চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রিয়নবী (সা.)’র প্রতি প্রেম-ভালোবাসায় নিজেকে উজাড় করে নবীর সকল সুন্নাতকে ধারণ ও নবীর আদর্শে জীবন গড়ে কীভাবে প্রিয় নবীর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয় তা মুসলিম মিল্লাত বিশেষত যুব সমাজকে শিখিয়ে গেছেন কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রহ.)। গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে ঐতিহাসিক গাউছুল আজম কনফারেন্সে লাখো সুন্নি জনতার উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবারের পীর কামেল আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী (ম.জি.আ.) একথা বলেন।
জশ্নে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এ কনফারেন্সের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ। ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ বলেন, গাউছুল আজম (রহ.) সারা জীবন ‘পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর’Ñ এ দর্শনে পথভ্রষ্ট যুবকদের মাঝে বিলিয়েছেন নূরে মুহাম্মদীর রওশনে কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে জীবন গড়ার প্রেরণাশক্তি। ইসলামের খেদমতে ও শিক্ষার প্রসারে নির্মাণ করেছেন দেশ-বিদেশে বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও পাঠাগার। শেষ জীবনে এসে এ মহান ব্যক্তি নিজের সঞ্চিত সব অর্থ নবীর ঘর কাগতিয়া কামিল মাদ্রাসায় দান করার মধ্য দিয়ে গভীর রাসূলপ্রেম ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে বিরল।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম তালুকদার, এলবিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুনতাহার উদ্দিন সাকিব। কনফারেন্সে প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ ফোরকান মিয়া।
আল্লামা মুনির উল্লাহ্ আহমদী যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, গাউছুল আজম (রহঃ)’র দৈনন্দিন জীবন-কর্ম, তরিক্বত, আদর্শ ও দর্শন অনুসরণ-অনুকরণ করলে একজন সাধারণ যুবক-যুবতী, শিক্ষার্থীর জীবন সততা, সৎচিন্তা-চেতনা ও সাফল্যে ভরে ওঠবে। তারা কোরআন-সুন্নাহ্র দিকে ধাবিত হবে। যার ফলে উপকৃত হবে তাদের মা-বাবা, পরিবার থেকে শুরু করে গোটা সমাজ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, যুগশ্রেষ্ঠ অলী গাউছুল আজম (রহঃ)’র যোগ্য প্রতিনিধি অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী এ দরবার, তরিক্বতের প্রচার-প্রসার ও আধুনিক যুগোপযুগী ইসলামী শিক্ষার প্রসারে যে বিপ্লব সাধন করে চলেছেনÑ তা এককথায় অসাধারণ। কাগতিয়া দরবারের সাথে যারা জড়িত রয়েছেন তারা অত্যন্ত ভাগ্যবান উল্লেখ করে অধ্যক্ষ মোমতাজী বলেন, ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ আহমদী একজন খাঁটি আলেম। কাগতিয়া দরবার যুবসমাজকে আল্লাহর পথে রাসূল (সা.)’র আদর্শ অনুসরণে জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, এদেশে ইসলাম এসেছে আল্লাহর অলিদের মাধ্যমে, সন্ত্রাসের মাধ্যমে নয়। ইসলাম না জানার কারণে ইসলামী শিক্ষায় অজ্ঞতার কারণে কিছু মানুষ বিপথগামী হচ্ছে। মাওলানা মোমতাজী বলেন, মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এদেশে ইসলামী শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী শিক্ষার প্রসারে অত্যন্ত আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আলিয়া মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করেছে। তিনি শিক্ষামন্ত্রীও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ফোরকান মিয়া বলেন, কিংবদন্তীতুল্য আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব গাউছুল আজম (রহঃ) অগণিত বিপথগামী যুবককে আলোর পথ প্রদর্শন, ইসলামের খেদমত, সুন্নাতে মোস্তফার প্রচার, ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারসহ বহুমুখী কর্ম ও কীর্তির মাধ্যমে যে ইতিহাস রচনা করেছেন তা চির অম্লান থাকবে।
কনফারেন্সে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল মনছুর, জমিয়তুল মোদার্রেছীনের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. মোঃ ইদ্রিস, কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মোবাশ্বেরুল হক নাঈম, নানুপুর গাউছিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুসলেহ উদ্দীন মাদানী, গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজ ইংরেজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রমুখ। এতে বক্তব্য রাখেন আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম হানফি, আল্লামা মুফতি আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকি, আল্লামা মোহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা এমদাদুল হক মুনিরী, মাওলানা সেকান্দর আলী ও মাওলানা মুহাম্মদ ফোরকান।
কনফারেন্সে দেশবরেণ্য বহু ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ছাড়াও সর্বস্তরের লাখো সুন্নি জনতা উপস্থিত ছিলেন। কনফারেন্সে যোগদানের উদ্দেশ্যে গত কয়েকদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কাগতিয়া দরবারের অনুসারী ও ভক্তরা বাংলাদেশে আসতে থাকে। গতকাল সকাল থেকেই চট্টগ্রামের সব উপজেলা, কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া, ফেনী, কুমিল্লা, বি-বাড়িয়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান গাড়িযোগে লালদীঘি ময়দানে জড়ো শুরু করে। মাগরিবের আগেই কনফারেন্সস্থল লালদীঘি ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা জেল রোড, কেসিদে রোড, কোতোয়ালী মোড় এবং তৎসংলগ্ন উঁচু ভবনের ছাদ ও সড়ক জনসমুদ্রে রূপ নেয়। প্রতি বছরের মতো এবছরও মুনিরীয়া যুব তবলীগের গাউছুল আজম কনফারেন্সকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথ এবং বিভিন্ন উপজেলার প্রধান সড়কে তোরণ উত্তোলন করা হয়। মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন