শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

লটারির নামে জুয়া সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজশাহী ব্যুরো : মাথায় নষ্ট মামা। প্রতিদিন প্রথম পুরস্কার দু’লাখ টাকাসহ আরো হাজার হাজার টাকা পুরস্কার। রয়েছে মোটরসাইকেল, সোনার গহনা। এমন সব লোভনীয় প্রচার প্রচারণা দিয়ে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লটারির নামে লাখ লাখ টাকা। আর মেলার নামে হাউজিসহ নানা রকম জুয়া আর অশ্লীল নাচ গান।
সকাল থেকে প্রায় দেড়শ ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে রাত সাড়ে নটা অবধি ছুটছে নগর ছাড়িয়ে গ্রামে। দৈনিক উল্লাস নামে লটারী টিকেট বিক্রির সময় ক্রেতাদের আকর্ষণের নামে চলছে অভিনব প্রচারণা। মুখরোচক বোলচালে লাখপতি হবার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শ্রমজীবী মানুষসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। কোন কোন রিকশা চালক সারাদিনের আয় দিয়ে লটারির টিকেট কিনছে। লটারির দৃশ্য ডিস কেবলের সহায়তায় টিভিতে সম্প্রচারের কারণে আরো বেশী আকৃষ্ট হচ্ছে। এ লটারির টিকেট কিনতে গিয়ে অনেকে সর্বশান্ত হয়েছে। করো সংসার ভেঙ্গেছে। এনিয়ে পত্রপ্রত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু এর আয়োজনকদের কেউ থামাতে পারেনি। শ্রমিকদের হাসপাতাল নির্মাণের নামে নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে তিন বছর ধরে থেমে থেমে চলছে মেলার নামে মওসুমী লটারি ব্যবসা। শুধু কি লটারি অন্যান্য জুয়া আর বিনোদনের নামে অশ্লীল নাচগান বারোটা বাজাচ্ছে নানা বয়েসীদের। পাশেই জমজমাট মাদক ব্যবসা। মাইকের শব্দে কান ঝালা পালা। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। বিশেষ করে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। আশেপাশের মানুষ ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েছে। মিছিল করেছে। প্রতিকার মেলেনি বরং ফল হয়েছে উল্টো। ইতোপূর্বে বাস টার্মিনালের উপরে শ্রমিকদের হাসপাতালের নামে পাঁচবার এমন মেলার আয়োজন করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। বাস টার্মিনালের উপর হাসপাতালের নামে ছোটখাট স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র করা হয়েছে। এবার হচ্ছে শুধু মটর শ্রমিকদের আয়োজনে। বাস-টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তাদের কাছ থেকেও বাস টার্মিনালে মেলার অনুমতির প্রয়োজনও মনে করেনা। এমন অভিযোগ খোদ আরডিএ কর্তৃপক্ষের। মেলার আয়োজনে কারো অনুমতির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। অভিযোগ রয়েছে যারা এসব দেখভাল করবেন তাদের সাথে সুম্পর্ক রাখার। প্রচারণা রয়েছে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজের নামে প্রতিরাতে বরাদ্দ রাখা হয় দু’তিন লাখ টাকা। যার কারণে সবকিছু চলছে আয়োজকদের ইচ্ছেমত। ফলে এসব নিয়ে প্রতিবাদ করে খামোখা কেউ ঝামেলায় পড়তে চান না বলে ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে সীমাব্ধ থাকছেন।
নগরীর বেশ কজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বাস টার্মিনালে বাস থাকবে। সেখানে কেন যাত্রা জুয়ার প্যান্ডেল। আর বাসগুলো নগরীর যত্রতত্র ছাড়িয়ে থাকছে। এতে যানজট আরো বেড়েছে।
মেলার আয়োজকরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে হাসপাতাল নির্মাণের মুলো ঝুলিয়ে খুশী করে রাখে বলে তাদের সুরই আলাদা। পরিস্কার জবাব শ্রমিকদের হাসপাতাল করার জন্য সবকিছু করা হচ্ছে। মেলা চালাতে গেলে লটারি হাউজি ছোট খাট জুয়ার আসর না বসালে চলবে কেন ? তবে অশ্লীলতার বিষয়টা উড়িয়ে দেন।
সচেতন নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে মেলার নামে হচ্ছেটা কি? সামাজিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোচ্চার থাকলে এ ব্যাপারে কেন রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সামাজিক আন্দোলনের এক নেতা বলেন সবাইতো বোঝেন। সরকারি দলের আর্শীবাদ আর প্রশাসনের নিরবতা কাজ করছে। রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের তিব্র প্রতিক্রিয়া জানালেও এসবও আমলে নেয়া হয়নি। শ্রমিকদের হাসপাতাল হোক সবাই চায়। কিন্তু মেলার নামে যা চলছে। সাধারন মানুষকে সর্বশান্ত করছে। যুব সমাজকে অধঃপতনের দিকে টানছে। এটা কারো কাম্য হতে পারেনা। এতে করে কারো কারো পকেট ভারী হলেও সরকারের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে জনমত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন