শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ভূমিকম্প নিয়ে সতর্কতা জরুরি

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বছরের শুরুতে ভারতের ত্রিপুরায় সৃষ্ট ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি ধরনের কম্পন অনুভূত হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৯ মিনিটে এবং মধ্যরাতে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার মতে, মধ্যরাতের ভূকম্পনটির উৎপত্তিস্থল ছিল  মিয়ানমারে মাওলাইকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯৩ দশমিক ২ কিলেমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎসস্থল। অন্যদিকে বিকালের ভূকম্পনটি ছিল ৫.৫ মাত্রার। এই কম্পনে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ সমগ্র দেশ কেঁপে উঠে। হেলেদুলে ওঠে বাড়ি-ঘর। নদ-নদী ও দীঘি-পুুকুরে ঢেউ ওঠে। কর্মব্যস্ত  জনজীবনে ক্ষণিকের জন্য ছন্দপতন ঘটে। সর্বত্রই ভূমিকম্প আলোচনায় স্থান করে নেয়। ভূমিকম্পের সময়  রাজধানী ঢাকায় লোকজন ঘর-বাড়ি থেকে দ্রুত নেমে আসে। আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সায়মা আক্তার ও জগন্নাথপুর উপজেলার হিরন মিয়া নিহত হয়েছে। সিলেটে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বেশ কয়েকটি ভবনে এবং খেলার মাঠসহ অর্ধ শতাধিক স্থানে জমি ফেটে বালি ও পানি বেরিয়ে  এসেছে। কুমিল্লায় সিটি মার্কেটসহ কয়েকটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি  স্থানভেদে পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এটির উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের ২৮ কিলোমিটার গভীরে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা, মিয়ানমার ও ভুটানে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। এই দেশগুলো থেকে কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় এ ভূমিকম্পটি তুলনামূলকভাবে বেশি অনুভূত হয়েছে, বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, ফেনি, চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলাগুলোতে।
বাংলাদেশ ও অশপাশ এলাকায় সাম্প্রতিককালে মৃদু মাঝারি ও হালকা ধরনের ভূমিকম্পন ঘন ঘন অনুভূত হচ্ছে। এ ধরনের ভূমিকম্পের প্রবণতা অদূরভবিষ্যতে বড় ধরনের তথা শক্তিশালী ভূমিকম্পের অশনিসংকেত, এমন  সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। একথাও অনেকদিন থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভূমিকম্পের  সক্রিয় জোনে রয়েছে। এ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ সাত দশমিক পাঁচ এমনকি অট মাত্রার প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বাংলদেশে যে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে এ আশঙ্কা নতুন কিছু নয়। সে জন্য প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মেকাবিলা করতে যতটুকু সম্বব প্রস্তুতি নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রথমত সচেতন  হতে হবে। এবারের ভূমিকম্পেও দেখা গেছে ভূমিকম্পের আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই প্রাণহানীর মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। গত কিছুদিন ধরে ভূমিকম্পজনিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়ি-ঘর ভবনাদি নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বনের  উপর জোর দেয়া হয়েছে। বাস্তবে এসব আইন-কানুন নিয়ম-বিধি কেউ মানছে কী মানছে না তার জন্য কোনো মনিটরিং রয়েছে এরকম মনে হয় না। এসব দেখভাল করা যাদের দায়িত্ব তারা প্রকারান্তরে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সবকিছু মাফ করে দিচ্ছেন। বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হলে তখন দেখা যাবে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেন না। অনেক দিন থেকেই সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করে আসছেন বাংলাদেশে বড় ধনের ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানী ঘটতে পারে। প্রভাবশালীদের কারণে খোলা জায়গা খেলার মাঠ, নদী তীর জলাশয় কোনোকিছুই রক্ষা করা যাচ্ছে না। ভূমিদস্যুদের হাত থেকে এসব উদ্ধারের কোনো ক্ষমতা সংশ্লিষ্টদের রয়েছে এমন প্রমাণ নেই বরং প্রায়ই এসব দখল হয়ে যাবার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। মূলত খোলা জায়গা মাঠ প্রতিটি বাড়ির সাথে প্রশস্ত জায়গা না থাকলে ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়-ক্ষতি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
এবারের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি না হলেও এটি একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাটি ফেটে বালি ও পানি বের হয়ে যাবার ব্যাপরটিকে হাল্কাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সতর্ক না হলে অমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বড় ধরনের আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রকৃত প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার সরঞ্জামেরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একটু উঁচু ভবনে আগুন লাগলেই তা নেভাতে আমদের মারাত্মক সংকটে পড়তে হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কী হবে বা হতে পারে তাতো সহজেই অনুমেয়। আমরা অনেক উন্নয়নের জন্য অর্থ ব্যয় করছি। প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন তো মানুষের জন্য। সে কারণে মানুষ বাঁচাবার জন্য বিশেষ করে যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে যতটা সম্ভব কম ক্ষয়ক্ষতি হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে উদ্ধার সরঞ্জামাদি ক্রয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন