সিলেটে ২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শানে রিসালত মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা ময়দানে সকাল ১১টায় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, রহমতে আলম প্রিয়নবী (সা.) হলেন আমাদের জন্য মুক্তির ওসীলা। তিনি দুনিয়ায় প্রেরিত হওয়ার আগে আহলে কিতাবরা যখন কাফিরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো, বাহ্যিক উপকরণ ব্যবহার করেও সফলতা লাভ করতে পারতো না। তখন তারা নবী করীম (সা.) এর ওসীলা নিয়ে দুআ করতো। ইনজীল কিতাবে যেখানে নবী করীম (সা.) এর নাম আছে, সেখানে হাত দিয়ে তারা বিজয় কামনা করতো। সঙ্গে সঙ্গে বিজয় অর্জিত হতো।
মিসরের প্রখ্যাত বুযুর্গ আল্লামা মুহাম্মদ ইবরাহীম আব্দুল বাইছ আল কিত্তানী বলেন, একজন মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো নবীজির সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা। কারণ নবীর সাথে অন্তরের দূরত্ব থাকলে মানুষ কুফরীর দিকে ধাবিত হয়। নবীজি থেকে দূরে থাকার শেষ পরিণতি হয় নাস্তিক্যবাদ। নবীর সাথে যত বেশি সম্পর্ক হবে ঈমান তত বৃদ্ধি পাবে।
সায়্যিদ আল হাবীব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস বলেন, ঈমানের পূর্বশর্ত হলো, নবী করীম (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা। নবীর প্রতি ভালোবাসা না থাকলে নামায, রোযা, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি কোনো কিছু কাজে আসবে না।
তুরস্কের ইয়ালোভা ইউনিভিার্সিটির অধ্যাপক প্রফেসর ড. আব্দুল কাদির আল হোসাইন বলেন, মিলাদ মাহফিল শুধু হিন্দুস্থানে নয়, পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশেই হয়ে থাকে। আপনি মরক্কো, মিসর, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ যেখানেই যান, আহলে সুন্নতের মানুষদের মীলাদ মাহফিল করতে দেখবেন। যারা মিলাদ মাহফিল মানতে চায় না তারা আপনাদেরকে বলবে, এটা কুরুনে ছালাছায় হয়নি। আপনি বলবেন কুরুনে ছালাছায় হয়নি, এটা কোনো বিষয় নিষেধ হওয়ার দলীল না। মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায়। এর স্বপক্ষে অনেক ঘটনা পাওয়া যায়।
মিসরের ড. আহমদ আশ-শরীফ আল আযহারী বলেন, কিছু লোক আছে যারা নিজেদেরকে মুজতাহিদ মনে করে। তারা বলে, আগেকার ইমামরাও মানুষ, আমরাও মানুষ। কত জঘন্য কথা। তারা কি ইমাম আবু হানীফার মতো হয়ে গেছে? যিনি সাতজন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়ে তাবেঈ হয়েছেন। তারা কি ইমাম মালিকের মতো হয়ে গেছে? তারা কি ইমাম শাফেঈর মতো হয়ে গেছে? তারা কি ইমাম আহমদের মতো হয়ে গেছে? এক লাখেরও ওপরে সাহাবী ছিলেন। কিন্তু তারা সবাই ফতওয়া দিতেন না। দশজন, বারোজন অথবা বিশজন সাহাবী ফতওয়া দিতেন। মুজতাহিদ হওয়ার জন্য ইলমের প্রয়োজন হয়। অথচ আজকের সালাফীরা কোন প্রকার ইলম না নিয়ে নিজেদেরকে মুজতাহিদ দাবি করে। এদের থেকে সতর্ক থাকবেন।
ব্রিটেনের সায়্যিদ মাআন আল-হাসানী আল-মক্কী বলেন, কোনো ইবাদত কবুলের জন্য মৌলিক শর্ত দুটি। একটি হলো এখলাস অপরটি হলো ইত্তেবায়ে রাসুল। এর আগে এই আকীদা শুদ্ধ করতে হবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। তিনি আল কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে রাসূল (সা.) এর অনুসরণের বিকল্প নেই।
সম্মেলনে শানে রিসালত মহাসম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আযমতকে টিকিয়ে রাখতে শানে রিসালত মাহফিলের বিকল্প নেই। এ মহাসম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নবীর শান ও মান বুলন্দ করা। রসূল (সা.) এর পরিচয় মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য এ মাহফিল।
তিনি আরো বলেন, আজকে আমাদের দেশে গোলাম আহমদ কাদিয়ানির উম্মত দাবিদারদের সম্মেলন হচ্ছে। এমনকি এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একজন মুমিন ভাই শাহাদাতবরণ করেছেন। এর শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর রসূল (সা.)-এর উম্মতদের কাছে কাফিররা পদদলিত হবে ইন শা আল্লাহ।
সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক হযরত মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর যুগ্ম মহাসচিব, মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খানের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বর্তমান বিশে^র শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস, মিসরের প্রখ্যাত বুযুর্গ আল্লামা মুহাম্মদ ইবরাহীম আব্দুল বাইছ আল-কিত্তানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মক্কা মুকাররামার প্রখ্যাত বুযুর্গ সায়্যিদ আল হাবীব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস, তুরস্কের ইয়ালোভা ইউনিভিার্সিটির অধ্যাপক প্রফেসর ড. আব্দুল কাদির আল হোসাইন, মিশরের ড. আহমদ আশ শরীফ আল আযহারী, বৃটেনের সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল ইদরিসী আল মক্কী।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, মাওলানা মুফতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, উজানডিহির পীর ছাহেব সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ আল মাদানী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, গাউসুল আজম জামে মসজিদ ঢাকার খতিব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, দৈনিক উত্তর পূর্ব এর সম্পাদক ও প্রকাশক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফারসী বিভাগের সাবেক চেয়াম্যান প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, নেছারাবাদের পীর ছাহেব মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দীক, ঢাকা মহাখালী হুসাইনিয়া কামিল মাদরাসা প্রিন্সিপাল মাওলানা ড. নজরুল ইসলাম আল মারুফ, চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসা বরিশালের প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দিক বিল্লাহ আল-মাদানী, ভবানীপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল প্রিন্সিপাল হাসান মাসুদ, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, বুরাইয়া কামিল মাদরাসা ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ফারুকী, আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসেন ছালেহী, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম মহসিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোস্তফা হাসান চৌধুরী গিলমান, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম আলফাজ, নিউইয়র্ক আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম ইয়াহইয়া, সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজির উদ্দিন পাশা, মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এনাম উদ্দিন ও কুমিল্লা জেলা কারী সোসাইটির সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন ফকির।
এতে উপস্থিত ছিলেন ইয়াকুবিয়া হিফজুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, সিলেট জেলা বারের সাবেক পিপি এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, নূর মোহাম্মদপুর দরবার শরীফের পীর ছাহেব মাওলানা আবু তাহের মো. ছালেহ উদ্দিন, ইবনে সিনা হাসপাতালের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, আল হারামাইন হাসপাতালের চেয়ার বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদরাসা অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি সিলেটের উপপরিচালক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা সৈয়দ ইউনুছ আলী, মো. আলমগীর হোসেন, হাফিয নজীর আহমদ হেলাল, মাওলানা বেলাল আহমদ, রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, ছাগলনাইয়া ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হোসাইন আহমদ ভুইয়া, ফরিদপুর ভাঙ্গা ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ ইউসুফ মৃধা, মাওলানা আইনুল হুদা, প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান, প্রিন্সিপাল রেজাউল হক, মুফতী ইজহারুল হক, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, সিলেট মহানগর আল ইসলাহর সভাপতি আলহাজ্জ শাহজাহান মিয়া, রাখালগন্জ সিনিয়র মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ জাফর মুহাম্মদ নুমান, রাখালগন্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেহাব উদ্দিন আলীপুরী, আনজুমানে আল ইসলাহ ইউকে এর সদস্য মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ, উলুয়াইল ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বশির উদ্দিন, জকিগঞ্জ ফাযিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মোশাহিদ আহমদ কামালী, আনজুমানে আল ইসলাহ সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি মাওলানা আবু তাহির খালিদ, ইমাম আযম ফাউন্ডেশন নওগাঁ এর পরিচালক মুফতি শাহ আলম, মাওলানা ফজলুর রহমান শিঙ্গাইরকুড়ি, মাওলানা ইন্দ্রিয় খান, খালিশপুর মাদরাসার মাওলানা শফিকুর রহমান, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরীর সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সবুর, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন