দেশে পঞ্চমবারের মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ভোটার দিবস । এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘‘ভোটার হব নিয়ম মেনে ,ভোট দিব যোগ্যজনে‘‘। ভোটার দিবসে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় ।দেশে মোট ভোটার সংখ্যা দাড়ালো ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন । মৃত্যু জনিত কারণে বর্তমান ভোটার তালিকা হতে ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জনের নাম কর্তন করা হয়েছে । এবার নতুন ভোটার হয়েছে ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৮ জন ।ভোটার বৃদ্বির হার ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহৎ সংখ্যক ভোটার যাতে অবাধ,সুষ্ঠু,সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান মাননীয় নির্বাচন কমিশন সর্বপ্রথম আইনের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন । ভোটারের দৃষ্টিভঙ্গিতে যোগ্য প্রার্থীকে যাতে ভোটারগণ সুষ্ঠ পরিবেশে ভোট প্রদান করতে পারে । যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি তার আসনের লোকদের জন্য উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবেন। সুখে-দু:খে জনগণের পাশে থাকবেন। নিজ- নিজ আসনের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশও এগিয়ে যাবে এরূপ ব্যক্তিই ভোটারের দৃষ্টিতে যোগ্য জন। পাঁচ বছরে একবারের জন্য হলেও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এসে ভোটারদের সময় দিবেন । ভোটারগণ তাঁদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে বলবেন। এরুপ একজন জনপ্রতিনিধি ভোটারদের কাছে নির্বাচনে যোগ্য জন । এর ব্যতিক্রম হলেই পাঁচ বছর পরে ভোটারগণ গোপন কক্ষে নিজেদের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন প্রয়োগ করতে ভুল করেনা । এরুপ যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে নির্বাচন কমিশনের নিকট সুষ্ঠু,সুন্দর,অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ প্রত্যাশা করে ।
অন্যদিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চোখে প্রার্থীর যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা বাছাই এর চিত্র ভিন্ন ।যেমনটা উল্লেখ আছে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে ।(১)কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হইলে এবং তাহার বয়স পঁচিশ বতসর পূর্ণ হইলে এই অনুচ্ছেদের (২)দফায় বর্ণিত বিধান- সাপেক্ষে তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন।আবার অযোগ্য প্রার্থীর ব্যাপারেও সংবিাধানের একই অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে ।
(২)কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না,যদি
(ক)কোন উপযুক্ত আদালত তাঁহাকে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করেন ;
(খ)তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন ;
(গ)তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন ;
(ঘ)তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যুন দুই বতসরে কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে ;
উপরোল্লিখিত যোগ্যতা অযোগ্যতা কোনটাই যদি হিরো আলমের জন্য বাধা না হয়ে দাড়ায় তবে তিনি এমপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থী অপেক্ষা আর ৮৩৪ ভোট পেলে সংসদে যেতে বাধা ছিলোনা । তখন হিরো আলমকে নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা নেগেিেটভ কলাম,্ইউটিউবের ফলোয়ার, ফেসবুকের লাইক শেয়ার ভিন্নমাত্রায় রুপ নিতে পারত ।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত তারিখ ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারীর পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে।সে মোতাবেক জাতীয় ভোটার দিবস ২মার্চ-২০২৩ খ্রী: তারিখ হতে ১০ মাস ২৮ দিন সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে । বর্তমান নির্বাচন কমিশন আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ৫ টি লক্ষ যথাক্রমে অংশগ্রহণমূলক,স্বচ্ছ,নিরপেক্ষ,গ্রহণযোগ্য এবং সুষ্ঠ নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য ৩৯ টি রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সাথে সংলাপ সম্পন্ন করেন । সংলাপে উঠে আসে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের বাধা ১৪ টি এবং উক্ত বাধাগুলো উত্তরণের জন্য ১৯ টি উপায় ঠিক করেন মাননীয় নির্বাচন কমিশন ।উক্ত বাধাগুলোর প্রথমটিই ছিলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থাহীনতা। নির্বাচন কমিশনও মনে করেন সুষ্ঠ নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হলে কমিশনের উপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কমিশনের প্রতি এই আস্থা রক্ষার সাথে জড়িত মাঠ প্রশাসন।যাদেরকে অনেক প্রতিকুল পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় । যারা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সরাসরি দায়িত্ব পালণ করে থাকেন । বর্তমানে প্রধান দুইদলের ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে এবং তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ইভিএম এর মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নিজনিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় দেখা দিয়েছে ।
তবে ইভিএম প্রকল্প একনেকে অনুমোদন না পাওয়ায় প্রথমদিকে অর্ধেক আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলেও বর্তমানে সেখান থেকেও সরে আসার আভাস দিয়েছে খোদ নির্বাচন কমিশন । বিগত সকল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিরপেক্ষতার পরিচয় দিলেও মেশিনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলো অনাস্থার প্রেক্ষিতে বিষয়টি কমিশনের ভাবনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। গণতন্ত্র সূচকে গত বছরের চেয়ে দুইধাপ এগিয়ে বিশ্বের মধ্যে ৭৩ তম অবস্থানে বাংলাদেশ ।যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট(ইআইইউ)২০২২ সালের প্রকাশিত তথ্যচিত্রে বিষয়টি উঠে এসেছে । গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব জনগণের হাতে ।আর জনগণ বলি আর ভোটারই বলি তাদেরকে যদি স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সঠিক পরিবেশ তৈরী করে না দেয়া হয় তাহলে প্রতিবারই গণতন্ত্রের সুবচন নির্বাসনে যাবে ।
দেশের নাগরিকদের স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকারকে নিশিচত করতে পারলেই গণতন্ত্রের পথ অনেকথানি সুগম হয় ।কারণ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ এ পদ্ধতির সাথে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা যেমন জড়িত তেমনিভাবে কথা বলা ও মত প্রকাশের স্বধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় ।প্রতিষ্ঠিত হয় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা । যা তাদেও সাংবিধানিক অধিকার ।কারণ গণতানিত্রক এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার যেমন গ্রহণযোগ্যতা পায় তেমনিভাবে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রতিষ্ঠিত হয়।বিরোধীদল সরকারের গঠণমূলক সমালোচনা করে ।ফলে দেশে উন্নয়নের ধারায় এগুতে থাকে ।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে তিনবার যথাক্রমে খন্দকার মোশতাক,জেনারেল এরশাদ এবং মঈন ইউ আহমেদ করলেও বর্তমান সরকার আইন পাশ করে ছাপ জানিয়ে দিয়েছেন দেশের ক্ষমতা সামরিক বাহিণীর হাতে আশার কোন সুযোগ নাই ।তাই গণতন্ত্র সুসংহত রাখতে হলে নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই । সুষ্ঠ ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জড়িত। যা ব্যতীত শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতাসিনদল এবং বিরোধীদলের মধ্যে নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত সরকারের বিতর্ক শোনা যায় না।কিন্ত আমাদের দেশের পার্লমেন্ট এবং দেশ -বিদেশে এ বিষয়টি বক্তব্যের শিরোনাম হওয়ায় টোটাল নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ভু-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বহিরাষ্টগুলো মাথা ঘামানোর সুযোগ তৈরী হয় । তাই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে দেশের ভাবমূর্তি দারুনভাবে ব্যহত হয় ।
মসনদে যাওয়ার বা টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় আক্রমনাত্মক চরম ভ’মিকার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় ।তাই রাজনীতির মাঠে সমঝোতা প্রয়োজন ।নির্বাচন অঙ্গন থেকে হেবিওয়েট প্রার্থীদের কেন্দ্র দখলের সংস্কৃতি যেমন ছাড়তে হবে তেমনিভাবে সুষ্ঠভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও ভোটবর্জনের মত কৌশল হতে বের হয়ে আসতে হবে ।অন্যদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের যে কোন মূল্যে জেতার মানুষিকতা এবং হেরে গেলে মেনে না নেয়ার প্রবনতা নির্বাচনী সহিংসতা ঘটার প্রবনতাকে বাড়িয়ে দেয় । ভোটে জনগণের পছন্দের যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের জন্য অবশ্যই নিজনিজ দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।যারা দীর্ঘ দিন যাবত দলের জন্য নিবেদিত তাদেরকে বাদ দিয়ে যখন হেবিওয়েট প্রার্থীগণ দলীয় মনোনয়ন পান তখন মাঠ পর্যায়ে নিজ দলের ভীতরে আত্ম কোন্দল চরমরুপ ধারণ করে ।ফলে নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যায়। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মানেই যখন জনপ্রতিনিধি হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয় তখন অবৈধ অর্থ ও পেশি শক্তির প্রয়োগ করতে থাকে ।তবে ভোটারদের নিকট যোগ্য প্রার্থী হলে তার ফলাফল নির্ধারণ হয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে।কিন্ত দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত হেবিওয়েট সম্পন্ন অথচ ভোটারদের নিকট অযোগ্য প্রার্থী তখনই তার বিপরীতে নিজদল থেকেই অন্যকেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করেন।এ কারণে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পরিবর্তে সতন্ত্র প্রার্থী এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায় । নির্বাচন আর গণতন্ত্র একসূত্রে গাঁথা ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে স্মার্ট ও উন্নত রাষ্ট হিসেবে রুপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের যে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ।তা পূর্ণতায় রুপদিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ,সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । । বিশ্ব মহামারী করোনা অর্থনৈতিক অচলাবস্থার সাথে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ যোগ হয়েছে ।ফলে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের শতবছরের অর্থনৈতিক ভিত ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।বিশ্বের এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও আমাদের দেশের চলমান উন্নয়ন বিশ্বের নজর কেড়েছে। পদ্মাসেতু ,পায়রাবন্দর ,মেট্রোরেল,এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়ন সেই স্বাক্ষই দেয় । উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই শুধু দরকার লেবেল প্লেইং ফ্লিল্ড তৈরীর মাধ্যমে ভোট প্রদানের সঠিক পরিবেশ তৈরী করা । ফলে নির্বাচিত হবে ভোটারদের যোগ্যজন । এ প্রত্যাশা দেশবাসীর ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন