই ঝামেলা হয়ে যায়। এ অবস্থায় আছি।

বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ- তিনটি বড় দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত। এরা শক্তিশালী দেশ। এর মধ্যে দু’জন আমাদের প্রতিবেশী। এদের সঙ্গে আমার এমনভাবে চলতে হবে যাতে, সম্পর্কটা উন্নত করতে পারি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যা ও বিভিন্ন সময়ে দেশটির দেওয়া পরামর্শের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একক দেশ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব সুসম্পর্ক আছে। বন্ধু দেশ বলে সে অনেক কিছু বলে, সুপারিশ দিতে পারে। বন্ধু না হলে কিছু বলত না, তখন আক্রমণ করত; বন্ধু বলে বেশি সুপারিশ দেয়। সুপারিশ ভালো হলে সেগুলো অবশ্যই গ্রহণ করি। তিনি বলেন, সবকিছুতে যে আমরা পারফেকশন, এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমাদের যদি কোনো দুর্বলতা থাকে বন্ধু বলবে। আর যদি সত্যি খারাপ কিছু হয়, সেটা দেখব।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাখ্যায় ড. মোমেন বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। ঐতিহাসিকভাবে বড় বন্ধু। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক একটা অপূর্ব সম্পর্ক। বাংলাদেশ-ভারত বড় সমস্যাগুলো সমাধান করেছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিনা বুলেটে এ ধরনের অর্জন কেউ করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশটির সঙ্গে সোনালী অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে। খুব সুন্দর সম্পর্ক। ভারত এ বছর জি-২০ প্রেসিডেন্সি পেয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে একটি দেশকে দাওয়াত করেছে। আমরা এটার সদস্য না। এই যে সম্মানটা তারা আমাদের দিয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে; সুসম্পর্কের কারণে।

চীনের প্রসঙ্গ টেনে ড. মোমেন বলেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি। তারাও চাচ্ছে বাণিজ্য আরও বাড়ানোর জন্য। আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক।
তিনটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যে ব্যালেন্স, এটা সহজ নয়। আমাদের একজন বড় নেতা আছেন শেখ হাসিনা। খুব বাস্তববাদী নেতা। তার ফলে আমাদের এটা সম্ভব হয়েছে।

তিনটি বড় দেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাখ্যায় ড. মোমেন বলেন, বড় দেশগুলো ছাড়াও আমার সামনে যে চ্যালেঞ্জ অন্যান্য রাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও সউদী আরব। সউদী আরব ২৬ লাখ লোককে চাকরি দিয়েছে। তার সঙ্গে আমার বিভিন্ন রকমের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে। জাপানও বড় সহযোগী। তাদের থেকে সবচেয়ে বড় ঋণ নিয়েছি।

রাশিয়া নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বড় সম্পর্ক বাংলাদেশের। তারা আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধু। তারা আমাদের বড় নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ করছে। যথা সময়ে এটার কাজ শেষ করবে তারা।

আসিয়ানকেও বাংলাদেশের দরকার জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আসিয়ান দেশগুলো আগামীতে শক্তিশালী হচ্ছে। তাদেরও আমরা ধরে রাখতে চাই। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য তাদের দরকার। তিনি বলেন, আমিরাতে আমাদের কয়েক লাখ লোক কাজ করেন। কাতারে কয়েক লাখ লোক কাজ করেন। সবগুলো দেশের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রাখার প্রয়োজন।

এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশের ভ‚-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক লোকেশন যদি দেখেন, ভ‚-রাজনৈতিক অবস্থায় খুব গুরত্বপূর্ণ আমাদের দেশ। পাশেই বিরাট এশিয়ায় প্যাসিফিক সমুদ্র। আমরা ইপি সেন্টারে আছি। এর পাশে বড় বড় রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে। একটি চীন, আরেকটি ভারত। এদের সঙ্গে একটা ভারসাম্য নিয়ে আমাদের চলতে হয়। আমরা এটাকে ইগনোর (উপেক্ষা) করতে পারি না। আমাদের লোকেশনের প্রতি অনেকের আগামী বিশ্ব হবে এশিয়ার বিশ্ব। আমাদের লোকেশন ভালো।

ড. মোমেন বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে দেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস খুব বেড়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। তবে দুর্নীতি এখনো হচ্ছে, আমরা দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে চাই।

প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ ক‚টনীতি রক্ষা করে চলেছি। আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পররাষ্ট্র নীতি একযোগে সমন্বয় করে দেশ এগিয়ে চলেছে। আমরা যে অগ্রগতি করছি, সেটা বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারবে কিনা, অনেকে সন্দেহ করেছিলেন। তবে ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশ সগৌরবে টিকে রয়েছে, এগিয়ে চলেছে। আমাদের সাফল্য ও অর্জন সারা বিশ্বই এখন দেখছে। আর আজকের উন্নয়ন-অগ্রগতির ভিত্তি রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভ‚ঁইয়া বলেন, আমাদের অর্জন অনেক। শিক্ষা, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, কৃষিখাতে অনেক সাফল্য রয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও জোর দিতে হবে।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. এ এস এম আলী আশরাফ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু, অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন