শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন : ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

সম্পাদকীয়-১

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লেগে পুড়ে গেছে ৫ শতাধিক দোকান। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এই আগুনের ঘটনাকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সংঘটিত দুর্ঘটনাজনিত আগুন বলে সন্দেহ করা হলেও সংশ্লিষ্ট দোকান মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। মার্কেটে আগুন লাগার পেছনে তারা সুনির্দিষ্টভাবেই একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দায়ী করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা ও গাফিলতিরও অভিযোগ করছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন গুলশান-১ এর এই মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল সিটি কর্পোরেশন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেট্রো গ্রুপের মধ্যে। ব্যবসায়ীদের প্রতিকূলে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী একটি অসম চুক্তির অভিযোগ তুলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এই চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা এই ত্রিপক্ষীয় টানাপড়েনের মধ্যে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং আদালত ব্যবসায়ীদের পক্ষে রায় দেয়ার পর সরকারি প্রভাব এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে, নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেও দোকান মালিকদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এহেন বাস্তবতায় মধ্যরাতে আগুন লেগে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়া এবং পুরো মার্কেট ভবনটি পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা শুধু রহস্যজনক বলেই মনে করছেন না, তারা প্রতিপক্ষ মেট্রো গ্রুপের প্রতি সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
শত শত কোটি টাকার ক্ষতির শিকার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা মার্কেটের রহস্যজনক আগুন লাগার ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক নাশকতার অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে আগুন লাগার কারণ উদঘাটনে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার যার অবস্থান থেকে তদন্তের আগেই বিপরীতমুখী অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও প্রকৃত রহস্য শুধুমাত্র নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই খুঁজে বের করা সম্ভব। উল্লেখ্য, গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কথিত প্রক্রিয়া বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত মামলা ও স্বার্থদ্বন্দ্বে আটকে আছে। ভুক্তভোগি ব্যবসায়ীরা তাদের সন্দেহের কথা বলতেই পারেন। দুর্ঘটনা অথবা নাশকতা কোনোটিই সন্দেহের বাইরে নয়। তবে নগরীর মেয়রের পদে থেকে তদন্তের আগেই একটি আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। একদিকে মার্কেটের জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য অসম চুক্তির সাথে সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ ও সম্পৃক্ততা রয়েছে, অন্যদিকে শুরু থেকে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসের বাইরে আরেকটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
সরকারি জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদের জন্য বস্তিতে আগুন লাগানোর অভিযোগ মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। গত বছর জানুয়ারিতে রাজধানীর কল্যাণপুর বস্তিতে, গত মাসে কড়াইল বস্তিতে আগুন লেগে শত শত কাঁচাঘর পুড়ে যাওয়ার পর অনুরূপ অভিযোগ শোনা গেছে। এ ধরনের অগ্নিকা- ও দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রকৃত রহস্য কখনো উদঘাটিত হয় না, অথবা তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। পুড়ে যাওয়া ডিএনসিসি মার্কেটটি কোনো কাঁচা বস্তিঘর নয়, আবার বহুতল ভবনও নয়। এর আশপাশে একাধিক জলাশয় আছে, ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার জন্য মার্কেটের সামনে যথেষ্ট খালি জায়গা আছে, তৎসত্ত্বেও ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিট ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও আগুন নেভাতে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার ব্যর্থতা নগরবাসীকে হতাশ করেছে। ফায়ার সার্ভিস শুরুতেই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারলে শত শত কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পেত। আগুনের তীব্রতা এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বাস্তবতায় কেউ কেউ গানপাউডার দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে বলেও দাবি করেছেন। দুর্ঘটনা, নাশকতা, ভুক্তভোগীদের  সন্দেহ ও অভিযোগ যা-ই হোক, ঘটনার নেপথ্যের কার্যকারণ উদঘাটনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোই এ মুহূর্তের কাক্সিক্ষত বিষয়। কোনো স্বার্থদ্বন্দ্ব ও ষড়যন্ত্রের যোগসাজশ থাকলে অপরাধীদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। মেট্রো গ্রুপের সাথে কথিত অসম চুক্তি বাতিল করে ডিসিসি ও দোকান মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। একটি অগ্নিকা-ের ঘটনায় শত শত সচ্ছল পরিবার একদিনেই নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন হয়ে যেতে পারে না। তাদের কান্নার করুণ আর্তি ও বিচারের বাণী আমলে নিয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। জরুরি ভিত্তিতে মার্কেটটি পুনর্নির্মাণ এবং আগুনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর ব্যবসায় ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সীমাবদ্ধতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন