ক্যাম্পাসের নবাগত শিক্ষার্থীদের ম্যানার শিখানো ও পরিচিতি পর্বের নাম করে আগে থেকেই র্যাগিং চালু ছিলো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবছর নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার পর আবাসিক হল ও মেসগুলোতে র্যাগিং চর্চা চলতো। তবে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোরতম অবস্থানের কারণে মেসগুলোতে র্যাগিং কমলেও বেড়েছে আবাসিক হলগুলোতে। ছাত্রদের তিনটি হলে আধিপত্য বিস্তারকারী ছাত্রলীগের সিনিয়ররা নিয়মিত জুনিয়রদেরকে পরিচয় পর্ব ও ম্যানার শিখানোর নামে র্যাগিংয়ের চর্চা করে আসছিলেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ৯ জন শিক্ষার্থীকে র্যাগিং করার দায়ে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে একই বিভাগের অভিযুক্ত ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ১১১ নম্বর কক্ষে ১৬ জন সিনিয়রের ওপর অভিযোগ এনে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় প্রধান বরাবর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। এর ভিত্তিতে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিচয়পর্বে তাদেরকে যৌনকর্মী সাজিয়ে শরীর প্রদর্শন ও অসামাজিক কাজে দরদাম নির্ধারণ, এক ছাত্রকে মেয়ে সাজিয়ে অপর এক ছাত্রকে ধর্ষণের নির্দেশ দিয়ে তার দক্ষতা যাচাই এবং হিজড়া সাজিয়ে টাকা উত্তোলনের নির্দেশ দিয়ে তাদেরকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহিষ্কৃত ৫ শিক্ষার্থীদের মাঝে মো. আল-আমিন, পাবন মিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমানের অনুসারী, মো. রিয়াজ হোসেন সাবেক উপ-গণ যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. ফারহান রুবেলের অনুসারী, মো. আশিক হোসেন রসায়ন বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান স্বাধীনের অনুসারী এবং মো. আপন মিয়া ছাত্রলীগ নেতা সুমন মিয়ার অনুসারী। এছাড়াও অভিযুক্ত বাকি শিক্ষার্থীরাও শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, তারা ( সিনিয়র) আমাদের একজনকে মেয়ে সাজিয়ে আরেকজনকে বলে তাকে ধর্ষণ করে দেখাতে। তার কথা মতো নিচে একজনকে শুয়িয়ে ধর্ষণের অভিনয় করে দেখানোর পর ওই সিনিয়র বলেন, ‘র্যাপটা তো তুই ঠিকমতো করতে পারলি না রে!’ আরেকজনের শরীরে কাগজ দিয়ে তাকে যৌনকর্মী সাজিয়ে শরীর দেখাতে বলে এবং আরেকজনকে বলে ১হাজার টাকা থেকে তাকে দামাদামি করে ১০০ টাকায় রাজি করাতে। তারা অশ্লীল গান দিয়ে আমাদেরকে নাচায়। আমাকে হিজড়া সেজে টাকা তুলতে বলে।
জানা যায়, হলের আবাসিক সুবিধা পেতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ মুজতবা আলী হলে উঠেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে জীবনে আর কখনো হলে না উঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
র্যাগিংয়ের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন