শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নকল পোশাক রফতানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশের একক বৃহত্তম রফতানি খাত গার্মেন্ট থেকে নকল পোশাক সরবরাহের অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নামী-দামী ব্র্যান্ডের পোশাক নকল করে পাঠানো হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড স্ট্যাটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নামে নকল তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা হয়েছে। তৈরি পোশাক সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়ার পরও মেধাস্বত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার অনুপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ে চরম দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ থেকে অব্যাহত হারে নকল পণ্যের বৈশ্বিক বিস্তার ও উৎপাদন বাড়ছে। অভিযোগে বলা হয়, তাদের দেশের ক্রেতাদের দেয়া অর্ডারে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক হুবহু নকল করে ভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা, যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থী। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় আসা গার্মেন্ট খাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগের। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তৈরি পোশাকের ওপর কোটা আরোপ, যে ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করা হয়েছে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। যদিও বিজেএমইএ বলেছে, তাদের কোনো সদস্য এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত নয়। তৃতীয় কোনো পক্ষ এর সাথে জড়িত।

বাংলাদেশ থেকে নকল পণ্য রফতানির অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। গত বছর বাংলাদেশে প্রস্তুত করা ৫৬টি নকল পণ্যের চালান যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করে। মালয়েশিয়ায় ১৭টি অভিযান চালিয়ে প্রায় পৌনে দুই লাখ পোশাক জব্দ করা হয়। নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ শুধু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নয়, অনেক উন্নত দেশের বিরুদ্ধেও রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইটালি, জার্মানি, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদী আরব ইত্যাদি দেশ এ তালিকায় রয়েছে। তবে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বাজার, তাই নকলের এই অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখতে হবে। তা নাহলে, একবার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিলে পোশাক খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করার পর বহু দেনদরবার করেও তা পুনর্বহাল করতে পারেনি সরকার। কাজেই, নকল পণ্য সরবরাহের যে অভিযোগ উঠেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ওই প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড হিসেবে গণ্য হয়। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড গুচি, ডেনিম, গ্যাপ, এইচ অ্যান্ড এম, টমি হিলফিগার, লী, লিভাইস ইত্যাদি স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডেড পণ্য। এসব প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তাদের পণ্য মানসম্পন্নভাবে তৈরি করার অর্ডার দেয় এবং তা শুধু তাদের পণ্য হিসেবেই বিবেচিত। এগুলো অন্য কোনো দেশে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করা যাবে না। এটা তাদের মেধাস্বত্ব। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনেক সময় বিশ্বখ্যাত এসব ব্র্যান্ড নকল করে বিক্রি করে। বাংলাদেশের বড় বড় গার্মেন্ট কারখানায় এসব ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান পণ্য তৈরির অর্ডার দিয়ে থাকে। তাদের ডিজাইন ও রং অনুযায়ী সেগুলো উৎপাদিত হয়ে থাকে এবং তা সরাসরি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কখনো কখনো ত্রুটি বা কোনো কারণে অর্ডার বাতিল হলে সেগুলো লোকাল মার্কেটে লেবেল ছিঁড়ে বিক্রি করা হয়। এ সুযোগটি কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী নিয়ে আলাদাভাবে সরবরাহ করে। এতে অর্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয় এবং অর্ডারকারি প্রতিষ্ঠান কখনো কখনো অর্ডার বাতিল করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টের যে বিশাল বাজার রয়েছে, তা অক্ষুন্ন ও অটুট রাখতে এ ধরনের নকল পোশাক সরবরাহ কঠিনভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। নইলে, এ খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। সে সময় ‘বাংলাদেশের পোশাকে রক্তের দাগ’ লেখা নিয়ে কানাডাসহ অন্যান্য দেশে প্রতিবাদ করা হয়। এতে পোশাক খাতের ব্যাপক ক্ষতি ও দুর্নাম হয়। এ খাতের উদ্যোক্তারা অসামান্য পরিশ্রম ও যোগাযোগ রক্ষা করে সেই বিপর্যয় সামাল দিয়ে খাতটিকে ধরে রেখেছে। এখনও দেশের শতকরা ৮৩ ভাগ রফতানি আয় হয় এই খাত থেকে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই রফতানি হয় ২০ শতাংশের বেশি। সেই যুক্তরাষ্ট্র যখন নকল পোশাক সরবরাহের অভিযোগ করে, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। দেশটি যদি ব্র্যান্ড ভেদে নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে বিশ্বের অন্যদেশগুলোতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারাও পোশাকের অর্ডার বাতিলসহ কমিয়ে দিতে পারে। এই আশঙ্কা নিরসনে বিজিএমইএ’র যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। সম্মিলিতভাবে নকল পোশাক সরবরাহ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং বিজেএমইএকে কারা নকল পোশাক সরবরাহ করছে, তা শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানের পোশাকের মেধাস্বত্ব কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর নকল পোশাক সরবরাহের জন্য পুরো গার্মেন্ট খাত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, তা মেনে নেয়া যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন