পৃথিবীর প্রতিটি জাতি তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যায়। যার মূল উদ্দেশ্য প্রাচীন যুগে যেসব লোকসংস্কৃতি ছিল তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির যেসব উপকরণ আমাদের জীবনে একসময় অপরিহার্য ছিল আজ তার কিছুটা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেচে। বিলুপ্ত হওয়া প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম কুপ বা কুয়া। যা এক সময় পানের জন্য সুপেয় পানি হিসেবে একমাত্র উৎস ছিল।
স্বচ্ছ আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য এক সময় মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল কূপ বা কুয়া। গ্রীষ্মের খরতাপে পুকুর খাল বিল শুকিয়ে গেলে কুয়া হয়ে উঠত একমাত্র ভরসা। প্রায় সব মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করত। কুয়ার পানিতে মানুষ তৃষ্ণা মিটাতো। এ পানি দিয়ে রান্না-বান্নার কাজ চালাতো। কিন্তু গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর গ্রামের বাড়ি-বাড়ি কুয়া দেখতে পাওয়া যায়না। এখন প্রতিটি বাড়িতে কুয়ার বদলে টিউবওয়েল পাওয়া যায়। আবার অনেক বাড়িতে বৈদ্যুতিক মিশিন দিয়ে পানি তুলা হয়।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনো অনেক বাড়িত কুয়া আছে মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করছেন। কিন্তু অনেকের বাড়িতে কুয়া আছে ব্যবহার করা হয় না। যে কটা আছে তাও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, এভাবে কুয়া রাখা নিরাপদ নয়, ছোট বাচ্চারা ভিতরে পড়ে যেতে পারে। আর এভাবেই স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কুয়া।
সরেজমিন উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হাছনবাহার,বৈঠাখাই, আলীপুর,টিলাগাও গ্রামের অনেক বাড়িতে গিয়ে অনেক পুরাতন কুয়া দেখতে পাওয়া যায়। অনেকের বাড়িতে কুয়া যত্নে রয়েছে। আবার অনেকের বাড়িতে কুয়া অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
সুরমা ইউনিয়নের হাছনবাহার গ্রামের অমৃত মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে বাবা কুয়াটি খনন করে ছিলেন। বাবা কুয়ার পানি খুবই ভাল পাইতেন। বাবার স্মৃতিটা ধরে রাখতে আমিও কুয়ার পানি ব্যবহার করি। বেশিদিন আগে নয়! প্রায় তিন যুগ আগে আবহমান বাংলার প্রতিটি গ্রামে পানির জন্য কূপ বা কুয়া ছিল। মানুষ কুয়ার পানি ব্যবহার করত। এ পানি দিয়ে তৃষ্ণা মিটাত, রান্না-বান্নার কাজ চালাত। এখন আর তা নাই। কোথাও আবার কুয়া ভরাট করে স্মৃতি চিহৃটুকু শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
একিই গ্রামের আব্দুল আলী ইনকিলাবকে বলেন, এক কালে কুয়ার পানি ব্যবহারের জন্য খুবই উপযোগী ছিল। গরমের সময় খাবার ও গোসলের জন্য খুবই স্বস্তি দায়ক কুয়ার পানি। কুয়ার পানি দিয়ে গোসল করলে খুবই আরাম পাওয়া যায়। পানি খুবই ঠান্ডা থাকে। । তাছাড়া কুয়ার পানি পানের জন্য নিরাপদ। স্বচ্ছ ঝকঝকে টলমল পানি। মুখ ডাকা থাকলে পানি পরিস্কার থাকে। যতদিন এ পৃথিবীতে বেচে থাকবো ততদিন ইতিহাস ঐতিহ্যের কুয়ার সুস্বাদু স্বচ্ছ পানি ব্যবহার করে যাবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন