বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ইবি ভিসি’র ফোনালাপ ফাঁস, বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

ইবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩২ এএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠসদৃশ’ একাধিক কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ‘ফারাহ জেবিন’ ও ‘মিসেস সালাম’ নামে দুইটি ফেসবুক আইডি থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ও শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পরপর পাঁচটি ফোনালাপের অডিও পোস্ট করা হয়।

এই ঘটনায় শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে ভিসির পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। জিডি নাম্বার ৬৭২। জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূর যায়েদ বিপ্লব। এদিকে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম।

ফাঁস হওয়া অডিওতে ভিসির মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। শনিবার ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. মামুনুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত ভিসি কর্তৃক এমন বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে শাপলা ফোরাম মনে করে। অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়ে ঢালাওভাবে এ ধরনের মন্তব্য করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. তপন কুমার জোদ্দার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, ফাঁস হওয়া অডিওতে ভিসির মন্তব্যে শিক্ষক সমিতি হতবাক ও বিস্মিত। এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে তাঁর এ ধরনের বক্তব্যে ইবির শিক্ষক সমিতি ক্ষুব্ধ ও হতাশা ব্যক্ত করছে। প্রচারিত অডিওতে বক্তব্যের বিষয়ে অনতিবিলম্বে ভিসিকে অবস্থান জানানোর অনুরোধ করছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদনকারীরা হলেন ড. মো অলিউর রহমান, মোশারফ হোসেন ও বিউটি মণ্ডল। এসময় বোর্ডের সর্বনিম্ন সংখ্যক প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বোর্ড স্থগিত হয়। পরে গত ২ নভেম্বর আবারো পুনর্বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এর নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ফারহা জেবিন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি অডিও পোস্ট করা হয়। এর ৬ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের প্রথম অডিওতে ভিসিকে চাকরি প্রার্থী অলিউরকে তিনজন প্রার্থী সংগ্রহ করার কথা বলতে শোনা যায়। প্রয়োজনে পয়সা দিয়ে প্রার্থী জোগাড় করতে বলেন তিনি। যাতে নিয়োগ বোর্ড করানো যায়। এছাড়াও পূর্বে স্থগিত হওয়া নিয়োগ বোর্ড পুনরায় পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে এমনটি তুলে ধরা হয়। তিনি প্রার্থীকে বলেন, ‘আপনি সব দিয়ে রেডি থাকেন, যেদিন সব দিয়ে দিবেন ঠিক একুশ দিনের মাথায় সব গোছায় দিবো’। এছাড়া ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের দ্বিতীয় অডিওতে নিয়োগ বোর্ডের দশটি প্রশ্ন পছন্দের প্রার্থীকে জানিয়ে দেয়ার কথা শোনা যায়। অডিওতে বলা হয়, ‘খুব চমৎকার করে একবারে চুম্বক লেখা আছে আরকি, দশটা আইটেম।’ এছাড়াও, অডিওতে অলিউর রহমানকে ইংরেজিতে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়। ২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের তৃতীয় অডিওতেও একই বিষয়ে বলতে শোনা গেছে।

অন্যদিকে ১৭ই ফেব্রুয়ারি মিসেস সালাম ফেসবুক আইডি থেকে দুইটি অডিও পোস্ট করা হয়। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের প্রথম অডিওতে ভিসিকে শাহীন নামের একজনের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি শাহীনকে বলছেন, ‘এরা এক একজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১৬ লাখ ১৮ লাখ করে টাকা নেয়, টিচার নেয়, ছাত্র নেয়, তারপর কর্মকর্তা-কর্মচারী নেয়, কন্ট্রাক্টররা নেয়।’ এদিকে ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের দ্বিতীয় অডিওতে ভিসিকে সুজন নামের একজনের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। অডিওতে তিনি ক্যাম্পাসে ডে লেবার হিসেবে কাজ করা সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মাস্তান হিসেবে উল্লেখ করেন।

এদিকে রেকর্ড ফাঁসের পর শনিবার ভিসির কার্যালয়ে তালা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ। এসময় তারা ভিসির অপসারণ দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সংগঠনটির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান টিটু বলেন, ইবি ভিসি দুর্নীতি করে নিয়োগ দিচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এই দুর্নীতিবাজ ভিসিকে আমরা এই বিশ্বদ্যালয়ে দেখতে চাই না। তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছেন। আমরা এই ভিসিকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্ক মুক্ত করতে চাই।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে ভিসি কখনোই কোন প্রার্থীর সাথে এরুপ কথা বলতে পারেন না।’

অডিও ভাইরালের বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘অডিওর শব্দগুলো আমার, তবে কনটেক্সটগুলো ফেইক। রুচিহীন মানুষের দ্বারা এসব কাজ সম্ভব। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত কাজ। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমি অন্যায় করলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন