বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেদখল ফুটপাত সড়ক

চট্টগ্রামে সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা পথ চলতে দুর্ভোগ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বেদখল হয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশির ভাগ ফুটপাত, সড়ক। তাতে চরম দুর্ভোগে পথচারীরা। হাঁটতে হচ্ছে সড়ক হয়ে। বিশৃঙ্খল সড়কে জনজটে আছে ছিনতাইকারী ও বখাটেদের উৎপাত। পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার নগরবাসী। সড়ক থেকে ফুটপাত দখলদারের কব্জায় চলে যাওয়ায় ব্যস্ততম মহানগরীর প্রতিটি মোড়েই এখন তীব্র যানজট।
চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায়ও নির্বিকার সিটি কর্পোরেশন। মাঝে মধ্যে চলে লোক দেখানো কিছু অভিযান। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ আর জরিমানার মধ্যেই সীমিত তাদের কার্যক্রম। ট্রাফিক পুলিশও অনেকটা অসহায়। সড়ক, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চলছে। হকার আর ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা দখলদারির শীর্ষে। বাদ যায়নি সড়কের পাশের ব্যবসায়ী-দোকানদারেরাও।
পণ্যের পসরার পাশাপাশি নির্মাণ সামগ্রী রেখে সড়ক দখল করা হচ্ছে। কোথাও আবার অঘোষিত বাস টার্মিনাল, টেম্পু, টেক্সি স্ট্যান্ড। সড়কেই গাড়ি রেখেই করা হচ্ছে মেরামত। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। সেখানেও বাণিজ্যিক স্থাপনা। যাত্রী ছাউনিকে ঘিরে দোকানপাট। কোথাও আবার ফুটপাত দখল করে অ্যাকুরিয়াম, কফি সপ, ফাস্টফুডের দোকান। মহানগরীর প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার ফুটপাতের প্রায় পুরোটাই এখন বেদখল। দখলদারের থাবা ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কে বিস্তৃত হয়েছে। এর ফলে গত দেড় দশকে মহানগরীর উন্নয়নে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সম্প্রসারণ করা হলেও তার সুফল মিলছে না।
সবচেয়ে বেহাল অবস্থা নগরীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট এলাকায়। কোতোয়ালী মোড় থেকে নিউমার্কেট হয়ে পুরাতন স্টেশন। অন্যদিকে নিউমার্কেট মোড় থেকে দারুল ফজল মার্কেট হয়ে তিন পোলের মাথা পর্যন্ত সবকটি সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা। ওইসব এলাকার দোকান মালিকেরা ফুটপাত দখল করেছে। আর রাস্তা দখল করে পসরা সাজিয়েছেন হকারেরা। হকারের পসরার পাশেই রাস্তার প্রায় অর্ধেকটা দখল করে রাখা হচ্ছে সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস, অটোরিকশা, টেম্পু। কোথাও আবার ব্যক্তিগত যানবাহনও পার্কিং করা হচ্ছে।
ফলে সড়কের প্রায় ৮০ ভাগ বেদখল হয়ে আছে। সরু অংশে যানবাহন চলতে গিয়ে তীব্র যানজট হচ্ছে। ব্যস্ততম এ এলাকায় চলতে গিয়ে লোকজনকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পথচারীরা সড়কের মাঝখান দিয়ে হাঁটছেন। আর তাতে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সড়কে যানজট সেইসাথে জনজটে ওৎ পেতে থাকে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যরা। ভিড়ের মধ্যে ছো মেরে নিয়ে যাচ্ছে মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন, হাতব্যাগ। পথ চলতে নারী এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ভিড়ের মধ্যে ইভটিজিং কিংবা শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাও ঘটছে।
নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড, জুবিলী রোড, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, জিইসি মোড়, জাকির হোসেন রোড, অলঙ্কার, এ কে খান গেইট, আন্দরকিল্লা, ষোলশহর ২নং গেইট, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, সিরাজউদ্দৌলা রোড, কালামিয়া বাজার, বড়পোল, ইপিজেড, বন্দরটিলা, স্টিল মিল বাজার এলাকার চিত্রও একই রকম। ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা জুবিলী রোডে ফুটপাতের সাথে সড়কও বেদখল হয়ে গেছে। পাশের দোকানদারদের হরেক পণ্য রাখা হচ্ছে ফুটপাত দখল করে। আবার অবৈধ গাড়ি পার্কিংও আছে সড়কের দুইপাশে।
নগরীর জামালখান, কাজির দেউড়ি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের সড়কে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। ওইসব এলাকায় ফুটপাতে সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ফুটপাতে দোকান দেওয়ার ফলে চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। জামালখান সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে ফুটপাত জুড়ে লোকজনের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যায় সেখানে অগণিত মানুষের ভিড় জমে। ভিড় ঠেলে এলাকা পার হতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাধারণ পথচারীদের। ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা হওয়ায় সেখানে বখাটেদের উৎপাতও বাড়ছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কিংবা মাদকসেবীদেরও আড্ডা দিতে দেখা যায় সেখানে। এ নিয়ে বিব্রত সাধারণ মানুষ।
নগরীর প্রধান সড়কের আগ্রাবাদ থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। দু’দিকে সরু অংশে চলছে যানবাহন। আবার সেখানেই গাড়ি রেখে মেরামত করা হচ্ছে। এর ফলে ওই সড়কে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। চৌমুহনি মোড় থেকে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাস পার হতে ঘণ্টা পার হয়ে যায়। মহানগরীর প্রায় সবকটি সড়কে রয়েছে অবৈধ টেম্পু, টেক্সি স্ট্যান্ড। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারের সামনে বাস-মিনিবাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। কোথাও আবার ইট, বালু, রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী রেখে রাস্তা, ফুটপাত দখল করা হয়েছে। সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতেও দিনের বেলায় সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি ঢুকছে। কোথাও আবার ট্রাক থেকে পণ্য ওঠানামা করা হচ্ছে সড়ক দখল করে। এতে সড়কে যানজট হচ্ছে।
বিগত দেড় দশকে মহানগরীর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বেশ কয়েকটি সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক ফ্লাইওভার। কিন্তু দখলবাজির কারণে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। বেশিরভাগ ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পার্কিং। কোথাও আবার দোকানপাট বসেছে। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাসগুলোতে সড়কে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। এ কারণেও অনেক এলাকায় যানজট হচ্ছে। রাস্তায় নেমে দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। গন্তব্যে যেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। নগরজুড়ে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থায় শুধু দুর্ভোগই বাড়ছে। সামনে পবিত্র মাহে রমজান। দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন