খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সরকার ভোট কারচুপি করে দিনের ভোট রাতে করে ক্ষতায় এসেছে। দুর্নীতি-লুটপাট করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ধ্বংসের চক্রান্তে নেমেছে। নতুন শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রমকে জাতি প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারকে অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খেলাফত মজলিস আয়োজিত এক গণ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যতদিন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস মূল্যবোধ, সংস্কৃতি প্রতিস্থাপিত না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
উক্ত গণসমাবেশে চলমান আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবীনামা পেশ ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদের। পেশকৃত দাবীসমূহ হচ্ছে, ধর্মীয় শিক্ষা সঙ্কোচন নীতি বন্ধ ও দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনে সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা, গ্রেফতারকৃত আলেম উলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করা, পণ্যমূল্য কমিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব ও দুর্নীতি নির্মূল করা, বেকার সমস্যা সমাধান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দান করা। এ সব দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ড. আহমদ আবদুল কাদের ৬ মাস ব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচি হচ্ছে, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা মহানগরী পর্যায়ে বিক্ষোভ, আগামী ২৯ এপ্রিল উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন,গণসমাবেশ, আগামী ২৭ মে ও ২৪ জুন দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ, পবিত্র রমজান মাসে তথা আগামী ১ এপ্রিল ৮ দফার উপর আলেম বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ড: মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল ও অধ্যাপক আবদুল জলিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত গণ-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, মুফতী শিহাবুদ্দিন, ডা: শরীফ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকার, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী, শ্রমিক মজলিস সভাপতি হাজী নূর হোসেন। পরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঃ এদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি ও মাদকাসক্তি দূরীকরণ এবং আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোরআন ও সুন্নাহর সহীহ দীক্ষা পেলে সমাজে কোন মানুষ খুন বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে না। ইতিহাস সাক্ষী আল্লাহ প্রদত্ত কোরআনী শিক্ষাব্যবস্থা যা মুহাম্মদ (সা.) কে দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তা প্রয়োগে তিনি আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের বর্বর জাতিকে সোনালী জাতিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে খেলাফত আন্দোলন ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি সফল করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। আজ বিকেলে কামরাঙ্গীরচরে খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সন্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র নেতা মুরসালীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সন্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মুফতি ইলিয়াস মাদারীপুরী, মুফাসসীর হুসাইন, মাওলানা আমানুল্লাহ বসন্তপুরী, মুফতি আবুল হাসান কাসেমী, মুফতি আব্দুল্লাহ কাসেমী, মুফতি আব্দুর রাজ্জাক মুফতি শফি উদ্দিন জিহাদি, ছাত্র নেতা মাওলানা জাকির বিল্লাহ, মো. জাকির হোসেন সাহিন আলম।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ঃ বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকীব এক আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আদর্শ সমাজ গঠনে প্রাইমারী স্তর থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেননা ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া আদর্শ সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। তাই মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারকেই ইসলামি শিক্ষা সর্ম্পসারণের লক্ষে কাজ করতে হবে। তিনি পাঠ্য পুস্তকে যারা নাস্তিক্যবাদী ইসলাম বিরোধী বিষয়গুলো যুক্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেছেন, শিক্ষা সিলেবাসের মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির জন্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দিপু মনির অপসারণ করা প্রয়োজন। সিলেবাস থেকে কেবলমাত্র দুইটি বই বাতিল করলেই এর সমাধান হয়ে গেল, এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। দিপু মনি এতদিন পর্যন্তÍ ওলামায় কেরামের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করে আসছেন। এখন বই বাতিল হলো কেন? এজন্য পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে যত খরচ হয়েছে, দিপু মনিকে জরিমানা দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় জনতার আন্দোলন চলবেই।
আজ বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগের ঢাকা ট্যানারী মোড়ের আইএবি মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের হাজারীবাগ থানা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। হাজারীবাগ থানা সভাপতি হাজী মু. আব্দুল হাই পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মু. আবু হানিফের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত থানা সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুল আউয়াল মজুমদার, ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত, মুফতী আব্দুল আহাদ।
ফুলতলীর কৃতজ্ঞতা ঃ নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিতর্কিত দুটি পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার ও তিনটি পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনের ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামের আলোকে প্রণীত প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও আপত্তিকর নানা বিষয় রয়েছে। কারিকুলামের মধ্যেও রয়েছে বহু অসঙ্গতি। এসকল বিষয় নিয়ে আমরা গত ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী’র সাথে সাক্ষাত করলে তিনি পাঠ্যপুস্তকের আপত্তিকর বিষয়সমূহ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস প্রদান করেন। গতকাল এনসিটিবি বিতর্কিত দুটি বই প্রত্যাহার এবং তিনটি বই সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিবৃতিতে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, মাদরাসার মূল বিষয়সমূহ (কোরআন, হাদীস, আরবী প্রথম পত্র, আরবী দ্বিতীয় পত্র এবং আকাইদ ও ফিকহ) ঠিক রেখে সাধারণ বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে মাদরাসার জন্য ১০টি বিষয়ে ১০০০নম্বর নির্ধারণ এবং বিতর্কিত অন্যান্য বই ও পাঠসমূহ প্রত্যাহারের পাশাপাশি সকল বই থেকে বিবর্তনবাদসহ কোরআন-সুন্নাহবিরোধী ও আপত্তিকর বিষয়সমূহ বাদ দিয়ে যথাদ্রুত তা সংশোধনের আহবান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন