বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের বার্ষিক প্রতিবেদনে নতুন বছরে অর্থনীতির জন্য পাঁচ চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব আয়ে গতি বাড়ানো, রফতানীমুখী করা, অর্থ পাচাররোধ এবং রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে বেসরকারী বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। ২০০৮ থেকে ২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ গড়ে দশমিক ০৪ শতাংশ হারে কমছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে বেসরকারী বিনিয়োগের হার কয়েক বছর ধরে কমছে। দেশ থেকে অবৈধ অর্থপাচার বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, জিডিপি’র অনুপাতে দেশজ সঞ্চয় কমছে। চলতি অর্থবছরের শেষে তা আরো কমতে পারেÑ যা ব্যক্তিখাত বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত করবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন পর্যাপ্ত নয়। সরকারী বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতায় বিনিয়োগের কার্যকারিতা কমে গেছে। এদিকে বাজেট ঘাটতি, অর্থায়নে দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে উচ্চঋণ নেয়ায় সুদের পরিশোধ বাড়ছে। অন্যদিকে বেকার জনসংখ্যা বার্ষিক ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে।
অর্থনীতির আলোচ্য চ্যালেঞ্জগুলো নতুনভাবে বছরের শুরুতে উল্লেখ করা হলেও এক অর্থে এতে নতুনত্ব নেই। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে হলে বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। অনেকদিন থেকেই বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এর পেছনে আস্থার সংকটের বিষয়টি কার্যকর রয়েছে। রাজনীতিতে যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না তার প্রমাণ হচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা। আতঙ্ক রয়েই গেছে। অন্যদিকে প্রচ- দলীয়করণের নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে বিনিয়োগের বেলায়। নানাভাবে অবৈধ অর্থের লেনদেন ছাড়া কোথাও কোন বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এই অবৈধ অর্থ ব্যাংক থেকে শুরু করে সর্বত্রই দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, সরকারের প্রকাশ্য ঘোষিত নিয়ম-নীতি আর বাস্তবতা এক জায়গায় নেই। বিনিয়োগ না থাকলে কর্মসংস্থান, রাজস্ব এসবের কোন অস্তিত্ব থাকে না। সবার অতিরিক্ত বেতন-ভাতার বোঝা মেটাতে যেভাবে কর-ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছোট ছোট বিনিয়োগেও পড়ছে। সব মিলে দেশে যে এক অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব কাজ করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রবাসী আয় নিয়েও অনেকদিন থেকেই কথা-বার্তা হচ্ছে। একদিকে দক্ষ জনশক্তির অভাব অন্যদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে বিদেশি কর্মসংস্থানে ভাটা চলছে। দেশের অর্থনীতির প্রাণ বলে পরিচিত গার্মেন্টস শিল্পের অবস্থাও সুখপ্রদ নয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এরমধ্যে মূলত দেশের চিত্র উঠে এসেছে। বিষয়টি ভাবতে হবে বৃহত্তর পরিম-লে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল দেশ সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করছে তা বদলাতে না পারলে কার্যত দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ককে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। সব মহলই বাংলাদেশ সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও সকলেই আশাবাদী। সব সংশয় কাটিয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব আস্থাশীল পরিবেশ যদি এবছর চালু করা যায় তাহলে হয়ত শঙ্কা সম্ভাবনায় পরিণত হবে। জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট সকলে একমত হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন