শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

তসলিমার হিপ রিপ্লেসমেন্ট : ভুল চিকিৎসা? নাকি অন্যকিছু?

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আবার খবরে এসেছেন তসলিমা নাসরিন। তাকে নিয়ে আমার লেখার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এবার তিনি ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এমন তীব্র সমালোচনা করেছেন যে, তাকে নিয়ে লিখতেই হলো। আরেকটি কারণ হলো, তসলিমা নিজেই বলেছেন যে, একজন বাংলাদেশি মুসলমান হওয়ার কারণে তাকে একটি ভারতীয় প্রাইভেট হসপিটালের কাছে লাখ লাখ টাকা অনাবশ্যকভাবে গুনতে হলো।

যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়মিত ভিজিট করেন অথবা লেখালেখি করেন তারা দেখেছেন যে, ভারতের ভুল চিকিৎসা, এই অভিযোগে তসলিমা নাসরিন একের পর এক তার ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। ঐসব স্ট্যাটাসে তিনি যেসব অভিযোগ করেছেন তার ওপর মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক আফসান চৌধুরী এবং চিকিৎসক ও টেলিভিশন উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার।

তসলিমা নাসরিনকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। আজ থেকে অন্তত ২৫/২৬ বছর আগে যখন তসলিমা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন তখন ক্রমাগত তিনি পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি লিখে যাচ্ছিলেন। এছাড়া তার লেখায় ছিল চরম অশ্লীলতা। তার ইসলাম বিরোধিতা এবং পর্ণগ্রাফির মতো অশ্লীলতার বিরুদ্ধে দৈনিক ইনকিলাব এবং তার সিস্টার সাপ্তাহিক অধুনালুপ্ত ‘পূর্ণিমায়’ একাধিক কলাম ও নিবন্ধ লিখে তাকে এক্সপোজ করা হয়। তার অশ্লীলতার কারণে সমাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ইসলাম বিরোধিতার কারণে খাঁটি মুসলমানরা এমন প্রতিবাদ করতে পারেন যার ফলে সামাজিক শান্তি বিনষ্ট হতে পারে, এই আশঙ্কায় তৎকালীন বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে দেয়। বিএনপি সরকার ক্ষমতা থেকে সরে গেলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তখন তসলিমা নিজেই লিখেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু সেই গুড়েও বালি। এপর্যন্ত ৪টি মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। কিন্তু অনেক অনুনয় বিনয় করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার তাকে দেশে ফেরত আনেনি। সরকার মনে করেছে যে, তসলিমা নাসরিন একটি আপদ। এই আপদকে দেশে আনলে বিপদ ঘটাবে।

ভারত সরকার তাকে ঠাঁই দিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা তার বিরুদ্ধে মারমুখো হয়ে উঠলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে দিল্লিতে আশ্রয় দেয়। সে দিল্লিতে সরকারি পুলিশ প্রোটেকশনে আছে। কিন্তু দিল্লি সরকারও তার নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম ধাম ঠিকানা ইত্যাদি কিছুই প্রকাশ করছে না। কারণ, দিল্লির মুসলমানরাও ইসলাম বিরোধিতার কারণে তার ওপর ক্ষিপ্ত।

এমন একটি পটভূমিকায় প্রথম জার্মান টেলিভিশন ‘ডয়েচে ভ্যালের’ সংবাদ থেকে জানা যায় যে, তসলিমা নাসরিন একটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগে বলা হয় যে, দিল্লির চিকিৎসকরা তার ভুল চিকিৎসা করেছেন। এই ভুল চিকিৎসার কারণে অকারণে তার হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি করা হয়েছে। এর ফলে সারা জীবনের মতো তিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন যে, হিপ রিপ্লেসমেন্টের ফলে কেউ পঙ্গু হয়ে যায় না। এই সার্জারি যদি সফল হয় তাহলে পেশেন্ট আবার হাঁটাচলা করতে পারেন।

ডয়েচে ভ্যালের ঐ খবরে প্রকাশ, তসলিমা নাসরিন তার বাসায় ঢিলে ঢালা পাজামা এবং চপ্পল পরেছিলেন। ঘরের মধ্যে হাঁটার এক পর্যায়ে তার পাজামার সাথে চপ্পল আটকে যায় এবং তিনি পড়ে যান। এরপর তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরামর্শ নিতে যান। সেখানে তার এক্স-রে হয়। এক্স-রে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত সার্জারি করার পরামর্শ দেন। তাকে এমনও নাকি বলা হয় যে, দ্রুত অপারেশন না হলে তার গ্যাংরিন হয়ে যেতে পারে। এরপর কনসেন্ট ফর্মে তাকে সই করতে বলা হয়। সই করার পর তার হিপ রিপ্লেস করা হয়। রিপ্লেসমেন্টের পর তসলিমা একের পর এক সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিতে থাকেন। বলেন যে, ভুল চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

॥দুই॥
তার সাম্প্রতিকতম পোস্টে তসলিমা লিখেছেন, তিনি নিজে চিকিৎসাবিজ্ঞান জানেন। এতদিন পর তিনি নিজের এক্স-রে প্লেট দেখেছেন। এক্স-রে প্লেট থেকে স্পষ্ট, চিকিৎসকেরা ভুল অপারেশন করেছেন। হিপ রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির কোনো প্রয়োজনই ছিল না তার। এরপরই চিকিৎসকদের দোষ দিয়ে তসলিমা লিখেছেন, তার সঙ্গে একজন বাংলাদেশি মুসলিম রোগীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবেই বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয় দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে। তসলিমার ঘনিষ্ঠজনেরা আরও জানিয়েছেন, এক্স-রে রিপোর্টে যা ধরা পড়েছে, তা সহজেই সারিয়ে তোলা যায়। তার জন্য এত বড় সার্জারির কোনো প্রয়োজন হয় না। তবে এক্স-রেতে সামান্য ফ্র্যাক্চার ছিল বলে তিনি ডয়চে ভ্যালেকে জানিয়েছেন।

এদিকে যে হাসপাতাল এবং চিকিৎসকেদের বিরুদ্ধে তসলিমার অভিযোগ, তাদের অবশ্য দাবি, তসলিমার ভুল চিকিৎসা হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তসলিমাকে জানিয়েই এই অপারেশন করা হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন। তসলিমা কনসেন্ট ফর্মে সই করেছেন বলে তাদের দাবি। ওই ফর্মে সই না করলে এই অপারেশন করা হতো না। দিল্লিতে বিশেষ সুরক্ষা পান তসলিমা। সে কারণেই তার ঠিকানা গোপন রাখতে হয়। তিনি কোন হাসপাতালে ভর্তি তা-ও গোপন রাখতে বলা হয়েছে। তসলিমা নিজেও হাসপাতালের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, সেখানে তার ঘরের বাইরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তসলিমা নাসরিনের এসব অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক আফসান চৌধুরী। তিনি বলছেন, তার প্রকৃত সমস্যাকে বাদ দিয়ে তারা (ডাক্তারগণ) তার অস্ত্রপাচার করে। তিনি আঘাত পেয়েছিলেন পড়ে গিয়ে তার হাঁটুতে। কিন্তু সেটা না সেরে তারা তার কোমরের হাড় কেটে বাদ দেয়, যাতে কিনা তার এই পঙ্গুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করছেন যে, নিজে চিকিৎসক হয়ে কেন তিনি তার এক্স-রে রিপোর্টটা দেখলেন না ভালো করে। এই অপারেশনের তার দরকার ছিল না।

তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘সবচেয়ে হাস্যকর জিনিস, ইমারজেন্সিতে গিয়ে আমি যা বলেছি, আমার হাঁটুর ব্যথার কথা, সেটি সম্পূর্ণ ডিলিট করে দিয়ে ডিসচার্জের সময় নতুন করে হিস্ট্রি লিখে দিয়েছে, যেখানে হাঁটু শব্দটিই নেই, আছে হিপ হিপ হিপ। আমি নাকি হিপ জয়েন্টের যন্ত্রণায় কাতরেছি, আমার হিপ জয়েন্ট নাকি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বাহ, কী সুন্দর হিস্ট্রি পাল্টে দেওয়া হলো। মূল হিস্ট্রি গায়েব।’

তবে তার একটি লেখায় মানুষ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন। আফসান চৌধুরী তসলিমাকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘আমাকে বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে দেখা হয়েছে। যার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে অপারেশন করা হবে। সেই নিরীহ রোগী দেশে ফিরে যাবে এবং ভেবে সুখ পাবে যে তার ট্রিটমেন্ট হয়েছে।’ এই অংশটি একটু ধাক্কা দিয়েছে। কারণ, ভারতে যে এই বৈষম্য আছে এটা যারা যায় কেউ বলে না তেমন। তিনি কি আগে কখনো বলেছেন? আমি তার লেখার সাথে অপরিচিত তাই বলতে পারবো না, তবে এটা জানা গেল যে, বাংলাদেশি মুসলমানরা সেখানে অসহায় রোগী হিসেবে থাকে। যারা সেখানে প্রচুর টাকা খরচ করে কিন্তু যা প্রাপ্য তা পায় না। বাঙালি হিন্দুদের বেলাতেও এটা প্রযোজ্য নিশ্চয়। অর্থাৎ বাংলাদেশিরা ইন্ডিয়ান মেডিকেল দুনিয়ার হাতে টাকা বানানোর সুযোগ দেয় চিকিৎসার না, তার কথা ধরলে।

॥তিন॥
আফসান চৌধুরী আরো লিখেছেন, ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠবে ভাবা যায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশি মুসলমান রয়ে গেলেন তাদের চোখে, তার কথামতে। যারা অবস্থাপন্ন তারা এখন সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক যায়, তারপর যারা তাদের গন্তব্যই ইন্ডিয়া। আর নিচের দিকে থাকে বাংলাদেশ। বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির আশা ভরসার জায়গা ইন্ডিয়া। কিন্তু সেটাও চিড় ধরছে। এই সংবাদ স্বস্তির নয়।

কিন্তু টেলিভিশন উপস্থাপক এবং চিকিৎসক আব্দুন নূর তুষার মেডিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, তসলিমা ভুল বা ইচ্ছাকৃত অতিচিকিৎসার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ঘটনা ভারতে। তিনি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলে তাকে ডাক্তার ফিমার ফ্র্যাকচার হয়েছে এই কথা বলে হিপ রিপ্লেস করে দিয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, এটা দরকার ছিল না। তিনি নাকি নিজের এক্সরেটাও সার্জারির আগে দেখেন নাই। এখন দেখে বুঝতে পেরেছেন তার কোনো রকম সার্জারির দরকার ছিল না। এবারো তষ্কর য পলায়তি। বুদ্ধি ত আগমতি। এরপর ড. তুষার কতগুলো প্রশ্ন করেছেন। প্রশ্নগুলি নি¤œরূপ:

(১) তিনি কি সার্জারির আগে অনুমতিপত্র বা কনসেন্ট ফর্মে সই করেন নাই? কী দেখে করলেন?
(২) হিপ কি হাসপাতালে মজুত থাকে। টাকা ছাড়াই আগে লাগিয়ে দেয় আর পরে টাকা নেয়? মোটেও না। হিপ কিনে এনে দিতে হয়। টাকা আগে না দিলে এটা প্যাকেট থেকে বেরই করবে না। উনি তাহলে না জেনেই ও অনিচ্ছাকৃতভাবে টাকা দিলেন?
(৩) ফেসবুকের পাশাপাশি উনি আইনি লড়াই কেন করছেন না?
(৪) একজন ডাক্তার কী করে নিজের বিষয়ে একটা এক্স-রে পর্যন্ত না দেখে একটা সার্জারি করতে দেন?
(৫) লিখেছে বাংলাদেশের রোগী। একথা বলে তিনি কী বোঝালেন যে ভারতীয় ডাক্তাররা বাংলাদেশের রোগীদের এভাবেই চোষে ও ভুলভাল কাজ করে অতিরিক্ত বিল নেয়? নাকি উনি নিজেই বাংলাদেশের বহু বুদ্ধু রোগীর মতো ভারতের ডাক্তারদের ওপর অন্ধবিশ্বাসে; কিছু না দেখেই সার্জারিতে রাজী হয়ে গেলেন?
(৬) এই ঘটনার তদন্ত করে হাসপাতালের ও ডাক্তারের দোষ থাকলে সেটার বিচার দরকার। সমস্যা হলো তসলিমা হাসপাতাল ও ডাক্তার কারো নাম বলেন নাই। অন্য সকল ক্ষেত্রে তিনি নাম বলে দিলেও এখানে নাম না বলার কারণ কী?
এই ডাক্তারকে আমাদের দূতাবাসের লোকজন দিয়ে খুঁজে বের করে দেখা উচিত; তসলিমার প্রতি এই আচরণের কারণ কী? তবে হিপ রিপ্লেস করলে কেউ পঙ্গু হয় না। এটা একটি ভুল তথ্য দিয়েছেন তসলিমা।

॥চার॥
মেডিক্যাল সায়েন্সে বলা হয়, একটি মানুষের হিপ তখনই রিপ্লেস করতে হয় যখন তার
(১) যদি জয়েন্ট রোগের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি সমস্ত শল্য চিকিৎসা ব্যর্থ হয়।
(২) যখন জয়েন্ট পেইন কোনও রকম ব্যথার ওষুধে সারানো যায় না।
(৩) যখন জয়েন্ট রোগের কারণে মুভমেন্ট করা সম্ভব হয় না, যখন এক পাও হাঁটা যায় না।
(৪) যখন জয়েন্ট সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে ক্ষয় হয়ে শেষ পর্যায়ে চলে আসে।
(৫) যখন জয়েন্টের তীব্র যন্ত্রণায় মানুষ কোনও কোনও কাজ করতে পারে না, ঘুমোতে পারে না।
(৬) যখন নানা রকম আর্থ্রাইটিস রোগে জয়েন্ট বাতিল হয়ে যায়।
(৭) যখন জয়েন্টে টিউমার হয় বা ক্যানসার হয়।
প্রিয় পাঠক, তসলিমার হিপ রিপ্লেসমেন্ট বিষয়ক জটিলতা নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করবো না। তবে ডাক্তাররা যা বলেছেন তার সাথে তসলিমার বক্তব্য সমূহ পাশাপাশি মিলিয়ে দেখুন। তাহলেই আপনারা নিজেরাই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। না জেনে না শুনে কথা বলাটা এই মহিলার মজ্জাগত স্বভাব। তিনি লিখেছেন, ‘সূর্য নাকি পৃথিবীর চার দিকে ঘোরে’। এই কথা নাকি পবিত্র কোরআন শরীফে লেখা আছে। একজন গন্ডমূর্খ ছাড়া কেউ বলবে না যে কোরআন শরীফে এই কথা লেখা আছে। সুতরাং তার হিপ রিপ্লেসমেন্ট অভিযোগকেও এসব আলোকেই বিচার করতে হবে।

Email: journalist15@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন