নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর গাবুয়া বাজারে ‘রাশিয়ান প্লাজা’ নামে একটি চারতলা ভবন হেলে পড়েছে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কায় আশপাশের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভবন মালিক শেখ শহিদুল ইসলামের দাবি, পাশের মালিকরা বিল্ডিংকোর্ড না মেনে ভবন নির্মাণে অপরিকল্পিত মাটি খননের ফলে তার বিল্ডিং হেলে পড়েছে। এতে তিনি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
জানা গেছে, বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শেখ মোবারক আলীর ছেলে রাশিয়া প্রবাসী শেখ শহিদুল ইসলাম একলাশপুর মৌজার জিলা জরিপী ২২৪১ নম্বর খতিয়ানের অধিনে হাল ৪৬৪৫ নম্বর খতিয়ানের ১৬৭৮৪ দাগে ৬ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তির মালিক হন। তিনি ২০০২ সালে ওই সম্পত্তিতে চারতলা ভবন নির্মাণ করেন। একই খতিয়ানে তার বড়ভাই মো. নুরনবী বাবরের থেকে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে একই এলাকার মৃত সফি উল্যাহর ছেলে মো. মহিন উদ্দিন ও মো. ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী সাহিদা বেগম গত বছর বহুতল একটি ভবন নির্মাণ শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একলাশপুর গাবুয়া বাজারের পশ্চিম দিকের সড়ক সংলগ্ন রাশিয়ান প্লাজা অবস্থিত। এ ভবনের পশ্চিম পাশ ঘেঁষেই তৈরি করা হচ্ছে মহিন উদ্দিনদের নতুন ভবন। রাশিয়ান প্লাজা ভবনটি পশ্চিম দিকের নবনির্মিত ভবনের দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। ভবনের নীচতলার বেশ কয়েকটি দোকান বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। দোতলা থেকে উপরে ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে মালিকরা ছাড়া বাকি ফ্ল্যাটগুলো খালি পড়ে রয়েছে। আশপাশের লোকজন উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন পার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, ভবনটি হেলে পড়ায় এলাকার সবাই আতঙ্কিত। কখন এটি কাত হয়ে বিধ্বস্ত হয় সেই আশঙ্কায় এলাকারজুড়ে ভয় কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা সবাই ওই ভবন ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছে। এর আগে পরিবার পরিজন নিয়ে ১১ পরিবারের অনেকে মালামাল রেখে ভবন ছেড়ে চলে গেছে। এখন প্রশাসন থেকে এর কোনো ব্যবস্থা না করলে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
ভবন মালিক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভবনের পশ্চিম পাশে এক শতাংশ জমি ফাঁকা রেখে বিল্ডিং নির্মাণ করি। আমি বিদেশে থাকার সুবাধে পাশের ভবনের মালিকরা আমার ফাঁকা জায়গা দখলে নিয়ে আমার ভবনের পাশ ঘেঁষে গভীরভাবে মাটি খননের ফলে আমার কষ্টে উপার্জিত টাকায় নির্মাণ করা ভবনটি হেলে পড়েছে। যার ফলে আমার ১১ জন ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। নীচতলার দোকানদারাও চলে যেতে চাইছে। এ জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, আমার ভবন হেলে পড়ার পর বিভিন্ন দফতরসহ আদালতে অভিযোগ করি। কিন্তু অভিযুক্তরা ১৯৯৮ সালের আমার স্বাক্ষর জাল করে নুরনবী বাবরের সঙ্গে সাদা কাগজের যৌথ বিল্ডিং নির্মানের একটি ভুয়া চুক্তিনামা দেখিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। দেখানো চুক্তির সময় আমি দেশে ছিলাম না। এ ব্যাপারে তড়িত ব্যবস্থা না নিয়ে আমার ভবনটি যে কোনো সময় হেলে পড়তে পরে। আমি বিভিন্ন দফতরে ঘুরেও এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এলাকাবাসীর আতঙ্ক কাটাতে আমি এর একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই।
শহিদুলের বড়ভাই মো. নুরনবী বাবর বলেন, আমি মহিন উদ্দিন গংদের কাছে ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেছি। তবে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে লিখিত কোনো চুক্তি হয়নি। মহিন উদ্দিন কোথা থেকে এ চুক্তিপত্র পেয়েছে তা আমার জানা নাই।
চুক্তিপত্রের স্বাক্ষী মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি এ ধরনের কোন চুক্তির বিষয় অবগত নই। আমার স্বাক্ষর জাল করে এটি বানানো হয়েছে। তিনি দাবি করে, ওই চুক্তিপত্রের সব সই জাল করে বানানো।
অভিযুক্ত মো. মহিন উদ্দিন বলেন, আমি ও মো. ইসমাইল জমি ক্রয় করে যৌথভাবে ভবন নির্মাণ করছি। চুক্তির কপি আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। সেটি ভুয়া হলে আদালতে প্রমাণ হবে। আমরা জমি কিনে বিল্ডিং করছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
ভবনটি হেলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালী গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব। তিনি বলেন, ভবনটি পর্যবেক্ষন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভবনটি পশ্চিম দিকে চার ইঞ্চি হেলে পড়েছে এবং দুটি কলাম ও ওয়ালে ফাটল ধরেছে। পশ্চিম পাশের ভবন নির্মাণে পৌনে ৭ ফুট মাটি খনন করা হয়েছে। অভিযুক্তরা বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মান করছেন না বলে প্রতিয়মান হয়েছে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার সতত্য পেয়ে প্রতিপক্ষের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ অনেকদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমানে তারা আদালতের দ্বারস্ত হওয়ায় বিষয়টি আর আমার জানা নাই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কিত অবস্থায় আছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে জনগণের যানমালের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন