বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ১৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষে ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্য অতিক্রম করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন করেছেন কৃষি যোদ্ধাগন। যা লক্ষ্য মাত্রার প্রায় ৯৬%। চুড়ান্ত হিসেবের জন্য ১৫ মার্চ বোরো আবাদের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই।
ফলে ১০ লক্ষাধিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে চাল উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রমের ব্যপারেও আশাবাদী কৃষিবীদগন। বীজতলা তৈরীর লক্ষ্য ইতোপূর্বে অতিক্রম করলেও পৌষের শুরু থেকে তাপমাত্রা অব্যাহত ভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকার পাশাপাশি মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশায় ‘কোল্ড ইনজুরী’তে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন কৃষকগন। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে এবার তাপমাত্রা স্বাভবাবিকের নিচে নেমে যাবার সাথে আগেভাগে শীত বিদায় সহ মাঘের মধ্যভাগ থেকে তাপমাত্রা স্বভাবিকের উঠে যাওয়ায় পরিবেশগত কিছু সমস্যা তৈরী হয়। তবে তা দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় কোন সমস্যা তৈরী করেনি।
এবার রবি মৌসুমে দেশে ৪৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রার বিপরিতে রোববার পার্যন্ত ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৬%। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টনেরও বেশী। তবে চলতি মৌসুমে রোববার আবাদকৃত জমির পরিমান গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ লাখ হেক্টর পেছনে রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হলেও ১৫ মার্চের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের ব্যপারেও আশাবাদী কতৃপক্ষ।
সমাপ্তপ্রায় রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করে ৩ লাখ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্য স্থির করে কৃষি মন্ত্রনালয়। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ লক্ষ্য অর্জিত হয়। ফলে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রাও অতিক্রম করেছে বলে মনে করছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। বিগত খরিপ-১ মৌসুমেও এ অঞ্চলে আবাদকৃত আউশ ধান থেকে প্রায় ৬ লাখ টন চাল পাওয়া গেছে।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে খরিপ-১, খরিপ-২ ও রবি মৌসুমেই ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে কৃষি যোদ্ধাদের। একের এপর এক প্রকৃতিক দূর্যোগ কৃষকদের ক্ষতির সাথে দুশ্চিন্তাকে বৃদ্ধি করলেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবারের খরিপ-১, খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনের ব্যপারে আশাবাদী কৃষি মন্ত্রনালয়।
এবার শীত মৌসুম শুরুর আগেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নামতে থাকে। বরিশালে তাপমাত্রার পারদ এবার প্রায় ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। যা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৪ ডিগ্রী নিচে। দেশের বিভিন্ন এলাকার সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলাও মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়ে ৩ দফায়। মাঘের শুরুতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ২-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমে যাবার সাথে উত্তর-পশ্চিমের হীমেল হওয়ায় বোরো বীজতলা ‘কেল্ড ইনজুরির’ ঝুকির কবলে পড়লেও মধ্য মাঘ থেকে শীত উধাও হয়ে তাপমাত্রা স্বাভবাবিকের ওপরে উঠে যায়। এমনকি পৌষের শুরু থেকে মাঘের প্রথমভাগে হাড় কাঁপান শীতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে পারেনি।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আউশ ও আমনের সফলতার পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার কৃষি যোদ্ধাগন আরো প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টন বোরো চাল পাবার লক্ষ্যে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন। বরিশাল,পটুয়াখালী,ভোলা,মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিস্তির্ণ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে কৃষি যোদ্ধাদের অবিরাম ব্যস্ততা।
বিগত প্রায় ৩টি বছরের করোনা মহামারী সংকটে কৃষি যোদ্ধাগনই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মূখ্য ভ’মিকা পালন করেন বলে স্বীকার করছেন অর্থনতির শিক্ষকগনও। তাদের মতে, ‘একের পর এক প্রকৃতিক দূর্যোগ আর করোনা মহামারী সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করে, তা থেকে উত্তরনে কৃষক ও কৃষির ভ’মিকা ছিল অপরিসীম। আর কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছে কৃষিযোদ্ধারাই। বিগত খরিপ-১ ও ২ মৌসুম সহ চলতি রবি মৌসুমে আউশ,আমন,বোরো, গম, ডাল,তেলবীজ ও তরমুজ সহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি উৎপাদনে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগনই।
১০ লাক্ষাধিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি যথেষ্ঠ শক্ত অবস্থানে থাকলেও তা এখনো প্রায় পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগনও। তবে চলমান বোরো আবাদ লক্ষমাত্রা অতিক্রমের পরে বড় কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে উদ্বৃত্তের পরিমান ১১ লাখ টনের কাছে পৌছবে বলেও আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি,কৃষক ও কৃষি অর্থনতিকে টিকে থাকতে হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। এ অভিমত কৃষি অর্থনীতিবীদগনেরই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন