বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক হওয়ায় বেশিরভাগ দেশ ঝঞঊগ তথা সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথম্যাটিকস শিক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো মূলত সেকেলেই রয়েছে। নানা সংকটও বিদ্যমান। কারিগরি শিক্ষার অবস্থাও শোচনীয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘খুঁড়িয়ে চলছে দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা। বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনো টেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক পদের ৭০% শূন্য আছে। ৮-১০ বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। এছাড়া, জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০% শিক্ষক পদ শূন্য। বিভিন্ন টেকনোলজি ও কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি নেই। আবার ল্যাবরেটরি থাকলেও তাতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। শিক্ষার্থী আগের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। বিপরীত দিকে তিনটি সেশনে ১৫০ মিনিট ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি ও যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে সব ব্যাচ একত্র করে ৩০-৩৫ মিনিট ক্লাস নেওয়া হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে শিক্ষা পাচ্ছে না। কোনোভাবে সিলেবাস শেষ করে শিক্ষার্থীদের পাশের সনদ দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে। ডিপ্লোমা শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও কমে যাবে।’ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য মতে, দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ১৬%। খবরে প্রকাশ, দেশে বাস্তবে কারিগরিতে শিক্ষার হার মাত্র ৮.৪৪%, যা জাপানে ৭১% ও জার্মানিতে ৭৩%। এছাড়া, অন্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকের ঘাটতি ব্যাপক। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। তন্মধ্যে ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও শিক্ষকের ঘাটতি অনেক। মেডিকেল কলেজেও অনেক শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। প্রায় অর্ধেক মেডিকেল কলেজের সাথে হাসপাতাল যুক্ত নেই! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকের সংকট রয়েছে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, দেশের ৪৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের ২৩.৫% ছুটিতে আছেন। দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও শিক্ষকের পদ শূন্য আছে অনেক। গত ১৩ সেপ্টেম্বর খবরে প্রকাশ, বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ৯০ হাজার পদে কোনো শিক্ষক নেই। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, ২০২১ সাল পর্যন্ত অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮। এর মধ্যে ৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তন্মধ্যে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য ও ৪২টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসও নেই। সম্প্রতি ইউজিসি অনেকগুলোর ভর্তি স্থগিত করেছে। তন্মধ্যে কয়েকটি মেডিকেল কলেজও রয়েছে। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা নেই! সর্বোপরি বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টাফের ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে ভয়াবহ দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দলবাজি ও হানাহানি! এছাড়া, বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরাতনজনিত ভাঙ্গাচুরা এবং নদী ভাঙ্গন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিলীন হয়ে গেছে। তাই শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করে।
সব মিলে শিক্ষার মান অতি নি¤œ! সাক্ষরতার মানও খারাপ! প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পরীক্ষায় পাশের হার প্রায় ৯০% হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশের হার ৪-৫% এর মতো হয়। ভারতের যেসব শিক্ষার্থী এ দেশে মেডিক্যাল শিক্ষা লাভ করে, তারা দেশে ডাক্তারি লাইসেন্স গ্রহণের পরীক্ষায় তিন-চতুর্থাংশ ফেল করে। শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার জন্য যেমন শিক্ষকের ঘাটতি দায়ি, তেমনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অস্বাভাবিকভাবে পাশের হার বাড়ানো, অটোপাশের প্রবণতা, নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ সনদ বাণিজ্য, করোনা মহামারির সময় দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, অধিকাংশ শিক্ষককের প্রশিক্ষণ না থাকা, যত্রতত্র অনার্স ও মাস্টার্স চালু করা ইত্যাদি দায়ী। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক কর্ম নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। ইউনিসেফের ২০২১ সালের তথ্য মতে, মৌলিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৫২% ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ৪২%। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিবিএস’র তথ্য মতে, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে প্রাথমিকে ৫৩%, মাধ্যমিকে ৩৭.৪৭% ও উচ্চশিক্ষায় প্রায় ১১%। অধিকাংশ শিক্ষককের প্রশিক্ষণ নেই!
দেশে সরকারিভাবে শিক্ষা ব্যয়ও স্বল্প। ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ মতে, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মোট খরচের ৭১% বহন করে শিক্ষার্থীদের পরিবার, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। শিক্ষা খাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের পথে প্রধান অন্তরায়। গত দশকে বাংলাদেশ সরকার মোট জিডিপির ২.৫% কম খরচ করেছে শিক্ষা খাতে, যা জাতিসংঘের সুপারিশ করা ৪% সীমার অনেক নিচে।’ ২০২১ সালে একওর জরিপকৃত ১৯৭টি দেশের জাতীয় শিক্ষা খাতে গড়ে জিডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ৪.৫%, যা বাংলাদেশ মাত্র ১.৩%। জরিপকৃত ১৯৭টি দেশের মধ্যে ১৮২টি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যেও সবচেয়ে কম খরচ করে বাংলাদেশ। শিক্ষা ব্যয়ের ৭১% শিক্ষার্থীদের বহন করার কারণে গরিব শিক্ষার্থীদের বিরাট অংশ ঝরে পড়ছে। এতে সর্বজনীন শিক্ষার লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। উপরন্তু শিক্ষা বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘প্রাথমিকে ঝরে পড়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৬০%। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তা ২৫-৩০% হয়। আর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আসতে পারে মাত্র ১০-১২% শিক্ষার্থী। যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়, তাদের শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে সংশয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত শিক্ষার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০২২ সালের অর্ধেক সময় চলে গেলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে দেশ।’ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও মান খারাপ। এশিয়া ও বৈশ্বিক সূচকে এক হাজার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেশের মাত্র দু’তিনটা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পাচ্ছে। তারও অবস্থান তালিকায় নি¤েœ। স্কুল-কলেজেরও মান তথৈবচ! দেশের শিক্ষা খাতের এই দৈনদশা কোনো গরিব দেশেও নেই!
শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ার ও শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার প্রভাব পড়ছে সর্বত্রই। যেমন: একদিকে চলছে ভয়াবহ বেকারত্ব, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকের অভাবে উন্নয়ন কর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বেসরকারি খাতের অনেকেই বিদেশ থেকে দক্ষ লোক এনে কাজ করছে অধিক বেতন দিয়ে। বিআইডিএস’র তথ্য মতে, দেশে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার। প্রতিবছর চাকরির বাজারে ঢুকছে ২৬ লাখ তরুণ। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ লাখ তরুণের চাকরি হচ্ছে (তন্মধ্যে সরকারি সর্বোচ্চ ৪%)। বাকিরা থাকে চাকরিহীন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সূত্রধরের অভিমত হচ্ছে, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যেন অনার্স, মাস্টার্স পাসের মেশিন। আমরা বুঝে হোক, না বুঝে হোক প্রচুর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি। অথচ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছি না। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় এখনও মানুষের অনাগ্রহ লক্ষ করার মতো। অথচ এটি হতে পারত মুক্তির উপায়।’ অদক্ষতার কারণে প্রবাসীদেরও আয় অনেক কম অন্য দেশের তুলনায়! বিশ্বব্যাংক ও নোম্যাডের প্রতিবেদন মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের গড় মাসিক মজুরি (মার্কিন ডলার) বাংলাদেশিদের ২০৩, পাকিস্তানিদের ২৭৬, ভারতীয়দের ৩৯৬, চীনাদের ৫৩৩ ও ফিলিপিনোদের ৫৬৪ ডলার। ইউএনডিপির বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক-২০২১ মতে, ১৫৪টি দেশের মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ (প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ১১৯তম, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ৭৭তম, উচ্চশিক্ষায় ১২২তম, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে ১৩৬তম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১১৭তম, অর্থনীতিতে ১০১তম এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশে ১৩৪তম)। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মী জোগান দিলেও আয়ের দিক দিয়ে অষ্টম। ইউনিসেফের সমীক্ষা রিপোর্ট-২০২২ মতে, ডিজিটাল দক্ষতায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ১৫-২৪ বছর বয়সী বাংলাদেশিরা ভুটান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে। বাংলাদেশের প্রায় ৮৫% তরুণ-তরুণীর ডিজিটাল দক্ষতা নেই।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এমসিসিআই আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘একাডেমির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির কাজ করা প্রয়োজন। ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা বুঝে একাডেমি তার পঠন পদ্ধতি ঠিক করতে পারবে। ফলে একাডেমি থেকে দক্ষ জনসম্পদ তৈরি হবে, যা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে এলে একাডেমিতে যেমন বড় গবেষণা হবে, তেমনি নতুন আবিষ্কার হওয়াও সম্ভব। এক্ষেত্রে একাডেমিকে মেধা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’ গত ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি শিশু শ্রেণিসহ প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। এদিকে, বিশ্বব্যাপী চতুর্থ শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছে।এ বিপ্লবে আমাদেরও শামিল হতে হবে। অন্যথায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন। গত ১ জানুয়ারি থেকে দেশে নতুন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত: শিক্ষার্থীরা কিছু বই পেলেও সব বই এখনো পায়নি। কবে পাবে তাও বলা কঠিন। তৃতীয়ত: চরম বিতর্কিত বিষয় থাকায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে দু’টি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদিকে, নতুন শিক্ষা আইন করার জন্য ২০১১ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কবে হবে তা বলা কঠিন।
শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। তাই বিশ্বের সব দেশেই শিক্ষার উন্নতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কর্মমুখী ও মানসম্মত শিক্ষাই হচ্ছে টেকসই ও সার্বিক উন্নতির মূল ভিত্তি। তবুও দেশের শিক্ষা মূলত সেকেলেই রয়েছে। উপরন্তু অর্ধেকের বেশি শিক্ষক ও স্টাফের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। সর্বোপরি নানা সংকটও বিদ্যমান। শিক্ষা খাতে এসব সংকট কল্পনাতীত বিষয়। উপরন্তু দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই অবিলম্বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে কর্মমুখী এবং শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের মান বিশ্বমানের করতে হবে। সে লক্ষ্যে কারিগরিসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও স্টাফের শূন্য পদ নিরপেক্ষভাবে পূরণ, সব শিক্ষককে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ, উচ্চ শিক্ষায় পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রকাশনা বাধ্যতামূলক করা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাধ্যতামূলক করা, সর্বদা সর্বশেষ আবিষ্কৃত বিষয়কে পাঠ্যসূচিভুক্ত করা, কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের ন্যায় ছেলেদের উপ বৃত্তি চালু, শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, দলবাজি, হানাহানি ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ করা আবশ্যক। এসব হলেই শিক্ষার মান বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের এমডিও গত বছরের ২২ জানুয়ারি বলেছেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ কমলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বাড়ে। বাংলাদেশে শিক্ষায় বিনিয়োগে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। শিক্ষা সব দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ জন্য ভোকেশনাল, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
দেশে নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে কম গুরুত্ব দেওয়ায় এটা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: ইসলামী নীতি ও সংস্কৃতি এ দেশের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। তাই ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। নতুবা আধিপত্যবাদীরা এ দেশের সব কিছু গ্রাস করে ফেলবে। বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজিতে দক্ষ না হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। তাই এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন