লাখ লাখ ভক্ত আশেকের মুহুর্মুহু আমীন-আমীন ধ্বনি ও রোনাজারির মধ্য দিয়ে শেষ হল প্রখ্যাত বুযর্গ, খ্যাতিমান দার্শনিক ও সমাজসংস্কারক হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠি নেছারাবাদের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিল। দল, মত, ছেলছেলা নির্বিশেষে দেশের পীর মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ৬৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত সমাজের প্রতিনিধি পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় মাহফিল। দুই দিনব্যপী অনুষ্ঠিত এ মাহফিলের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল আওলিয়ায়ে কেরামের অনুসৃত পথে জাতীয় ও ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ ইসলামী সমাজ নির্মাণে আগত মেহমানদের গড়ে তোলা। ফলে মাহফিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নামাজ কালাম, জিকির আজকার, তসবীহ তাহলীল, মাসলা মাসায়েল ইত্যাদির হাতে কলমে প্রশিক্ষণসহ ওয়াজ নসীহত সবকিছুতেই ছিল আগত মানুষের জন্য শিক্ষণীয় এক ব্যতিক্রমী আবহ।
হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.-এর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে এ মাহফিলের সর্বত্রই ছিলÑছাহেবজাদা, গদ্দিনশীন পীর, আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুরের সুনিপুন ব্যবস্থাপনা ও দূরদর্শী মননশীল চিন্তাধারার ছাপ। আখেরী মুনাজাত পূর্বসমাপনী বয়ানে তিনি ‘কাস্রাতে যিকরুল্লাহ ও নেসবতে আহলুল্লাহ’ অর্থাৎ অধিক পরিমাণে যেকের ও আল্লাহ-অলাদের সোহবত গ্রহণের উপদেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ-অলাদের সাথে সম্পর্ক জুড়ে থাকার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও মুক্তি।’ মুনাজাতের পূর্ব-মুহূর্তেবাংলাদেশ হিযবুল্লাহ জমিয়াতুল মুছলিহীনের পক্ষ থেকে দেশ, জাতি ও উম্মাহর কল্যাণার্থে ০৫ দফা প্রস্তাব পেশ করা হলেÑউপস্থিত জনতার স্বতস্ফূর্তসমর্থন ও তকবির ধনির মধ্য দিয়ে সমর্থিত হওয়ায় তা এখন জাতীয় দাবি ও কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। প্রস্তাবসমূহ এইঃÑ০১. জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশে^র সকল মানুষের নিকটÑযার যতটুকু সম্বল আছে তাই নিয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ততুরস্ক ও সিরিয়ার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো; ০২. হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ. প্রবর্তিত ‘ইত্তেহাদ মায়াল ইখতেলাফ’ তথা ‘মতানৈক্যসহ ঐক্য’ নীতির ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী চরম সঙ্কটে নিপতিত মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়া; ৩. জাতীয় অধঃপতন ঠেকাতে সর্বপ্রকার বেপর্দেগী-বেলেল্লাপনা ও অশ্লীলতা প্রতিরোধে দেশের সকল রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিকসমাজের এগিয়ে আসা; ৪. নাস্তিক্যবাদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা প্রতীয়মান হওয়ায় ২০২৩-এর জন্য নির্ধারিত সমুদয় পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার ও গণসচেতনতা সৃষ্টি; ৫. সামাজিক দুর্দশা ও জনক্ষোভ লাঘবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর ও বাস্তব-সম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ। এসব প্রস্তাব গৃহীত হবার পর হযরত নেছারাবাদী হুজুর সকলকে মুবারকবাদ জ্ঞাপন করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন