শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

অবশেষে বিতর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত ও ভুলে ভরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুষন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিভি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে, যা শিঘ্রই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এনসিটিবি’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘দুটি বইয়ের পাঠদান প্রত্যাহার করা মানে, দুটি বই কার্যত বাতিল করে দেয়া হলো। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বইগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে আনা হবে। পরবর্তীতে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ জানুয়ারিতে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণের পর থেকেই উল্লেখিত দুটি পাঠ্যপুস্তকে অত্যন্ত আপত্তিকর ও বিতর্কিত বিষয় যুক্ত করা নিয়ে দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। ডারউইনের বিতর্কিত বিবর্তনবাদ, গুগল থেকে চুরি করে ভুল অনুবাদ যুক্ত করা, আধুনিকতার নামে উলঙ্গ ও অর্ধ উলঙ্গ মুর্তির ছবি, হাজার বছরের মুসলমান শাসন ব্যবস্থা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও কবি-সাহিত্যিকদের অবদান উপেক্ষা করে হিন্দুদের বড় করে দেখানোসহ নানা বিতর্কিত বিষয় যুক্ত করে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করার পর কিছু ভারতের অনুগামী ব্যক্তি ছাড়া দেশের আলেম-ওলামা, অভিভাবক শ্রেণী, ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও পাঠ্যপুস্তক দুটি বাতিলে সোচ্চার হয়ে ওঠে। মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারিদের সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন জতিয়াতুল মোদার্রেছীন এর প্রতিবাদে সোচ্চার ও দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন ইসলামী দল, বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের আলেম-ওলামা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ এবং পাঠ্যপুস্তক দুটি অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানায়। এই প্রতিবাদ ও দাবীর মুখে সরকার পাঠ্যপুস্তক দুটি বাতিল করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শীতা দিয়ে ভূমিকা রেখেছেন বলেই তা বাতিল করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অকুণ্ঠচিত্তে অভিনন্দন জানাই।

পাঠ্যপুস্তক দুটি নিয়ে যখন তীব্র সমালোচনা, আন্দোলন, ক্ষোভ প্রকাশ ও বাতিলের দাবী করা হয়, তখন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপুমনি ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে’, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা গুজব ছড়াচ্ছে’ ‘গুজবে কান দেবেন না’ ইত্যাদি বক্তব্য দিয়ে সাফাই গেয়েছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার চাঁদপুরের হাইমচরে এক উঠোন বৈঠকে পাঠ্যপুস্তক বাতিলের কথা বলতে গিয়েও বলেছেন, বইয়ে ইসলামবিদ্বেষী কিছু নেই। অথচ পাঠ্যপুস্তক দুটি সকলেই দেখেছে এবং দেখেই তারা একমত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবি এবং জনমত গড়ে উঠেছে। এতে যদি শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, বিতর্কিত কোনো কিছু না থাকত, তাহলে পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবি উঠত না। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী আমলে না নিয়ে নিজের গোয়ার্তুমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। পর্যবেক্ষকরা তার এই গোয়ার্তুমির কারণ হিসেবে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ভারতে মোদির হিন্দুত্ববাদী ভাবধারায় দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলার প্রতি কমিটেড ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ভারতে মোদি সরকার যেমন দেশটির মাটি থেকে মুসলমান শাসনামলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নাম-নিশানা মুছে ফেলে হিন্দুদের জয়গান তুলে ধরার চেষ্টা করছে, একই ভাবধারায় যেন শিক্ষামন্ত্রী ও কিছু নাস্তিক্যবাদী প্রভাবিত হয়ে তা অবলম্বন করেছে। পাঠ্যপুস্তকে প্রগতিশীল ও আধুনিকতার নামে উলঙ্গপনা, দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের চেতনাবিরোধী কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইসলামী ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিকৃত ও খাটো এবং হিন্দুদের মহান করে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছে। আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে আমূল বদলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন এসব ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ এবং বিকৃত ইতিহাসের বিরোধিতা করেছে, তখনও শিক্ষামন্ত্রী নানা অপবাদ দিয়ে নিজের অবস্থানে অটল থাকেন। অথচ এর আগে যখন নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তিনি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধকে অক্ষুন্ন ও অটুট রেখে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করেছিলেন। আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মতামতকে মূল্যায়ণ করেছেন। বাস্তবতার নিরিখে সকলের মতামত ও সেন্টিমেন্ট অনুধাবন করে সুষম ও যুগোপযোগী পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ করেছেন। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী আমাদের পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সর্বোপরি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের চেতনাকে উপেক্ষা করে কিছু নাস্তিক্যবাদীর অগ্রহণযোগ্য মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর তা চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকারের উচিৎ তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সেন্টিমেন্টকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আগামী প্রজন্মকে নিজস্ব মূল্যবোধে গড়ে তোলার প্রতি বরাবর তাকিদ দিয়ে আসছেন। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সুবিধা ও পৃষ্ঠপোষকতা থেকে শুরু করে আধুনিক ও নান্দনিক মসজিদ তৈরি, স্বতন্ত্র ইসলামী-আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ যুগোপযোগী ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসীম। তিনি দেশের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা এবং মানুষের মন ও মননশীলতাকে অনুধাবন এবং দূরদর্শীতা দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং প্রশাসনের কর্মর্তাদের তাঁর এই দূরদর্শীতা ধারন এবং অনুসরণ করেই কাজ করতে হবে। সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে পারে, এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে। পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই তিনি যথাসময়ে যথোচিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন। আমরা আশা করব, নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে যাতে আমাদের সঠিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যথাযথ প্রতিফলন ঘটে। এক্ষেত্রে রিভিউ কমিটি গঠন করে তাতে অন্যান্য নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্নদের পাশাপাশি ইসলামী পন্ডিত, বিশেষজ্ঞ ও আলেমদের রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
আমি ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:৩৫ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ তিনি এ কাজটি করার জন্য
Total Reply(0)
আরিফ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:৩৭ এএম says : 0
পাঠ্যপুস্তক থেকে ডারউইনের মতবাদ না তুললে এ সরকারেরই সবেচেয়ে বেশি ক্ষতি হতো। কাজেই সরকার এটা বাদ দেওয়াতে আমরা সরকারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই
Total Reply(0)
কাবু ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:৩৮ এএম says : 0
অবশেষে বিতর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত ও ভুলে ভরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুষন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই আমরা
Total Reply(0)
মাসুদ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:৩৯ এএম says : 0
আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই তিনি যথাসময়ে যথোচিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন। আমরা আশা করব, নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে যাতে আমাদের সঠিক ইতিহাস, ঐতিহ্য, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যথাযথ প্রতিফলন ঘটে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন