পরিবেশ দূষণ ঘটছে এমন সব শিল্প-কারখানার মালিক ও উদ্যোক্তাদের সরকারি কোনো সুবিধা দেয়া হবে না। রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার এবং বিশেষ মর্যাদা থকে বঞ্চিত হবেন তারা। প্রযুক্তি ব্যবহারকারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভার জন্য প্রস্তুতকৃত অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানোনো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ওই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ সম্পর্কে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পরিবেশ দূষণরোধে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন, ঢাকার চার পাশে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে প্রতিটির জন্য পৃথক ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। সৃষ্টিকারী অন্য দূষণ কারখানাগুলোও পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিল্প-কারখানায় ইটিপি স্থাপনের জন্য নিজস্ব জমি নেই তাদের কারখানা অন্যত্র উপযুক্ত স্থানে স্থানাস্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্ব খাতের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকায় স্থাপিত শিল্প-কারখানা জরিপের পর প্রতিটি যাচাই-বাছাই করে পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়া হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিবেশ ছাড়া প্রাণীজগতের অস্তিত্ব অসম্ভব। জীবনের জন্য পরিবেশের অপরিহার্যতার কথা জেনেও আমরা জেনে না জেনে প্রতিদিনই পরিবেশ ধ্বংস করছি। এক সময়ের বিশ্বের স্বাস্থ্যকর নগরী বলে পরিচিত ঢাকা এখন অস্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হয়েছে। ঢাকায় বায়ূদূষণের মাত্রা অত্যধিক। পরিবেশ কতটা দূষিত তা বোঝাবার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। এখন প্রকৃতিতে চলছে পৌষ মাস। অথচ বাস্তবে এখন পর্যন্ত শীতের তেমন প্রকোপ নেই। সকালের দিকে একটু হাল্কা শীত অনুভূত হয়, যা কেবল বসন্তের সাথে তুলনীয়। প্রকৃতির এই বরূপ আচরণ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণেই হচ্ছে। রাজধানীর চার পাশের নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। শিল্প বর্জ্যসহ নানা দূষণ এসব নদীর পানিকে বিষিয়ে তুলেছে। কার্যত পানি বলতে কিছু নেই। পুরোটাই নোংরা। বিষয়টি নতুন নয়। অনেক দিন থেকেই এ অবস্থা চলছে। ইতোপূর্বেও নদী খনন তীর সংরক্ষণ নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে এসবের নামে অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এবারও যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যেসবের মধ্যে তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আলোচ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ডিসিসি, ওয়াসা এবং এফবিসিসিআইকে যুক্ত করে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য নদীতীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, বৃক্ষরোপণ, ওয়াকওয়ে তৈরি ইত্যাদি সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেবল সিদ্ধান্ত কি লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট? ইতোপূর্বে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলো কেন এবং কী কারণে ব্যর্থ হয়েছে অথবা বাস্তবায়ন করা যায়নি তার মূল্যায়ন না করলে নতুন করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাবে কি না ভেবে দেখা দরকার। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলো রক্ষার জন্য মন্ত্রিপরিষদে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এমনকি এ ব্যাপারে উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্তও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছু হয়েছে তা বলার কোনো সুযোগ নেই। দিন দিন পবিবেশ বিপর্যয়ই ত্বরান্বিত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিরাট এলাকা মরুকরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে। একদিকে নগরায়নের নামে বন কেটে উজাড় করা হচ্ছে অন্যদিকে বনায়নের কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকায় যতটুকু গাছপালা রয়েছে, নিঃশ্বাস গ্রহণের যতটুকু অবকাশ রয়েছে তাও কেটে ফেলা হচ্ছে। এটা সকলেরই মনে রাখা দরকার, পানি এবং বৃক্ষ হচ্ছে মানুষের পরিবেশের সবচেয়ে বড় বান্ধব।
অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বহুবার নেয়া হয়েছে। তার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে তা থেকে কোনো উপকার পাওয়া যায়নি। এর ফলে সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অলোচ্য ক্ষেত্রেও বলা যায় পরিবেশ রক্ষার বিবেচনায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা যাতে কেবল কাগজে-কলমে না থাকে এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব যাতে পরিবেশের অন্তরায় না হয় সেদিকে সকলেরই যতœবান হতে হবে। আমাদের নদ-নদী, সুন্দরবন সবকিছুই এখন বিপদাপন্ন। তাই পরিবেশ রক্ষায় একদিকে ভারত থেকে পানি পাবার ব্যবস্থা অন্যদিকে দেশীয়ভাবে যথাযথ নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে সকলে সচেষ্ট থাকবেনÑ এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন