খুলনায় বুধবার ভোর থেকে চলছে চিকিৎসকদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি। শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ এর উপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতি চলবে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) ভোর ৬টা পর্যন্ত। হাসপাতাল গুলোতে জরূরী বিভাগ খোলা থাকলেও বর্হিবিভাগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, যে রোগির চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসককে পেটানো হয়েছে, সেই চিকিৎসক ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ এবং হক নার্সিং হোমের মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেল রোগির মা নুসরাত আরা ময়না । ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহ তাকে হোয়াটস এ্যাপে এবং চেম্বারে নানাভাবে যৌন হয়রানি এবং তার ৬ বছর বয়সী মেয়ে (রোগি) অথৈ কে চিকিৎসার নামে নির্মম নির্যাতন করেছেন বলে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন। বুধবার দুপুরে কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা থানায় তিনি মামলাটি করেন। এ ঘটনায় দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন এএসআই নাঈমুজ্জামানের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না।
এজাহারে তিনি বলেছেন, তার ৬ বছর বয়সি মেয়ে অথৈ এর হাতের আঙুল সার্জারি করার জন্য গত বছর ২১ আগষ্ট তিনি আবু নাসের হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ তাকে হক নার্সিং হোমে যেতে বলেন। এবছর ১৭ জানুয়ারী তিনি মেয়েকে নিয়ে গেলে পরদিন ১৮ জানুয়ারী অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকে চিকিৎসার ধারাবাহিকতার নামে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ তাকে যৌন হয়রানি করতে থাকেন। হোয়াটস এ্যাপ নাম্বার নিয়ে সেখানে বিভিন্ন কু প্রস্তাব দিতে থাকেন। বারবার তাকে একা দেখা করতে বলেন। এরই মধ্যে মেয়ের হাতের অবস্থা জটিল হলে ৬ ফেব্রুয়ারি হক নার্সিং হোমে গেলে অপারেশন থিয়েটারে তাকে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ গালিগালাজ করেন। এবং মেয়ের চিকিৎসা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। নুসরাত আরা ময়না তখন ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ ডাকেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি মেয়েকে ড্রেসিং করাতে নিয়ে গেলে মেয়ের ক্ষতযুক্ত হাতে আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। বিষয়টি ক্লিনিকের মালিক ডা. নুরুল হক ফকিরকে জানালে তিনি উল্টো শাসিয়ে দেন। বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেন।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা বের হয়ে আসবে।
বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলম বলেন, চিকিৎসকেরা আর কত মার খাবে? এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা প্রতিবাদ করছি। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা। তিনি বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পুলিশের এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা ডা. শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারে ভাংচুর চালায় তারা। এক মাস আগে অপারেশন করা রোগীর জটিলতার কথা বলে তারা এই হামলা চালায়। ডা. নিশাত বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে এ মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তিনি বলেন, মামলা হয়েছে, আসামী গ্রেপ্তার হলে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন