প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, তবে অশুদ্ধ হবে সংবিধান। গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে কিছু জ্ঞানীগুনী লোক আছেন। যারা বলেন, দু-চার বছরের জন্য একটা অনির্বাচিত সরকার এলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। ২০০৭ সালে এসেছিল এমন সরকার আমরা দেখেছি। তখন কী হয়েছিল? জোড়াতালি দিয়ে দল গঠন করা হয়েছিল। অনির্বাচিত সরকার এলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না এটা ঠিক তবে অশুদ্ধ হবে সংবিধান।
সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ডিজিটাল যন্ত্রপাতিসহ আরো বেশি প্রযুক্তিগত সুবিধা নেওয়ার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন কেউ বই পড়তে চায় না। তাই হাঁটতে-চলতেও যাতে শুনতে পারে এমন অডিও বই করা উচিত, বইয়ের ডিজিটাল ভার্সন করা উচিত। অনলাইনে লাইব্রেরির সুবিধা নেওয়া যেতে পারে।
এর আগে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বেলা ৩টায় উপস্থিত হন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়াও তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দিন বইমেলায় আসতে পারিনি। স্কুলজীবন থেকে প্রতিবার বইমেলায় আসতাম। সারা দিন ঘুরঘুর করতাম। এখন তো (প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর) অনেক বিধিনিষেধ। দুই বছর তো সরাসরি আসতেও পারিনি। আজ দীর্ঘদিন পর এসে খুব ভালো লাগছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। এর ফলে আমাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব এসে গেছে। বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষার বিস্তার বাড়াতে হবে। এর জন্য আরো বেশি করে বিদেশী সাহিত্যের বই অনুবাদ করতে হবে। এখন বছরে একটা দুইটা এই অনুবাদ হয়। এই অনুবাদের পরিমাণ বাড়াতে হবে। মানসম্মত ইংরেজিতে, বিভিন্ন ভাষায় এই অনুবাদ হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাহিত্য মেলার আয়োজন করেন। জেলায় উপজেলায় বইমেলার আয়োজন করতে পারেন। দেশের তরুণদের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা এবং খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে যত বেশি সাহিত্যের দিকে আনতে পারব, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির দিকে আনা যাবে, তারা ততটা সৃজনশীল হবে। মাদক ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবে। এখন সবাই বই পড়তে চায় না, তাই অডিওর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদিও বই পড়ার তৃপ্তি আলাদা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি যতবার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছি, প্রতিটি ভাষণ বাংলায় দিয়েছি।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ আরো বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশেই বইমেলা হয়। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকেও যদি অংশগ্রহণ থাকে তাহলে ভাল হয়। আমাদের ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে যত বেশি মানুষ জানতে পারবে তত ভালো। আদালতে বাংলায় রায় দেওয়া শুরু হয়েছে। সব ক্ষেত্রে আমাদের এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। দেশের অর্থনৈতিক চিন্তার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চিন্তাও করা উচিত। ১৯৪৮-এ যে সংগ্রামের শুরু হয়েছিল, সেই ভাষার অধিকার থেকেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সুফল দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে, ভাষা সাহিত্যেরও উৎকর্ষ ঘটাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই সময়ে অর্থনীতিতে, সাহিত্য চর্চায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। রূপা চক্রবর্তী ও শাহাদাত হোসেন নিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, পুস্তক প্রকাশক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ছোটন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ ন‚রুল হুদা প্রমুখ। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও ভাষাপ্রেমী-বইপ্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ পান ১৫ জন। তারা হলেন কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্যে ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশবিজ্ঞানে মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী এবং ফোকলোরে পুরস্কার পেয়েছেন আবদুল খালেক ও মুহম্মদ আবদুল জলিল। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন