বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যাংকের ৭ শাতাধিক কোটি টাকা ঋন বিতরন

ব্যাপক জনবল সংকটে সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪০ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এর ১২৯টি শাখা চলতি অর্থ বছরে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ঋন বিতরন লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ইতোমধ্যে ৭ শতাধিক কোটি টাকা বিতরন সম্পন্ন করেছে। এর বাইরেও কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাংকটি সরকারের করোনা প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় মাত্র ৪% থেকে ৭% সুদে প্রায় ১২ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে বিভিন্ন কর্মসূচীর ১৬০ কোটি টাকা ঋন বিতরন করেছে। গ্রাম বাংলার এ ব্যাংকটি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ৯০ কোটি টাকা এসএমই ঋন বিতরন করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা বেশী। এমনকি একই সময়ে ব্যাংকটির মাধ্যমে আগের বছরের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বেশী, ১৩৫ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স এসেছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে নতুন প্রায় ১৫ হাজার সহ দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি ব্যাংকের একক ঋন গ্রহিতার সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাংকটির ১২৯টি শাখায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ প্রায় ২৬ হাজার নতুন সঞ্চয়ী ও চলতি হিসেব খুলেছেন বলেও জানা গেছে।

দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার ৪২টি উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এর সবগুলো শাখাই ইতোমধ্যে অন-লাইন সুবিধার আওতায় এসেছে। ফলে সুদর পল্লী এলাকাতেও এখন অন লইন বিশে^র যেকোন ব্যাংকিং সুবিধা দিচ্ছে রাষ্ট্রয়ত্ব বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি বাংক প্রায় ১৮ কোটি টাকা নীট মুনফা অর্জন করেছে। এ অঞ্চলে ১২৯টি শাখার মধ্যে এখন ৬৮টি লাভজনক হিসেবে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পারিচালনা করছে। কৃষি ব্যাংক সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও করেনায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচীর আওতায় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋন প্রদানের আওতায় গত ৬ মাসে ৫৫৯ জনকে প্রায় ৫ কোটি টাকা বিতরন করতে সক্ষম হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাংকটির প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আমানত স্থিতির মধ্যে অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে নতুন সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা। অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটি নতুন প্রবর্তিত ৬টি স্কিমের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৯ হাজার নতুন হিসেব চালু করতে সক্ষম হয়েছে। ত্রৈমাসিক, মাসিক, মিলিয়নিয়ার, ডাবল, বিকেবি লাখপতি ও মাসিক মুনফা প্রকল্পে গ্রাম বাংলার মানুষের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বাংকের বরিশালের বিভাগের প্রধান নির্বাহী ও জিএম সালাহ উদ্দীন রজিব ।
ব্যাংকটি স্বল্প সুদে শষ্য ঋন বিতরনের পাশাপাশি মাত্র ৪% সুদে মসলা জাতীয় ফসলের জন্যও ঋন বিতরন করছে। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরে ফেরাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঋনদান কর্মসূচীর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে কৃষি ব্যাংক মাত্র ৬% সুদে ঋন বিতরনের পাশাপাশি বিশেষ এসএমই কর্মসূচীর আওতায়ও ৪% সুদেও অঅরো বিপুল সংখ্যক উদ্যোক্তার মাঝে ৯০ কোটি টাকা ঋন বিতরন করেছে বলে জানা গেছে।
একইভাবে যে কোন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশেষ ঋন সুবিধা লাভ করেছেন। রাষ্ট্রীয় বিশেষায়িত এ বানিজ্যিক ব্যাংকটি ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে নিজস্ব তহবিল ছাড়াও করোনা মহামারীতে সরকারী প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায়ও সবগুলো ঋন বিতরন করেছে।
তবে ব্যাংকটিতে অনাদায়ী ঋনের পারিমান প্রায় ২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা হলেও আদায় যোগ্য অনাদায়ীর পারিমান মাত্র ৯৫ কোটি টাকার মত। এসবের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আদায়ে বেশ কিছু সার্টিফিকেট মামলা ছাড়াও অর্থঋন আদালতে অরো কিছু মামলা চলমান রয়েছে।
অনাদায়ী ঋনের একাটি বড় অংশই মেঘনা ও তেতুলিয়া বেষ্টিত ভোলায়। দ্বীপ জেলাটির নদী ভাঙনে হাজার হাজার কৃষক সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ায় তাদের অনেকেরই খোজ পাওয়া দুস্কর। যাদের অস্তিত্ব আছে, তারাও কৃষিজমি সহ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিনত হয়েছেন। ফলে বাস্তুচ্যুত নিত্য অভাবী ঐসব মানুষের কাছ থেকে বকেয়া ঋন আদায় দুরুহ হলেও ইতোমধ্যে বিপুল পরিমান আদায়যোগ্য অনাদায়ী ঋন আদায় সম্ভব হয়েছে। এমনকি এ জেলাটিতেও যারা ঋন পরিশোধ করেছেন তাদের নতুন করে ঋন প্রদানও করেছে কৃষি ব্যাংক। ফলে অনেকেই পূণর্বাশিত হয়েছেন।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে দেশের সর্ববৃহত বিশেষায়িত রাষ্ট্রীয় এ ব্যাংকটির লক্ষ্যে পৌছান সহ জনসেবায় এখন সবচেয়ে বড় বাঁধা জনবল সংকট। দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলার ১২৯টি শাখা সহ বিভাগীয় ও আঞ্চলিক অফিসগুলোর জন্য কৃষি ব্যাংকের ১ হাজার ৬২৮ জনের মঞ্জুরিকৃত জনবলের মধ্যে ইতোপূর্বে কর্মরত ছিলেন মাত্র ৭২৩জন। সম্প্রতি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৮১ জনকে দক্ষিণাঞ্চলে পদায়ন করার পরেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৮০৪ জন। ৮২৪টি পদে কোন জনবল নেই। ফলে এখনো মঞ্জুরীকৃত পদের প্রায় ৫২%-ই শূণ্য। এমনকি ব্যাংকটির অনেক শাখাই মাত্র ৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে বেশীরভাগ শাখায়ই জনবল মাত্র ৫ জন। ফলে রাষ্ট্রীয় এ ব্যাংকটির সার্বিক কার্যক্রম যথেষ্ঠ ব্যাহত হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাংকটির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল বিভগীয় জেনারেল ম্যানেজার সালাহ উদ্দীন রজিব-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিÑঅর্থনীতি সচল রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রতিটি কর্মী নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী সব ধরনে ঋন বিতরনের সাথে আদায়ের হার অন্য যে কোন ব্যাংকের তুলনায় কৃষি ব্যাংক ভাল করছে বলেও দাবী করেন তিনি।
জনবল সংকট সহ সার্বিক সমস্যার বিষয়গুলো সদর দপ্তর অবগত আছে বলে জানিয়ে তা থেকে উত্তরনে পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি সব ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি বাংকের সার্বিক কার্যক্রম সন্তোষজনক বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন