শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

অবৈধদের দাপটে অসহায় বৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৪৬ পিএম | আপডেট : ৮:৫৮ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

অবৈধদের দাপটে অসহায় বৈধ আইএসপি (ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) ব্যবসায়ীরা। দেশে চারটি ক্যাটাগরিতে বৈধ আইএসপি’র সংখ্যা ২ হাজার ৮৪৯। আর লাইসেন্সবিহীন বা অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। অবৈধরা শুধু সংখ্যায় বেশী নয়, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পেশী শক্তিও বেশী। ফলে বৈধ ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়মিত কর দিয়েও ব্যবসার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর অবৈধরা সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকিয়ে দিয়েও রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ‘স্মার্ট কানেকটিভি ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ সেমিনারে বৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন। সেমিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, অবৈধ ব্যবসায়ীরা বৈধ কোন আইএসপি’র কাছ থেকেই ব্যান্ডউইথ কিনছে। কারা বৈধ লাইসেন্স নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করছে তা খুঁজে বের করা দরকার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আগামী দিনের প্রযুক্তির বিপদ সম্পর্কে এখন থেকেই সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল প্লাটফরম নিশ্চিত না করা গেলে স্মার্ট বাংলাদেশ ব্যুমেরাং হবে।

টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেসন্স) হায়দার আলী খান, ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক, মহাসচিব নাজমুল করিম ভুঁইয়া, মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, টিআরএনবি’র সাবেক সভাপতি ও নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল এবং বৈধ লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী তিন ব্যবসায়ী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব ও ফরেন চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্সের নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির। স্বাগত বক্তব্য দেন টিআরএনবি’র সাধারন সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।

সেমিনারে আশুলিয়া থেকে আসা তিন জন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বৈধ ব্যবসা করতে গিয়ে অবৈধদের হাতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হওয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। আশুলিয়া থেকে আসা একজন ব্যবসায়ী জানান, আশুলিয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ছেলে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সব মালামাল নিয়ে চলে গেছে। তিনি স্থানীয় থানা এবং বিটিআরসিতে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু প্রতিকার পাননি। অপর একজন ব্যবসায়ী বলেন, তিনি থানা পর্যায়ে লাইসেন্স নিয়েছেন। তার থানা এলাকা এখন ভেঙ্গে দু’টি থানা হয়ে গেছে। ফলে তার বিনিয়োগের অর্ধেকই এখন হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি সক্ষমতার ভিত্তিতে থানা পর্যায়ের লাইসেন্সধারীদের জেলা পর্যায়ে ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি’র মহাসচিব জানান, চার ক্যাটাগরিতে বৈধ লাইসেন্সধারীদের সংখ্যা ২ হাজার ৮৪৯। কিন্তু লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তারা পেশীশক্তির অধিকারী এবং অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তাদের দাপটে বৈধ ব্যবসায়ীরা এখন অসহায়। আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, বৈধ ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়মিত কর দেয়, লাইসেন্স নবায়ন ফি দেয়। কিন্তু অবৈধ ব্যবসায়ীরা কিছুই দেয় না। ফলে অবৈধদের দাপটের কারনে শুধুমাত্র বৈধ ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখেই পড়ছে না, বরং সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তিনি জানান, মূলত কেবল টিভির সংযোগের ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরাই এখন অবৈধভাবে ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে। তিনি বৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অ্যাকটিভ শেয়ারিং ব্যবস্থা চালুর জন্য বিটিআরসি’র প্রতি আহবান জানান।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি(অপারেসন্স) হায়দার আলী খান বলেন, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স প্রযুক্তি আসলে বড় বিপদও আসতে পারে। রোবট আপনার ঘরের জানালা ভেঙ্গে মাথার কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে সর্বস্ব লুটে নিতে পারবে। ড্রোন রোবট উপর থেকে আপনার উপর গুলি চালানোর মত হামলা করতে পারে। অনলাইনে আপনার ছবি বিকৃত করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে ভার্চুয়াল রোবট। অতএব ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তির স্মার্ট উদ্ভাবনের পাশাপাশি স্মার্ট বিপদ সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে।

বিটিআরসি’র মহাপরিচালক (এস এস) ব্রিগেডিয়ার নাসিম পারভেজ বলেন, এক সময় বলা হত ইন্টারনেট সেবার জন্য একক মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। কিন্তু সেবা বাস্তবে সম্ভব হয়েছে। ‘এক দেশ এক রেট’ চালু হয়েছে এবং সেটা সবাই মেনেও নিয়েছে। তাহলে কোন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধাগুলো দূর করা যাবে না। অবশ্যই এসব বাধা দূর করে স্মার্ট ও নিরাপদ কানেকটিভিটি গড়ে তুলতে হবে। কারন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূল ভিত্তিই হবে স্মার্ট কানকেটিভিটি।

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসি’র কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সবগুলো সেবাদতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শর্ত হচ্ছে কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করা। যদি কোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেটা না করে তাহলে আইন ও বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্মার্ট কানেকটভিটির জন্য কোয়লিটি অব সার্ভিস সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে রেগুলেটর হিসেবে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকেও সাধারণ গ্রাহক এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সহজে সঠিক সেবা পায় সেজন্যও বিটিআরসি সচেষ্ট।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, অবৈধভাবে যারা ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার ব্যবসা করছে তারা কিন্তু ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে জাতীয়ভাবে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোন বৈধ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই। কোন কোন বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান অবৈধ ব্যবসায়ীদের ব্যান্ডউইথ দিচ্ছে তা চিহ্নিত হওয়া জরুরী। এক্ষেত্রে আইএসপিএবি নেতাদেরও দায়িত্ব আছে। তিনি আরও বলেন, যাকে যে ক্যাটাগরিতে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেই ক্যাটাগরির সীমার মধ্যেই সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।

শক্তিশালী ‘ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার পাশাপাশি পাশাপাশি আগামীদিনের স্মার্ট প্রযুক্তির বিপদের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যায় চলছে, যেখানে প্রতিদিন অনলাইনে জুয়া বসে, ম্যাসেঞ্জার, হোয়টসআপ ব্যবহার করে হ্যারাজমেন্ট করা হয়; সেখানে সাধারন ব্যবহারকারীরা একপর্যায়ের অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিকর কনটেন্ট ফিল্টারের কোন প্রযুক্তি গত ৫ বছরে দুনিয়া ঘুরেও কোথাও খুঁজে পাইনি। এই অবস্থাটা আগামীতে আরো ভংঙ্কর হবে। সেটা মোকাবেলা করতে হবে। আসলে স্মার্ট বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ হবে নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে স্মার্ট বাংলাদেশ বুমেরাং হয়ে আমার মাথার ওপর ভেঙে পড়বে। সুতরাং সবাইকে এখন থেকেই সচেতন সতর্ক থাকতে হবে। কেননা যত বেশি স্মার্ট প্রযুক্তি আসবে তত বেশি আপদ-বিপদ আসবে। তাই আইএসপিএবিকেও সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যেগ নিতে হবে। সরকারও এই কাজে সহযোগিতা করবে। গণমাধ্যমের ভূমিকাও জরুরি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন