পুরো দক্ষিণাঞ্চল ইতোমধ্যে একটি ডায়রিয়া প্রবণ এলাকায় পরিণত হয়ে আছে। জানুয়ারী মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে আরো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার সহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গ্রহনকারীর সংখ্যা আরো কয়েকগুন। গত বছর এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতাল গুলোতে প্রায় ৭০ হাজার আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহন করলেও এর বাইরে আরো লক্ষাধিক ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন চিকিৎসক সহ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। একইভাবে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড়ে এখনো সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোর শিশু বিভাগ পরিপূর্ণ। প্রতিদিনই ৫০ থেকে ১শ রোগীও সরকারী হসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ নভেম্বর থেকে ২ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৪ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তির সংখ্যা আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।
অপরদিকে বিদায়ী বছরের শেষভাগে দক্ষিণাঞ্চল থেকে করোনা মহামারী অনেকটা দুরে সরে থাকালেও এখনো ৮২ ভাগের বেশী মানুষকে কোভিড-১৯ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। আর দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহনকারীর সংখ্যা ৭০%-এর মত। বুষ্টার ডোজ গ্রহন করেছেন ৩৪ ভাগেরও কম। মাস দেড়েক আগে করোনা প্রতিষেধকের ৪র্থ ডোজ শুরু হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজলায় মাত্র ৫৮ হাজার মানুষ এ টিকা গ্রহন করেছেন।
মূলত করোনার প্রকোপ হ্রাসের সাথে উদাশীনতা এবং জনসচেতনতা ও প্রচারনার অভাবেই দক্ষিণাঞ্চলে ভ্যাকসিন প্রয়োগের গতি ঝিমিয়ে আছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগেরই দায়িত্বশীল অনেক কর্মকর্তা। এলক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভব সব কিছু করা হচ্ছে বলেও দাবী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের।
এদিকে গত বছর যুড়ে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার চোখ রাঙানী অব্যাহত থাকার পরে এখনো পরিস্থিতির আশানুরূপ পরির্বতন হয়নি। তবে গত বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের প্রথম একমাসে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর খবর না থাকলেও তা নিয়ন্ত্রনে আসছে না। গত ৭ নভেম্বর থেকে ২ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা ও ৪২ উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১৩ হাজারেরও বেশী রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছে বলে জানা গেছে। এমনকি নতুন বছরের প্রথম মাস পেরিয়ে ফেব্রæয়ারীর ৩ দিনেও রোগীর কোন কমতি নেই বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখানে দেখা গেছে। অপরদিকে এ অঞ্চলে মার্চ থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির প্রবনতা লক্ষ্য করা গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ গত মাসে যথেষ্ঠ নিয়ন্ত্রনে এসছে। পূর্ববর্তি মাসে প্রতিদিন গড়ে যেখানে শতাধিক ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, সেখানে বিগত ডিসেম্বরের ৩১ দিনে রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ২২৭। জানুয়ারীতে তা ৫৪ জনে হ্রাস পেয়েছে। তবে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এখন দৈনিক হাসপাতালে আগত রোগীর সংখ্যা ৫-১০ জনের মধ্যে বলে জানা গেছে। যার বেশীরভাগই বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এদিকে প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮১ লাখ ২৬ হাজার ৬০৪ জন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহন করলেও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা ৭০ লাখ ২৮ হাজারের কিছু বেশী। আর বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা মাত্র ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ১১৮ জন। তবে সবচেয়ে করুন অবস্থা ৪র্থ ডোজ গ্রহনের ক্ষেত্রে। যে সংখ্যাটা এখনো ৬০ হাজারেও পৌছতে পারেনি। ৩ জানুয়ারী পর্যন্ত মাত্র ৫৬ হাজার ৭৩ জন ৪র্থ ডোজ গ্রহন করেছেন।
পাশাপশি ঠিক কত মানুষ এখনো করোনা ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে, তা বলতে না পারলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের ১ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ মানুষ এখনো করোনা ভ্যাকসিন গ্রহন করেন নি।
এদিকে এবার কয়েক দফার শৈত্য প্রবাহের ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব যথেষ্ঠ ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ১শ রোগী সরকারী হাসপাতালে আসছে। গত মাসেই ভোলায় দুই নিউমোনিয়া রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতমাসে দক্ষিনাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে শ^াসতন্ত্রের সংক্রমন সহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাই ৩ হাজারের ওপরে বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন