বরিশাল ব্যুরো : কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনে জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে। ৫ মাস বেতন না পেয়ে পুনরায় মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা কাজকর্ম বন্ধ করে নগর ভবনে বিক্ষোভ শুরু করার পর কয়েকজন কাউন্সিলর ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের শান্ত করলেও পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। জনবলের ভাড়ে ন্যুব্জ বরিশাল নগর ভবনে বিশৃঙ্খলা ক্রমশ বাড়ছে। এ বিক্ষোভের পর মেয়র আহসান হাবিব কামাল নগর ভবনে পৌঁছে কাউন্সিলরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। টানা তিন ঘণ্টার বৈঠকের পরে চলতি মাসের মধ্যেই নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ করার পাশাপাশি অনিয়মিত কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য অবসানে রোববার সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানানো হয়। এ ঘোষণার পর বেতনবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
প্রায় ১৫৫ কোটি টাকার দায়দেনা নিয়ে ২০১৩-এর অক্টোবরে বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল তৃতীয় নির্বাচিত মেয়র হিসেবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। বর্তমানে এ নগর ভবনে নিয়মিত সাড়ে ৫শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া আরো দেড় সহ¯্রাধিক অনিয়মিত দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। এসব দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অন্তত অর্ধেকই কোনো কাজ না করে বছরের পর বছর বেতন নিচ্ছে বলেও সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক চাপে বর্তমান মেয়র ও নগর প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। এমনকি নগর ভবনে সরকার দলীয় পেশাজীবী সংগঠনের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীকে লালন করাসহ তাদের অনৈতিক সুবিধা প্রদান ও বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভে উসকে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অথচ নিয়মিত কর্মককর্তা-কর্মচারীদের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে এসব অনিয়মিত কর্মীদের বেতন মেটাতে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ওহায়েদুজ্জামান গতকাল জানান, বর্তমানে করপোরেশনের মাসিক আয় এক কোটি টাকার বিপরীতে নিয়মিত ও অনিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয় সাড়ে ৩ কোটি টাকারও বেশি। ফলে প্রতি মাসেই নগর ভবনের কোষাগারে ঘাটতি বাড়ছে। বকেয়া বাড়ছে। এমনকি সর্বশেষ পে-স্কেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ নগর ভবনের রাজস্ব আয় বাড়েনি।
রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিটি করপোররেশন থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করা হলেও প্রভাবশালী ও বড় করদাতাদের অসহযোগিতার কারণে তা এখনো সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব স্টলগুলোর ভাড়া নিয়মিত আদায়সহ তা যৌক্তিকীকরণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব না দিলেও ‘সব দিকই বিবেচনা করা হচ্ছে’ বলে জানান তিনি। অপরদিকে, বর্তমান নগর প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে সরকারি থোক বরাদ্দও প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের আর্থিক ভিত এখন যথেষ্ট নরবড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন