রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অস্বস্তিকে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:১২ পিএম

চাল, চিনি, ডাল, লবন, ভোজ্য তেল আর রান্নার গ্যাস সহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির দুঃসহ যন্ত্রনায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষ যথেষ্ঠ কষ্টের সময় অতিক্রম করছে। অপরদিকে আগের তুলনায় সবজির দাম প্রায় অর্ধেক হ্রাস পাওয়ায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পরলেও সাধারন মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে। তবে রান্নার গ্যাস আর ভোজ্য তেল সাধারন গৃহস্থের অস্বস্তিকে ইতোমধ্যে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম চলতি মাসেই প্রতিটি পরিবারে বাড়তি দূর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বাজেট সংকুলন না হওয়ায় শহুরের জীবন ব্যবস্থায় অনেক পরিবারের পাত থেকে মাছ ও গোসত অনেকটা উঠে যেতে শুরু করেছে। কোন মেহমান বাড়ীতে আসা ছাড়া অনেক পরিবারের সদস্যদের পাতে এখন আর মাছ-গোসত দেখা যায়না।

আউশের পরে আমনের ভরা মৌসুমে ভাল উৎপাদনের পরেও চালের দাম কমার পরিবর্তে ক্রমশ বাড়ছে। গত বছর একই সময়ে তুলনায় এবার ফেব্রুয়ারীতে প্রতি কেজী চালের দাম ১০-১২ টাকা বেশী। অথচ সদ্যসমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে জমিতে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রাও অতিক্রম করেছে বলে দৃড় আশাবাদ ব্যাক্ত করেছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এর আগে খরিপ-১ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে ডিএই সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে আরো ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৪ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন। আরো প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের ব্যাপারেও আশাবাদী কৃষিবীদগন ।
ফলে খাদ্য শষ্যের কোন ধরনের সংকট বা ঘাটতি সম্ভবনা না থাকলেও এসব নিত্যপণ্যের দাম সাধারন মানুষকে যথেষ্ঠ অস্বস্তিতেই রেখেছে। একইভাবে ডালের দামও সাধারন মানুষকে কোন ধরনের স্বস্তি দিচ্ছে না। সয়াবিন সহ সব ধরনের ভোজ্য তেলই এখনো সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ১৩০ টাকা কেজি চিনি কেনার ক্ষমতা বেশীরভাগ মানুষের না থাকলেও সবাই প্রায় নিরুপায়। ভেজাল আখের ও খেজুরি গুড়ের ভীরে আসল হারিয়ে যেতে বসলেও তা কেনার ক্ষমতাও এখন অনেক মানুষের নেই।
এদিকে অন্যসব নিত্য পণ্যের সাথে মাছ-গোসতের বাজারেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ৮শ টাকা কেজির নিচে কোন মাছ নেই বাজারে। অথচ প্রায় পৌনে ৫লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছ যাচ্ছে রাজধানী সহ সারা দেশে। এক কেজি ওজনের নিচের সাইজে ইলিশের কেজিও এখন হাজার টাকার ওপরে। গরুর গোসতের কেজি সাড়ে ৭শ টাকা হলেও খাশি প্রায় ১১শ টাকা কেজি। ফলে গোসত কেনা এখন নি¤œ-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের জন্য দুঃস্বপ্নের। বেশীরভাগ পরিবারের পাত থেকে গোসত উঠে যেতে বসেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজী গত এক বছরে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন ২শ টাকার ওপরে। কক ও সোনালী মুরগির দামও বছরের মাথায় কেজিতে প্রায় ১শ টাকা বেড়েছে।
এদিকে মাত্র দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। রোজাকে সামনে গত বছর রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও ছোলাবুট, খেজুর, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রী করলেও এবার আর তা হচ্ছে না। গত বছর ঈদ উল ফিতরের পর থেকেই টিসিবি খোলা বাজার থেকে সরে দাড়িয়ে ‘এক কোটি পরিবারকে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য সরবারহ’র আওতায় দক্ষিণাঞ্চলেও প্রায় ৬ লাখ পরিবারকে ১ কেজি করে চিনি, এক লিটার ভোজ্যতেল ও ২ কেজি করে মুসুর ডাল বিক্রী করছে। এ কার্যক্রমকে সকলে সাধুবাদ জানালেও খোলাবাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সরকারী এ সুবিধা পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ সবার। এমনকি গত বছর খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রীর ফলে বাজারে মূল্য বৃদ্ধি রোধে যে নিয়ন্ত্রন ছিল, এবার তা অনুপস্থিত বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। ফলে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষের দূর্ভোগ কোথায় যাবে তা নিয়ে শংকা আছে বেশীরভাগ মানুষের।
অপরদিকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও এখন সরকার নির্ধারিত মূল্যে রান্নার গ্যাস মিলছে না। সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে এখন ১৭শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। ডিলারদের দাবী, ‘গ্যাস কোম্পানীগুলেই ডিলাদের কাছে সাড়ে ১২ কেজি গ্যাস বিক্রী করছে ১,৫২০ টাকায়’। পাইকারী ডিলারগন তা ৩০টাকা মুনফায় সাব-ডিলারদের কাছে বিক্রী করলেও সেখান থেকে আর কোন নিয়ন্ত্রন থাকছে না। গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল মহানগরীতে সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাস বিক্রী হয়েছে ১২শ টাকায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন