সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত আবুল হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরীকে গলা টিপে হত্যার হুমকি দিলেন হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী।
সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার ৩নং পুর্ব দীঘির পার ইউনিয়ন এর দর্পনগর গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরীর আপন ভাই কামাল চৌধুরীর ছেলে রাহাত চৌধুরী বাদী হয়ে গত ২৩ জানুয়ারি আশিক উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার পর সামিরা চৌধুরী বৃটেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে অভিযোগের ব্যাপারে সম্মতি জানান এবং এর প্রেক্ষিতে কানাইঘাট থানা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করেন।
জিডি সূত্রে জানা যায়, আশিক চৌধুরী গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলার দীঘিরপাড় ইউনিয়নের রামধন গ্রামে হারিছ চৌধুরীর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানায় শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে স্যোশাল মিডিয়ায় সরব হয়ে তিনি হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে ‘গলা টিপে হত্যা’র হুমকি দেন। এ সময় হারিছ চৌধুরীর পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়েও বিষোদ্গার করেন তিনি। এ ছাড়া হারিছ চৌধুরী ও তার অন্যান্য ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের ওই এতিমখানায় ঢুকতে নিষেধ করেন এবং ঢুকলে মারধর করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। অতঃপর ভিডিও টি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়।
এতে করে আশিক উদ্দিন চৌধুরীর এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুনে হতবাক হয়ে পড়েন মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরী মেয়ে সহ পরিবারের লোকজন। এ বিষয়ে হারিস চৌধুরীর আপন বড় বোন এখলাসুন নাহার এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- “এতিম খানা আমার বাবার নামে। হারিছ চৌধুরী আমার ভাই, আমার চোখে সে শহীদ, সে মুক্তিযোদ্ধা ছিল, যা আমাকে গর্বিত করে। আমার ভাই এর স্থাপনা হলেও এতিমখানাটি সরকারি, আমরা কেবল এর খোঁজ খবর নিতে পারি, যা আমার বাড়িতে থাকা ছোট ভাই কামাল ও তার ছেলে চেষ্টা করেছিল এবং আমরা নিয়মিত অনুদান দিয়ে আসছি। বাকি সরকারের ব্যাপার।
আমার ভাই হারিস চৌধুরী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আশিক তার মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে, মিথ্যা বলেছে লন্ডন মারা গেছেন বলে! এবং লাশ আমার মা’র কবরের পাশে দাফন হতে দেয়নি, এতকিছুর পরও আমরা কিছু বলিনি, আমরা এলাকায় সম্মানিত বনেদি পরিবার, সমাজসেবী হিসেবে আমাদের নাম আছেই, আমরা চাইনি কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে।
হারিছ চৌধুরীর একমাত্র কন্যা, ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী। এটা সত্যি যে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরাসরি ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরীকে গলা টিপে হত্যা করার প্রকাশ্য হুমকির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে আছে, যার প্রভাবে আমার পরিবার সহ এলাকার সকল ভদ্র পরিবারে ভীতি ও বিব্রতকর অবস্থা। পারিবারিক ব্যাপার নিয়ে জনসম্মুখে হুমকি প্রদান করে বক্তব্য, নোংরা গালাগালি বিষয়টি পারিবারিক থাকতে দিলো না- আমি বিব্রত এবং ব্যথিত। এই ব্যাপারে পরিবার ও এলাকার গুরুজনদের পরামর্শমতে আমার আপন ভাতিজা রাহাত চৌধুরী অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন। আমরা বর্তমানে প্রশাসন এ বিষয়ে কি উদ্যোগ নিচ্ছেন সে ব্যাপারে জানার অপেক্ষায় আছি।”
রাহাতের বাবা কামাল চৌধুরী এ বিষয়ে জানান তিনি নিজের ছেলে এবং ভাতিঝির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, একই সাথে মনোক্ষুন্ন ও বিব্রত। তিনি সন্দেহ করছেন শুরু থেকেই বিষয়টি যতটা না পারিবারিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক যা অনভিপ্রেত ছিল। তার আশা ও আহবান প্রশাসন ব্যাপারটি সঠিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করবেন।
কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম দস্তগীর জানান, সাধারণ ডায়েরির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গত সোমবার রাত থেকে পুলিশ সেটি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় সরকারী দল আওয়ামীলীগ ক্ষুদ্ধ হলেও বিএনপি এখনও নিশ্চুপ। গালাগালি ও হুমকিতে নিন্দার ঝড় বইছে সিলেটের কানাইঘাটে। আশিক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীরও অভিযোগ, মরহুম নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর পর এই খবর গোপন রাখতে লাশ এলাকায় নিয়ে আসতে দেননি আশিক চৌধুরী। সরকার ও তার নিজের দলের কাছে মৃত্যুর খবর নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন তিনি। এখন তার (হারিছ চৌধুরী) এতিম কন্যাকে ও আপনভাই কেও গালমন্দ, লাঞ্ছনা ও প্রকাশ্য হত্যার হুমকি বিষয়টি আলোচনা ও ধিক্কারের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আশিক চৌধুরীকে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে প্রবাসে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন