রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

বরিশাল সেক্টরে রাষ্ট্রীয় বিমান এবার উল্টো পথে হাঁটছে

বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ভাড়া হ্রাসের প্রতিযোগিতায় বিমান বৃদ্ধি করছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১১:৫৯ এএম

দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আকাশ পথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর রহস্যজনক ব্যর্থতার পরে এবার রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি উল্টোপথে হাটতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু চালুর খোড়া অজুহাতে গত ৫ আগষ্ট থেকে প্রতিদিনের নিয়মিত ফ্লাইট সপ্তাহে ৩ দিনে হ্রাস করার পরে ১ মার্চ থেকে বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর ভাড়া ৩ হাজার থেকে ৩২শ টাকায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তবে একই দিন থেকে বেসরকারী নভো এয়ার ২৮শ টাকায় যাত্রী পরিবহনের ঘোষনা দিয়ে আবার ফিরছে বরিশালের আকাশে। ইউএস বাংলা এয়ার সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় হ্রাস করে প্রতিদিন বিকেলে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনের পরে খুব শিঘ্রই বরিশাল সেক্টরে সকালের দিকে দ্বিতীয় ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহনের চিন্তা করছে। তবে সপ্তাহে ৪ দিন বিমান-এর ফ্লাইট না থাকার সুযোগে বেসরকারী এয়ারলাইন্সটি ১০ হাজার ৬শ টাকায়ও বরিশাল সেক্টরে যাত্রী পরিবহন করছে।
একদিকে সপ্তাহে মাত্র ৩দিন ফ্লাইট পরিচালনা, অপর দিকে যাত্রী বান্ধব সময়সূচী না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় বিমান-এ ভ্রমনে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের আগ্রহ ইতোমধ্যে তলানীতে ঠেকেছে। এমনকি বরিশাল সেক্টরের প্রতি বিমান-এর সীমাহীন উদাশীনতা ও অবহেলায় মাত্র ৬১ এ্যরোনটিক্যাল মাইলের দেশের স্বল্প দুরত্বের বরিশাল সেক্টরের আকাশ পথে বেসরকারী এয়ারলইন্স প্রায়সই ঢাকাÑকোলকাতার চেয়েও বেশী ভাড়া আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারন যাত্রীদের হতাশা ইতোমধ্যে ক্ষোভেও পরিনত হলেও রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটির তেমন কোন হেলদোল নেই।
এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র আকাশ পথে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান-এর সীমাহীন উদাশীনতা ও অবহেলাকে ‘যাত্রীদের দূর্ভোগের বিনিময়ে বেসরকারী এয়ারলাইন্স-এর জন্য অনৈতিক সুবিধা প্রদানের নামন্তর’ বলেও অবিহিত করছেন অনেক যাত্রী। পাশপাশি এ বিষয়টি আসন্ন বরিশাল সিটি নির্বাচন সহ জাতীয় নির্বাচনেও সরকারী দলকে যথেষ্ঠ বেকায়দায় ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বরিশাল বিমান বন্দর ও জাতীয় পতাকাবাহী বিমান ফ্লাইট চালুর পারে দীর্ঘ চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে ২০২১-এর ২৬ মার্চ বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর দৈনিক ফ্লাইট চালু হয়। সে থেকে অত্যন্ত নির্ভরতায় অন্য দুটি বেসরকারী এয়ারলাইন্স-এর সাথে সুষ্ঠু প্রতিযোগীতার মাধ্যমে এ সেক্টরে বানিজ্যিক পরিচালন অব্যাহত রাখছিল রাষ্ট্রীয় বিমান। অভিযোগ রয়েছে, গত বছর ২৭ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরে একটি মহল তৎপড় হয়ে ওঠে বরিশাল সেক্টরকে বেসরকারী এয়ারলইন্স-এর একক বানিজ্যের জন্য নির্দিষ্ট করতে।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগাতে গত বছর ঈদ উল আজহা পরবর্তি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কর্মস্থলে ফিরে যাবার পরে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে চলাচল সাময়িকভাবে সিমিত থাকার সুযোগে বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর দৈনিক ফ্লাইট সপ্তাহে ৩ দিনে হ্রাস করা হয়। এমনকি গত অক্টোবরের শেষ ভাগে কার্যকর শীতকালীন সময়মসূচীতে বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর সময়সূচী যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় সাধারন যাত্রীগন রাষ্ট্রীয় বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন। এযাবতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং অন্য ৬ দিন সকালে বরিশাল সেক্টরে বিমান চলাচল করলেও এখন তা দুপুরে নির্ধারন করায় রাষ্ট্রীয় বিমানে ভ্রমনে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী সাধারন ক্রমশ আগ্রহ হারাচ্ছেন। পাশাপাশি ‘সপ্তাহে কোন ৩দিন বিমান চলাচল করে, তা খুজে যাতায়াত করতেও সাধারন মানুষের তেমন কোন আগ্রহ নেই। যাত্রীদের অভিযোগ ‘বিমান-এ ভ্রমনের জন্য তারা ঢাকায় যান না, ঢাকায় যাবার জন্যই বিমান’কে ব্যবহার করতে চান’।
বর্তমানে বৃহস্পতি, শুক্র ও রোববার বিমান দুপুরের দিকে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও অবশিষ্ট ৪ দিন বিকেলে বেসরকারী এয়ারলাইন্সে ৩ হাজার টাকার টিকেট ১০ হাজার ৬শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। ‘ফলে রাষ্ট্রীয় বিমান-এর নিয়মিত ফ্লাইটের কোন বিকল্প নেই’ বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।
এ ব্যাপারে বিমান-এর বরিশাল সেলস অফিসের জেলা ব্যাবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য না করে ‘এখানের সার্বিক পরিস্থিতি কতৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হয়ে থাকে’ বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে বিমান-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক জনাব শফিউল আজিম-এর সাথে সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি ‘বরিশাল সেক্টর নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহনের চেষ্টা চলছে’ বলে জানান। ‘বরিশাল সেক্টরের ফ্লাইট সময় সূচী যাত্রী বান্ধব নয়’ বলে স্বীকার করে, এরফলে ‘ফ্লাইট লোড হ্রাস’ পাবার বিষয়টির সাথেও একমত পোষন করেন তিনি। ‘সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই ইতিবাচক ধারায় ফেরার চেষ্টা চলছে’ বলে জানিয়ে ক্রু সংকটের কারণেও খুব দ্রত সব কিছু ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বিমান-এর প্রধান নির্বাহী।
তবে নানামুখি আত্মঘাতি কর্মকান্ড ও যাত্রী বান্ধব সময়সূচী থেকে সরে আসার পরেও গত বছর বরিশাল সেক্টরে বিমান-এ যাত্রী ভ্রমনের হার ছিল ফ্লাইট প্রতি ৭০%-এরও বেশী। এমনকি বরিশাল সেলস অফিসে রাজস্ব আয় এখনো লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুন বলে জানা গেছে।
সাধারন যাত্রীদের তরফ থেকে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন সময় সূচীতে বরিশাল সেক্টরে প্রতিদিন সকালে ও বৃহস্পতিবার বিকেলে ফ্লাইট পরিচালন-এর পাশাপাশি এখান থেকে যশোর ও চট্টগ্রমের ফ্লাইট চালুরও দাবী জানান হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিমান-এর পরিচালক প্রশাসন এবং মার্কেটিং ও সেলস সিদ্দিকুর রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘এয়ারক্রাফট ও ক্রু সংকটের কারণে বরিশাল সেক্টর নিয়ে আমরা কিছু সমস্যায় আছি। বিদ্যমান ফ্লাইটের পাশাপশি আমরা চেষ্টা করছি বরিশাল থেকে চট্টগ্রামেরও ফ্লাইট চালু করতে’। তবে ঠিক কবে নাগাদ এটা সম্ভব হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও ‘যতদ্রুত সম্ভব এটা করার চেষ্টা চলছে’ বলেও জানান তিনি।
তবে যাত্রী সাধারনের পক্ষ থেকে বরিশালে সেক্টরে বিদ্যমান ফ্লাইটগুলো সকালে পরিচালনের পাশাপাশি ঢাকা-বরিশাল-চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-বরিশাল-ঢাকার আকাশ পথে সকালের দিকে পরিচালনের দাবী জানান হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা-বরিশালÑযশোর-ঢাকা এবং ঢাকা-যশোর-বরিশাল-ঢাকা রুটেও বিমান ফ্লাইট পারিচালনের দাবী জানান হয়েছে।
এদিকে অন্যসব সেলস অফিসের মত বিমান-এর বরিশাল সেলস অফিস থেকেও দেশ বিদেশের যেকোন রুটের টিকেট সংগ্রহের পাশাপাশি ফ্লাইট সিডিউল কণফার্ম সহ যেকোন সেবা প্রদান করায় আকাশ পথের যাত্রীরা নিজের এলাকা থেকেই বিমান-এর যেকোন সেবা লাভ করছেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন