কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রক্টও চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। হল প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটরও ব্যর্থ। ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন, ভিডিও ধারণের ঘটনায় তারা অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। ফুলপরী খাতুনকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এসব কথা বলা হয়েছে হাইকোর্টের নিদেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আজ (বুধবার) আদেশের জন্য ধার্য রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চে দাখিল করা হয়েছে এ প্রতিবেদন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আ ন ম আবুজর গিফারী, কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: শাহাবুল আলম তদন্ত শেষে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ কমিটি গঠন করেন। বিচার বিভাগীয় এ তদন্তে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।
এর আগে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। পরে আদালতের নির্দেশে প্রতিবেদনগুলো পাঠ করে শোনান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা প্রত্যেককে নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেয়। সবাই মিলে অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করে।
এছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থাতেই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, মোয়াবিয়ারাসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করে। এক পর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবর মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।
প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড.শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল-মর্মে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
এ প্রতিবেদন উপস্থাপনকারে আদালত জানতে চান এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ৫ জনকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে র্যাগিং ও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এই অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যাক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জড়িত ছিলেন।
এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন হুমকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য ১ মার্চ (বুধবার) ধার্য রাখেন। সেইসঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন ও বিধি সংগ্রহ করতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতে বলা হয়েছে।
এ সময় রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী মো: মোহসীন উপস্থিত ছিলেন। পরে এই আইনজীবী বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই হলের প্রভোস্ট, হাউজ টিউটরদের দায়িত্বে চরম অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি বলেন, হলের প্রভোস্টের সামনে এই ঘটনার পরও নির্বিকার ছিলেন। বরং তিনি অভিযুক্তদেরকেই সহযোগিতা করেছেন। তিনি ভিকটিমকে কোনো সহযোগিতা করেননি। জুডিশিয়ারি রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উদাসীনতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। আদালত তদন্ত রিপোর্ট দেখে বুধবার রায় দেবেন।
প্রসঙ্গত: গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তার আগের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা সচিব, ইবির ভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন