শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মহাসড়কে থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ করতে হবে

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করে চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও এগুলো অবাধে চলাচল করছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চললেও এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ করা যায়নি। সরকার গত বছরের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে এগুলোর চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এ প্রজ্ঞাপন যে কোনো কাজে আসেনি, তা নির্বিঘেœ নিষিদ্ধকৃত যানবাহন চলাচল থেকেই বোঝা যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এমনকি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সড়ক কুমিল্লা-নোয়াখালী রুটে অবাধে সিএনজি অটোরিকসা, ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকসা অবাধে চলাচল করছে। এছাড়া দেশের সর্বত্রই বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এগুলোর চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনায় মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। হাইস্পীডের সড়কে এসব ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য পরিবহন মালিকরা স্থানীয় প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব এবং কার্যকর তদারকির অভাবকে দায়ী করেছেন।
হাইওয়েতে ধীর গতির ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করার মতো এমন অনিয়ম বিশ্বের কোথাও আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। আবার বিশ্বের এমন দেশ খুঁজে পাওয়া ভার, যেখানে হাইওয়ের সাথে জালের মতো চারপাশ থেকে ছোট ছোট পথ এসে মিশেছে। সাধারণত হাইওয়ে হয়ে থাকে একমুখী এবং শাখা-প্রশাখা বিহীন। এর কারণ, এসব মহাসড়ক নির্মাণ করাই হয় ভারী যানবাহন নির্বিঘেœ ও দ্রুত গতিতে চলাচলের জন্য। এর মাঝে ছোট ও ধীর গতির যানবাহন চলাচলের কোনো সুযোগই নেই। অথচ আমাদের দেশে সাধারণ সড়ক থেকে শুরু করে হাইওয়েতে এমনকি সংরক্ষিত সেতু এলাকায়ও অবাধে তা চলাচল করছে। এর ফলে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণহানি হচ্ছে মানুষের। যারা আহত হন, তারা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। আহত-নিহত হওয়া ছাড়াও মহাসড়কে সৃষ্টি হয় যানজট, যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ধীর হয়, সময়ের অপচয় হয়, পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। রাতের বেলা এসব যানবাহন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। ঠিকমতো দেখা না যাওয়ায় দ্রুত গতির যানবাহনের সামনে মুহূর্তে চলে আসে। তখন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যেমন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, তেমনি অবধারিতভাবে দুর্ঘটনাও ঘটে। মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম এ কারণ চিহ্নিত করা হলেও, আজ পর্যন্ত তা সমাধান করা যায়নি। সরকার নিষিদ্ধ করেছে ঠিকই, তবে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। যাদের বাস্তবায়ন করার কথা তারাই বরং এসব প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। প্রশ্রয় না দিলে বিপজ্জনক এসব ছোট ও ধীরগতির যানবাহন কোনোভাবেই চলাচল করতে পারতো না। এসব অটোরিকসার চালকরাই বলেছেন, মাঝে মাঝে পুলিশের অভিযানের মুখে কয়েক দিন বন্ধ রাখতে হয়। অভিযান থেমে গেলে আবার তারা চালানো শুরু করে। অর্থাৎ মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলে। কিছুদিন পর তা নিয়মিত হয়ে যায়। এজন্য সরকারদলীয় প্রভাবশালী একটি চক্রকে নিয়মিত মাসোহারা দিতে হয়। এই মাসোহারার ভাগ পায় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ। এভাবে যদি সর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে থাকে, তবে ভূত তাড়ানো কি সম্ভব? আমরা জানি, অটোরিকসা, ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকসা এমনিতেই বিদ্যুতের উপর বাড়তি বোঝা হয়ে রয়েছে। সারা দেশের লাখ লাখ এসব যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ খোয়া যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতে যেমন টান ধরছে, তেমনি গ্রাহকদের লোডশেডিংয়ের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এসব ধীর গতির ছোট যানবাহন উভয় দিক থেকেই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিদ্যুৎ সাবাড় করে দিচ্ছে, অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কে মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারপরও মারাত্মক এই যান কেন অবাধে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে? গুটিকয় ব্যক্তির স্বার্থ এবং দায়িত্বহীনতার কারণে এত বড় ক্ষতি কি বরদাশত করা যায়?
এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে, সড়ক-মহাসড়কে উৎপীড়ক হয়ে থাকা থ্রি হুইলার অটোরিকসা, অটোটেম্পো, অযান্ত্রিক যানবাহন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এবং তা ঘটিয়ে চলেছে। সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে এসব পরিবহন নিষিদ্ধ করলেও তা চলাচল বন্ধ না হওয়া থেকে বোঝা যায়, সংশ্লিষ্টরা এই নিষিদ্ধকরণকে থোড়াই কেয়ার করছে। আইনকে তারা বাস্তবে প্রয়োগ না করে কাগজে-কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে এ ধরনের আইনের প্রয়োজনীয়তা কি? আমরা বরাবরই বলে আসছি, সড়ক-মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি হুইলার অটোরিকসা, অটোটেম্পো ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। এজন্য যে ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, তাই নিতে হবে। এমনিতেই চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। তার উপর এসব যানবাহন যুক্ত হয়ে দুর্ঘটনার হার বাড়িয়ে দেবে, তা হতে পারে না। অবিলম্বে সড়ক-মহাসড়ক থেকে ধীরগতির ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ককে নিট অ্যান্ড ক্লিন ও নির্বিঘœ রাখতে হবে। সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তা কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঢিলেমি বা গাফিলতি করা যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন