পোশাক শিল্পের শত শত কোটি টাকার রফতানিযোগ্য পণ্য কাভার্ডভ্যান থেকে চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে এসব তৈরি পোশাক পণ্য চুরি হয়েছে। একটি চোর চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করছি- বাকিদের গ্রেফতার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সঙ্গে কাভার্ড ভ্যান থেকে রফতানির পোশাক চুরি ঠেকাতে মার্চের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা চালুসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিজিএমইএ।
গতকাল পোশাক শিল্পে আইনশৃঙ্খলাজনিত বিষয় নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় পোশাক শিল্প উদ্যোক্তা, বিজিএমইএ পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক পণ্য চুরির বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায় দফায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সর্বশেষ র্যাব গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরির একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এজন্য বিজিএমইএ পরিবারের পক্ষ থেকে র্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি- দ্রুত এ চক্রের অন্যান্য অপরাধীদেরও গ্রেফতার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে পোশাক শিল্প। গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকের কল্যাণ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প নির্মাণে পরিশ্রম করেছি, বিনিয়োগ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি, তা সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, শিল্পের সফলতাগুলো ম্লান হয়ে যায়, যখন ক্রেতারা পণ্য হাতে নেয়ার পর আমাদের জানান- রফতানি মালামালের পরিবর্তে অন্য জিনিস রয়েছে। প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই হাজারেরও বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত কোটির পণ্য চুরি হয়েছে।
ফারুক হাসান বলেন, গত জানুয়ারির শুরুতে ব্রাজিল থেকে এক ক্রেতা ভিডিওতে জানান, বেশিরভাগ কার্টনে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এমনকি কিছু কর্তন খালি ছিল। ওই শিপমেন্টে ২০ হাজারের বেশি পোশাক ছিল। প্রায় আট হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়েছে। এ ঘটনা জানানো হলে র্যাব এ চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার ও পণ্য চুরি হওয়া কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করে। গ্রেফতার চোর চক্রের প্রধান হোতা শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭ থেকে ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে।
তিনি বলেন, ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছেন- ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করে। যদি পণ্যের মূল্য ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। আমরা অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি যে, শাহেদের মতো একজন চোর কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। একই সঙ্গে বছরের পর বছর বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে। প্রায় বিরামহীনভাবে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শাহেদ এই অপরাধ করতে পেরেছেন। দুই বছর আগে বন্দর নগরীতে করা ছয়টি মামলার আট মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই জামিন পাওয়ার পর তিনি পুরোনো পেশায় ফিরে যান। এই ধরনের অপরাধীরা কীভাবে এত সহজে জামিন পান সেটি আমাদের প্রশ্ন। এতে করে তারা পরবর্তীসময়ে আরও গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করে না।
শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে আরও মাস্টারমাইন্ড ও চক্র রয়েছে। তারা ধরা পড়লেও প্রায়ই কোনো শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছেন। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তাই মহাসড়কে পোশাক চুরি রোধে ৫টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিজিএমইএ। সেগুলো হলোÑ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করা, এ ধরনের কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, কতিপয় নামসর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল কিনে স্টকলট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। স্টকলট রফতানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রফতানির অনুমোদন দেয়া, চোরচক্রকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগানো এবং কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ডভ্যান চালক ও হেলপারদের ডেটাবেজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে সেই তথ্য হস্তান্তর করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন