মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাল সনদ নিয়ে শিক্ষকতার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক আমিনুলের আইসিটি সনদ সঠিক কিনা জানতে চেয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য শামীম মোড়ল গত ১৩ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ইউএনও মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মো. মোর্তজা আহসান বিদ্যালয়ে তদন্ত করতে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম তাঁর আইসিটি সনদ সঠিক বলে দাবি করেন। তবে ইতিপূর্বে জাল সনদ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় ৪/৫ মাস বেতন বন্ধ ছিল বলে স্বীকার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমিনুল ইসলাম বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (কেরানি) হিসেবে বিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি তাঁকে আইসিটি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল পরিপত্র জারির মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান, আইসিটির জাল সনদ নিয়ে শিক্ষক হয়েছেন আমিনুল ইসলাম। চাকরি থেকে অবসরের পর সুবিধা নেওয়ার জন্য জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েছেন আমিনুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবাই জানা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
অভিযোগকারী বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি মো. শামীম মোড়ল বলেন, শুনেছি আমিনুল ইসলাম জাল সনদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। পরে আমরা তার কাছে সনদ দেখতে চাইলে তিনি কমিটির কাউকে তাঁর সনদ দেখাতে বাধ্য নন বলে জানান। শামীম মোড়ল আরও জানান, শিক্ষক আমিনুলের সনদ জাল কিনা জানতে চেয়ে ও সনদ জাল হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনও বরাবর আবেদন করা হয়।
বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক মো. হোসেন খসরুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমিনুল ইসলামের শিক্ষকতা করার যোগ্যতা সনদ বিদ্যালয়ের কোনো নথিতে নেই।
অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের কাছে তার সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে সনদ রয়েছে বলে জানান। সনদ দেখতে চাইলে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বিদ্যালয়ে এসে দেখে যেতে বলেন। তিনি আরও জানান, একটি মহল তাঁর সনদ নিয়ে মিথ্যাচার করছে।
সম্প্রতি একদল সাংবাদিক বিদ্যালয়ে গেলে অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে গা ঢাকা দেন। এর পরে তাঁকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করেননি। প্রধান শিক্ষকও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মো. মোর্তজা আহসান বলেন, শিক্ষক আমিনুলের আইসিটির সনদ জাল কিনা সে বিষয়ে তদন্ত বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে এসেছি। সনদ জাল হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল আউয়াল বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্তে গিয়েছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আগামী রবিবারের মধ্যে আইসিটির মূল সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলেছি।
তিনি আরও বলেন, তদন্তে জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন