শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাঠে কাজ করা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার নয় : প্রধানমন্ত্রী

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতে ও লজ্জা পায়। আজ সেই লজ্জাটা আর নেই। সেই লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেই ভাবেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ঘরে তুলতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে যখন আমাদের কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না, ধান কাটতে আমি যখন আমাদের ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সকল ছেলে-মেয়েকে নির্দেশ দিলাম তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে দাঁড়াও। তারা কিন্তু ধান কেটেছে। অর্থাৎ যেটা খেয়ে তোমাদের জীবন বাঁচবে সেই কাজ করাটা লজ্জার না, গর্বের। সেই মানসিকতাটাও চেঞ্জ করা একান্ত প্রয়োজন ছিল। আজকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের যুব সমাজকে আরো সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার।

কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে এটাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিনি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আমাদের বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষকদের সুবিধার জন্য তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দেন। পাকিস্তান আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করে দেন। ভ‚মিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ করা শুরু করেন, গৃহহীনদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করেন। বাজেটে কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। বিদেশ থেকে সেচের ব্যবস্থা করার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা শুরু করেন। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার পরিকল্পনাও তিনি হাতে নেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেটা বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনকে বেশি প্রাধান্য দেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাল কিনতে পারছি না। যদি চাল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাল পয়দা করে খেতে হবে। আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনা খাদ্য বাংলাদেশে আসেনি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন করে গবেষণার উপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন- এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়। শ্রমিকরা ন্যায্য মুজরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা সেই সমস্ত জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল- কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাব না। ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তখন অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশের ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। একদিকে আমরা যেমন বন্যা সামাল দিয়েছি, হাতে রুটি তৈরি করে প্রত্যেকটি জায়গায় মানুষের খাবার পৌঁছে দিয়েছি, স্যালাইন তৈরি করে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছি, পানি বিশুদ্ধ করে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছি। সাথে সাথে আমরা আরেকটা কাজ করেছিলাম- আমাদের যেসব জায়গায় বন্যা হয়নি, সেখানে আমরা বীজ এবং সার দিয়ে এমনকি ক্যান্টনমেন্ট থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় আমরা বীজতলা তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়ে ছিলাম। পানি নামার সাথে সাথে এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টার করে সেই বীজ তলা, সার এবং নগদ টাকা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিই। যার ফলে ৯৮ সালের বন্যার পরও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি।
তিনি বলেন, আমরা পার্লামেন্টে যেদিন ঘোষণা দিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমাদের বিপক্ষে ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপি। তাদের পক্ষ থেকে সাথে সাথে বলা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো নয়, বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি সারাজীবন ভিক্ষা চেয়ে চলবে আর বিদেশের উপর নির্ভর করে চলবে? কেন চলব আমরা। স্বাধীনতার পর অনেক বিদেশি সাংবাদিক জাতির পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার তো কোনো সম্পদ নেই, রিজার্ভে টাকা নেই, কারেন্সি নোট নেই, সবকিছু বিধ্বস্ত, আপনি কী দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন? তিনি একটা কথাই বলেছিলেন, আমার মাটি আছে মানুষ আছে। এই মাটি-মানুষ দিয়েই আমি বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরে পৌঁছান। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছালে দুই শিশু প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাসি মুখে শিশুদের কাছ থেকে ফুলের তোড়া গ্রহণ করেন। পরে তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী হেঁটে গিয়ে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রæডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। তিনি কেন্দ্রটি ঘুরে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন উদ্ভাবন ও বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার গেøাবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালি। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. মো. শাহজাহান কবীর।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Md. Abu Said Khan ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৬ এএম says : 0
যে ভাবে অসৎ ব্যক্তিরা চাকরি করে বড় বড় চেয়ার দখল করে আছে আর বিদেশে গাড়ি বাড়ি করছে। সেখানে আমরা গ্রাজুয়েশন করে হালাল ব্যাবসা বা কৃষি খামার করাতে এই সমাজ নিচু শ্রেণির কাজ মনে করে। এখন কি করণীয় আমাদের মতো মানুষদের, যারা চাটুকারিতা পছন্দ করেনা।
Total Reply(0)
মোঃরাদ্দীদ বিন কামরুল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৫ এএম says : 0
তাহলে কেন কৃষি খাতে সর্বোচ্চ সন্মান দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন না?গতবছর প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডার ছাড়া বাকি বিসিএস পোস্ট গুলো কেন খালি গেলো?কৃষি বিসিএস কে সব থেকে উপর এবং সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়ে দেখেন, কিভাবে ফসল উৎপাদন হয়।দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের নাভিশ্বাস থেকে নাজাত পায়।খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার দেশ হিসেবে গড়ে। জানি কথা গুলো আপনার নিকট পৌঁছবে না।তবুও আপনার উদ্দেশ্যে লেখা। ধন্যবাদ
Total Reply(0)
কাজল হায়দার ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৯ এএম says : 0
আমিও আর্থিক সহযোগিতা ও ভালো প্রযুক্তি এবং জমি পেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকেও বেশি ফলন পাওয়া ফসল উৎপাদন করতে পারতাম।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৮ এএম says : 0
আমি পারি, আমাকে পারতেই হবে, এই ইচ্ছা শক্তি এবং উদ্যোগ এগিয়ে নিতে পারে একটা সংসার, সমাজ এবং একটা জাতিকে উন্নয়নের দিকে।
Total Reply(0)
Md Jakir Hossain ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৭ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমলে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Md Nurul Alam ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:১৭ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল,,, আপনার হাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে,,, আলহামদুলিল্লাহ আমাদের বাশঁখালী তে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন