চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ পালিত হওয়ার কথা। তার আগে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হজ পালনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করা আবশ্যক। প্রতি বছরই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হজ পালনে ইচ্ছুকদের সউদী আরব যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এবার এই প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে। এতে হজ পালনে ইচ্ছুকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। মূল কারণ, হজে যাওয়ার খরচ অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়া এবং হজ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজের খরচ বেড়ে যাওয়া, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং ডলার সঙ্কটের কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে। হজ নিবন্ধনের সময় তিন দফা বৃদ্ধি করেও গমনেচ্ছুদের আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। প্রাক নিবন্ধন করেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। নিবন্ধনের চিত্রটি হতাশাজনক। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে হজযাত্রীর সংখ্যা হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার ৬৮ জন । সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজারের বিপরীতে হয়েছে ৮ হাজার ২৪ জন। খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ার কারণ মক্কা-মদীনায় হাজীদের বাড়িভাড়া নিয়ে কমিশন বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি। দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এবার হজ পালনের খরচ হিসেবে সরকারিভাবে ধরা হয়েছে, ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারিভাবে ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এত অর্থ ব্যয় করে হজ পালন করা অনেকের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। হজ পালনের সামর্থ্য না থাকায় অনেকে ওমরাহ পালন করছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পরম আরাধ্য থাকে জীবনে একবার হলেও হজ পালন করা। হজ ফরজ এবাদতের মধ্যে অন্যতম। এই এবাদতের সাথে শারিরীক ও আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি জড়িয়ে আছে। এক সময় মুসলমানরা হজ পালনের জন্য নৌপথ ব্যবহার করতেন। অনেকে পায়ে হেঁটে হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করেও হজ পালন করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ এখন উড়োজাহাজে সউদী আরব গিয়ে সহজে হজ পালন করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে বছরের পর বছর ধরে উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচাদি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজ পালন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হজ নিবন্ধনের চিত্র থেকেই তা বোঝা যায়। এর মধ্যে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা হজে গমনেচ্ছুদের জন্য অন্তরায় হয়ে রয়েছে। এ বছর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অযৌক্তিকভাবে বিমানের ভাড়া গত বছরের চেয়ে ৫৭ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে হাব নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ হজ পালন করতে যান, তাদের অধিকাংশই নি¤œ ও মধ্যবিত্ত। সারাজীবনের উপার্জন থেকে জমিয়ে হজের প্রস্তুতি নেন। এ বছর হজের প্যাকেজ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক হজযাত্রী অর্থ জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। ফলে অনেকে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েও পিছিয়ে যাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
হজ নিয়ে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি দেখানো অনাকাক্সিক্ষত। বরং মানুষ যাতে সহজে হজ পালন করতে পারে, এ ব্যাপারে সেবামূলক মানসিকতা ও সহযোগিতা কাম্য। সরকারেরও এ দিকটি দেখা দরকার। সরকার বহু ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়। অনেক প্রকল্পে অর্থ অপচয় ও লোপাট হয়। এ বিবেচনায় পবিত্র হজের ক্ষেত্রে সরকার কিছু ভর্তুকি দিতে পারে। এই ভর্তুকির পরিমাণ যে খুব বেশি হবে, তা নয়। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভর্তুকি দিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে প্যাকেজ নির্ধারণ করলে হজ পালনে ইচ্ছুক অনেকে উপকৃত হবেন। দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরই হজের প্যাকেজ মূল্য বৃদ্ধির ফলে অনেকের পক্ষে হজ করার আশা তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে। এবারেও সেটা দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় মানুষের হজের খরচ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। হজে যাওয়া শুধু আকশপথে সীমাবদ্ধ না রেখে নৌ ও স্থল পথে সাশ্রয়ে কীভাবে যাওয়া যায়, এ বিকল্প ভাবা উচিত। এতে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। হজ পালনে ইচ্ছুকদের সামনে বিকল্প ব্যবস্থা থাকলে তারা উৎসাহী হয়ে উঠবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন