জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর সাথে সামঞ্জস্য করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার আলোকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) বুধবার (১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে “প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশা” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. আব্দুল আজিজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. শাহ আলম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এন. আই. ভূঁইয়া, এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃকর্মীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডরপ’র নির্বাহী উপদেষ্টা ও অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আজহার আলী তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডরপ একটি উপস্থাপনা তুলে ধরে। উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়, গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী দেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ বয়সী তামাক পণ্য ব্যবহারাকারীর হার ৩৫.৩%। পরোক্ষ ধূমপায়ীর হার ১৮%। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার ২০.৬%। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য (২০১৮) অনুযায়ী দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিদিন প্রায় ৪৪৪ জন মানুষ মারা যায়।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী তথা এফসিটিসি-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।
ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশে সাংসদবৃন্দের ইতিবাচক ভূমিকা রাখা জরুরি। এছাড়াও জনগণের কাছে যেহেতু গণমাধ্যমই দ্রুততম সময়ে পৌঁছে তাই আইনটির পক্ষে জনমত প্রভাবিত করতে তাদেরই সক্রিয় অবস্থান নিতে হবে।
ডা. মো. শাহ আলম বলেন, তামাকের জন্য হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সবাই জানেন। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে ক্ষতি করছে তা নিরোধ করতে খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত পাশ হওয়া জরুরি। ডা. এন. আই. ভূঁইয়া বলেন, ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের পক্ষে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণা বন্ধ করতেই হবে। স্বাস্থ্যের জন্য যেহেতু এটি মারাত্মক ঝুঁকি তাই এর পক্ষে কথা বলার কোনও সুযোগ নেই। তিনি আরও মন্তব্য করেন গণমাধ্যমকর্মীরা যদি আইনটি পাশের জন্য নিয়মিত সংবাদ ও কন্টেন্ট প্রচার করেন তাহলে নীতিনির্ধারকরাও দ্রুতই এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেবেন।
মুক্ত আলোচনা পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী) এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত দেন। তারা বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুততম সময়ে মন্ত্রীপরিষদ ও সংসদে পাশের প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিড়ি শ্রমিক, ডরপ মাতৃ সংসদের সদস্যরা এবং যুব ফোরামের সদস্যরা জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশের দাবি জানান এবং গণমাধ্যমকে তাদের অবস্থান থেকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির আহবান জানান।
ডরপ বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডরপ বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন